ইহুদি জাতি ও সুদব্যবসা


প্রথমত, ই.হু.দি জাতি নিয়ে আগ্রহ ও চর্চার শেষ নেই। অতি আগ্রহ থেকে জন্ম নেয় অতি-ভীতি ও অজেয় ভাবার প্রবণতা। আর অতি-চর্চা থেকে জন্ম নেয় নিজেদের দায়মুক্তি ও পলায়নপর মানসিকতা (escapism)। আমি ই.হু.দিজাতিকে স্বজাতি হিসেবে বোঝার ও অনুভব করার চেষ্টা করেছিলাম মাঝখানে। তাদের দিক থেকে ব্যাপারগুলো কীরকম ঠেকে। কেনানে ঢোকার সময়: ‘মুসা তুমি আর তোমার রব্ব গিয়ে যুদ্ধ করোগে’ থেকে নিয়ে আল্লাহর সাথে একের পর এক বেয়াদবি ও অকৃতজ্ঞতা দেখিয়ে এই জাতি ‘মাগদ্বুব’ বা গজবপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত হয়েছে।

<image1>

আল্লাহ তাদের অভিশাপ দিয়েছেন:

আর সে সময়টি স্মরণ করুন, যখন আপনার রব জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, নিশ্চয় তিনি ইয়া.হু.দিদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত এমন শাসক প্রেরণ করতে থাকবেন, যারা তাদের প্রতি কঠোর শাস্তি পৌছাতে থাকবে।

সূরা আল-আরাফ: ১৬৭

গত ২৫০০ বছর ধরে তারা নানান দেশ থেকে তাড়া খেয়ে বেড়াচ্ছে। বার বার সংখ্যাগুরু খ্রিস্টানদের দ্বারা ইউরোপে তারা গণহত্যা ও উচ্ছেদের শিকার হয়েছে নানান দেশে। একটা সিম্প্যাথি কাজ করতো, কেন তারা বার বার হলোকাস্টের শিকার হচ্ছে ভেবে। ওদের বাপ-দাদারা দোষ করেছে, এদের কী দোষ, তাই ভেবে।

<image2>
<image3>

দ্বিতীয়ত, সায়েন্সের ছাত্র হবার দরুন অর্থনীতি তখন একেবারেই বুঝতাম না। এখনও সামান্য সামান্য বুঝি। ফলে সুদ-কে ব্যবসার একটা ধরন (যেখানে ঋণই পণ্য) হিসেবে মনে করতাম। আল্লাহ হারাম করেছেন, তাই হারাম। ব্যবসা থেকে আলাদা করেছেন, তাই আলাদা। আল্লাহর হিকমাহ-র উপর ঈমানের দরুন বিশ্বাস করতাম কেবল। এরপর কিছু বইপত্র পড়ার সুযোগ হল, ধরতে পারলাম পণ্যের ব্যবসা ও ঋণের ব্যবসার মাঝে পার্থক্য আছে। যেমন বলা হয়, পণ্যের ব্যবসায় লস আছে, সুদে তো লস নেই। কে বলেছে সুদে লস নেই? ঋণখেলাপি তো হয়, সেটাও তো এক ধরনের লস। অনেক ব্যাংক দেউলিয়াও হয়। এমন অনেক প্রশ্ন-সহই আল্লাহর বিধানে ঈমান রাখলাম।

এবার উপরের দুই প্যারা মিলাবো। বনী ইসরাঈলের শরীয়াতেও ‘সুদ’ হারাম করা ছিল। শনিবারের মাছ ধরা নিষেধ এড়ানোর যে কৌশল তারা নিয়েছিল (শুক্রবার রাতে জাল পেতে রাখত, শনিবার মাছ এসে আর ফিরতে পারতো না। রবিবার মাছ তুলে নিত।), একইভাবে সুদের ব্যবসার নিষেধাজ্ঞাও তারা বাইপাস করতে চেয়েছে। তাদের যাজকেরা ‘সুদ হারাম’ বিধানের ব্যাখ্যা এভাবে করেছে: বনি ইসরাঈলের নিজেদের মধ্যে সুদের কারবার হারাম। কিন্তু জেন্টাইলদের (অ-ইহুদি)সাথে সুদের কারবার জায়েয। ফলে যে শহরেই তারা গিয়েছে, সেখানেই সুদের ব্যবসা করেছে। যেহেতু তখন ইকোনোমিক কৌশলগুলো এতো ডেভলপ করেনি, সুদের ব্যবসার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে সংখ্যাগুরুদের ব্যবসাবাণিজ্য, জায়গাজমি সবকিছু ই.হু.দিদের কব্জায় চলে এসেছে। একপর্যায়ে দেনার দায়ে অতিষ্ঠ হয়ে সংখ্যাগুরু খ্রিস্টানরা তাদেরকে মেরে পিটে দেশছাড়া করেছে। আজও তারা একই কাজ করছে পুরো বিশ্বব্যাপী। ২৫০০ বছরের অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে ‘গ্লোবাল ইকোনমি’। ভুল করে করে শিখেছে। আরও নিখুঁত মডেল তৈরি করেছে। আবারও সুদী কারবারের মাধ্যমে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কায়েম করেছে ‘নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার’, যেখানে সকল সম্পদ একমুখী। আজ হোক বা কাল সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ সুদের দরুন একহাতে চলে আসবেই। অলরেডি বিশ্বের ৫০% সম্পদ ১% মানুষের হাতে।

ছবির মতো এসব বুঝতে পেরেছি তরুণ অর্থনীতিবিদ মোহাইমিন পাটোয়ারী ভাই রচিত ‘ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য’ বইটি পড়ে। লেখক এতো সুন্দর করে গল্পের ছলে বিভিন্ন চরিত্র দিয়ে আমাদেরকে ব্যাংকব্যবস্থার খুঁটিনাটিগুলো বুঝিয়েছেন যে, না বুঝে পাঠকের কোনো উপায়ই নেই। একদম সরল একটা সিনারিও দিয়ে শুরু করেছেন। এরপর একটা একটা করে ফ্যাক্টর যোগ করেছেন, আর আর ফল কী হলো তা দেখিয়েছেন। জায়গায় জায়গায় তুলে এনেছেন ইতিহাসও। বিভিন্ন ফ্যাক্টর কীভাবে ব্যাংকব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে, এবং দিনশেষে সরলসুদ হোক, চক্রবৃদ্ধি হোক, আর যতো লঘুকরণই করা হোক, যত মানবিকই করা হোক, যত বেশি ছাড়ই দেয়া হোক। দিনশেষে লাউ আর কদু; হয়তো একটু সময় বেশি লাগে এই যা।

আরেকটা বিষয় জলের মতো সাফ হয়েছে। নারীবাদ দিয়ে, সমকামিতার প্রসার দিয়ে ৩য় বিশ্বে নতুন নতুন ব্যবসার ফ্রন্ট খুলছে ১ম বিশ্ব। ব্যবসার জন্য খুলছে, এটা বুঝতাম। কেন ঋণদাতাকে নতুন নতুন ব্যবসা খুলতেই হবে, সেটা পরিষ্কার হয়েছে।

<image4>
<image5>

লেখক পুঁজিবাদী সুদী অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সব মারকাজে (নরওয়ের স্কুল অব ইকোনোমিক্স এবং জার্মানির মেইনহেইম বিশ্ববিদ্যালয়) পড়াশোনা করেছেন। আমি যেকোনো বই কেনার সময় লেখকের প্রোফাইল দেখি। এখানেও দেখেছি। বইমেলায় মসজিদে লেখকের সাথে কয়েক মিনিটের সাক্ষাতে ব্যাপক অনুপ্রাণিত হয়েছি। অটোগ্রাফ নেবার সুযোগ হয়েছে। প্রতিটি মানুষের বইটা পড়া দরকার। পুঁজিবাদী ১ম বিশ্বের নেটিভ গোলামদের তো বটেই।

  • দুনিয়া চালাতে যোগাল খাটে সায়েন্স পড়ুয়ারা
  • দুনিয়া চালায় ইকোনোমিকস
  • আর দুনিয়া কিভাবে চলবে ঠিক করে দেয় ফিলোসফি

তৃতীয় বিশ্বের ভালো রেজাল্ট করা ছাত্রদের গণহারে সায়েন্স পড়াটা আমার কাছে উন্নত বিশ্বের ‘শ্রমিক তৈরি মেধা পাচার প্রকল্প’ মনে হয়। দুনিয়ার জুলুম, বঞ্চনা, প্রতারণা, রাজনীতি বুঝতে হলে আপনাকে অর্থনীতি বুঝতে হবে। বুঝতেই হবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *