পুরুষবাদ vs পুরুষ


দুইটা বিষয় ঘটে গেছে। নারীরা নিজেদেরকে পুরুষের সমানে সমান ভাবার সাথে সাথে পুরুষও নিজেকে নারীর সমানে সমান ভাবা শুরু করেছে। ফলে পুরুষ তার পুরুষালি ভূমিকা ভুলে নারীকে প্রতিযোগী ভাবছে। যেমন ধরেন, কমন একটা জোক হল: মহিলা সিট ছাড়া অন্য সিট ছাড়ব না মেয়েদের জন্য। কেন? ওরা ভাবে ওরা সমান, তাই। যদি দুর্বল ভাবতো, তাহলে ছাড়তাম। মানে পুরুষও নারীকে প্রতিযোগী ভাবলো। ঠিক এই জেন্ডার স্ট্রেসটাই পশ্চিমা পুঁজিবাদী দর্শন চায়।

নারীবাদ যেমন পশ্চিমা দর্শনের সন্তান, পুরুষবাদও তা-ই। পশ্চিমা নারীরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নারীস্বাধীনতার ফল। তারা স্বামী-বাপ-ভাইয়ের ‘কাওয়াম’-শীপকে অস্বীকার করেছে। মুক্তির তৃষ্ণায় আকণ্ঠ পান করে নিয়েছে ‘স্বাধীনতা’ নামক গরল। যতই পুরুষ হয়ে উঠতে চাচ্ছে, ততই নারীত্ব দিয়ে মাশুল দিতে হচ্ছে তাদের। স্কুল-কলেজে একদফা। রিলেশনশীপে একদফা। অফিসে এক দফা। বিচার চাইতে গেলে সেখানে আরেক দফা। ক্ষমতায়নের আইকন হতে গিয়ে মিডিয়াপাড়ায় কয়েকদফা। ট্রমাটাইজড হয়ে সরকারি এসাইলামে আরেক দফা। হাসপাতালে আরেক দফা। যাবার আর কোনো জায়গা নেই। বাপ-ভাই-স্বামী সবার ছায়াকে সে অস্বীকার করেছে আগেই। আমার কোনো ছায়া দরকার নেই। আমি কম কীসে? আমি নিজেই পুরুষের সমান। কামাই থাকলে জামাই লাগে না। ওদিকে বস কিন্তু ঠিকই ট্যুরে নিয়ে যায়। ডাস্টবিনে পড়ে থাকে শিশু, যেন হস্তমৈথুনের পর কমোডে পড়ে থাকা বীর্যের চেয়ে বেশি দাম নেই মানবভ্রূণের। হুবহু একই ধ্বংস ঘটাতে চাচ্ছে লিবারেল মিশনারীরা প্রাচ্যেও। প্রাচ্যের সমাজ যদি এদের প্রতিহত না করে, অচিরেই (সকল লক্ষণ অলরেডি প্রকাশ পাচ্ছে) আমাদের মেয়েরাও একই পরিণতি বরণ করবে। আমাদের মেয়েরা আজও যেকোনো ইন্টারপার্সোনাল থ্রেট সিচুয়েশনে পরিবারে আশ্রয় নিতে পারে। ‘তোর ঘরে কি মা-বোন নেই’… বাক্যটাও শেষ মুহূর্তেও নারীর আদি ভূমিকা স্মরণ করাতে চায়। যে ভূমিকাগুলো তাদের রক্ষাকবচ ও রক্ষাব্যূহ ছিল। সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে তারা কাওয়াম হিসেবে নিয়েছে অন্য পুরুষকেই… ‘বস’-কে।

আমাদের করণীয় হল, পুরুষের পুরনো ভূমিকাকে ফিরিয়ে আনা। পুরুষ রক্ষক। এটাই পুরুষের ভূমিকা। পুরুষ নারীর প্রতিযোগী নয়। নারী নিজেকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে পারে, আমরা ভাবি না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো সমান যোগ্য কারও সাথেই হয়। নারী ও পুরুষ যোগ্যতায় সমান, এটাই আমরা মানি না। বায়োলজি ও সাইকোলজি মানে না। বরং বায়োলজির দাবি এটাই যে, নারীর একজন কাওয়াম লাগবে, যে সিদ্ধান্ত দেবে। হরমোনাল ইনডিসিশন, উদ্বিগ্নতা, অল্প স্ট্রেসে অস্থিরতা, দ্বিধা ইত্যাদি হরমোনাল বায়াস তাকে বলে যে তার একজন কাওয়াম লাগবে।টেস্টোস্টেরোনওয়ালা কাউকে লাগবে যে তার হরমোনাল অস্থিরতায় তার রক্ষক হবে, হরমোনাল দ্বিধায় তার সিদ্ধান্তদাতা হবে। হরমোনাল কাতরতায় শক্ত পেশল হাতে তাকে তুলে নেবে প্রশস্ত বুকে। সকল দায়িত্ব নেবে চওড়া কাঁধে। মচকাবে কিন্তু ভাঙবে না। জান দেবে, কিন্তু মান দেবে না। আবার ওদিকে পুরুষের লাগবে একজন সদা-সন্দিগ্ধ পরামর্শক। অগ্রপশ্চাৎ নিয়ে অস্থির একজন চপল পরামর্শক। অল্পে উদ্বিগ্ন এক সযত্ন পরামর্শক। যে তার টেস্টোস্টেরোন-ঘটিত বেপরোয়া সিদ্ধান্তে বাধা হবে। এজন্য আমরা মুরব্বিদের বলতে শুনি: ‘বিয়ে দিয়ে দাও, বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে’। এবং যায়ও। বিয়ের পর লোকে মদগাঁজা ছেড়ে দেয়, লাম্পট্য ছেড়ে দেয়, মস্তানি-গুন্ডামি ছেড়ে দেয়, রিস্কি জীবনযাপন ও অভ্যাস ছেড়ে দেয়। এভাবে একটা ব্যালেন্স হয়।

শিশুর মতো আগলে রাখতে হয় নারীকেও। এটা ব্রেইন ম্যাপিং এর দরুন। শিশুর মতোই সে অনেক কিছু বুঝতে চায় না। নন-ইস্যুকে ইস্যু আর অদরকারিকে দরকারি ভাবা, ভুলে যাবার জিনিস মনে রাখা, জিদ, যুক্তির উপর আবেগের প্রাধান্য, হিসেবের চেয়ে জবানের প্রাধান্য, পর্যবেক্ষণ ডিটেইল কিন্তু শর্টটার্ম। এগুলো সব মাতৃগর্ভে নারীভ্রূণের হরমোন-বিধৌত ব্রেইনম্যাপ। আমরা কি শিশুকে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবি। ৪০ বছরের পুরুষ কি ১০ বছরের শিশুকে ভাবে প্রতিযোগী? নারীও তেমনি। ভালেবাসা আর মমতা ছাড়া আর কিছু পুরুষের দেয়ার নেই।

তাহলে নারী যখন ঝগড়া করে, তখন জবাব দেব না? না। জবান নারীর শক্তির জায়গা। পানিতে নেমে কুমীরের সাথে লড়া, আর নারীর সাথে ঝগড়া বকাবাজি করা একই জিনিস। পুরুষ উইথড্র করবে। নারীর জায়গায় নিজেকে নেবেন না। ঝগড়া জিনিসটাই আমার জিনিস না। এবং আমি ইন্টারেস্টেড না। আমি গেলাম। চুপ থাকা আপনার কর্তৃত্বের লক্ষণ। এক্সপ্রেশনলেস ফেইস। নারী সহজে কনফিউজ হয়। কনফিউজ করে দেন। তার ঝগড়ার বিপরীতে আপনার মুভ কী হবে, এটা নিয়ে তাকে কনফিউজ করে দেন। চুপ হয়ে যান। নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যান।

নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একবার সকল আম্মাজানের সাথে মনোমালিন্য হল। উপরে একরুমে গিয়ে শুয়েছিলেন। ওদিকে আম্মাজানরা পেরেশান। কেউ বুঝতে পারছেন না তাঁর নেক্সট স্টেপ কী হবে। চারপাশে চাউর হয়ে গেছে যে নবিজি সব আম্মাজানকে তালাক দিয়েছেন। হন্তদন্ত হয়ে উমার রা. দৌড়ে গেলেন দোতলার কামরায় উঠে দেখলেন নবিজির গায়ে দড়ির খাটের দড়ির দাগ। নারীর দুর্বলতা হল কনফিউশন, দ্বিধা, অস্থিরতা।

জবান দিয়ে লড়তে গেলে পারবেন না। কনফিউজড করে রাখুন একবেলা। আলফা মেল-রা এভাবে নারীদের সাথে লড়ে। পেশীশক্তি দিয়ে না। পেশীশক্তি তো সমান-দের জন্য।

<image1>
<image2>
<image3>


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *