ষড়যন্ত্রতত্ত্ব


‘আমি কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাস করি না’ কথাটা অধুনা দীনী মহলে খুব স্মার্ট একটা পরিচিতি। খুব বাহবা পাওয়া যায়। যেমন ‘আমি প্রচলিত কোনো ধর্মে বিশ্বাস করি না’ বললে সেক্যুলার মহলে খুব বাহবা মেলে। এটা আমাদের মহলের স্মার্টনেস, ওটা ওদের মহলের স্মার্টনেস। অথচ মুসলিম হতে হলে আপনাকে ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাস করতে হবে। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে ‘শয়তান’ নামে একজন আছে। সে আপনাকে দোযখে নেবার জন্য ওঁত পেতে থাকে। ডাইনে দিয়ে আসে, বামে দিয়ে আসে, সামনে পিছে দিয়ে আসে (আয়াত)। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, শয়তানের জ্বিন ও মানুষ বাহন আছে, যার দ্বারা সে আপনাকে কুপথে পরিচালনা করে। ‘মিনাল জিন্নাতি ওয়ান নাস’। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, শয়তান তার সহচর জ্বিন ও মানুষদের নিয়ে আপনার জান্নাতে যেতে বাগড়া দেবার জন্য প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

কুরআনে বিশ্বাস করলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, কাফিররা এক জাতি… আল-কুফরু মিল্লাতুন ওয়াহিদা। তারা সর্বদা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। তারা চায় ফুঁতকারে আল্লাহর দীনকে নিভিয়ে ফেলতে, এজন্য তারা ষড়যন্ত্র করছে। তারাও ষড়যন্ত্র করে, আল্লাহও পরিকল্পনা করেন, আল্লাহর পরিকল্পনাই শ্রেষ্ঠ। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, তারা কখনোই সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি পুরোপুরি তাদের দীনের অনুসারী না হন। তারা সর্বদা আপনাকে তাদের দীনের অনুসারী বানানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। যারা তাগুত (আল্লাহর বিপরীতে যাদের আনুগত্য করা হয়, শয়তান ইত্যাদি), তারা কাফিরদের অভিভাবক, পরামর্শদাতা। তারা আপনাকে দীনের আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যাবার কোশেশ করছে। পরিকল্পনা আঁটছে, ষড়যন্ত্র করছে। (এই প্যারার প্রতিটা লাইন কুরআন আয়াত)

অবশ্যই আমরা বিশ্বাস করি কোনোকিছুই এই দুনিয়ায় কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া হচ্ছে না। ইতিহাসের পট পরিবর্তন, জ্ঞানবিজ্ঞান, এতো এতো রিসার্চ, আন্তর্জাতিক রাজনীতি। এর কোনোকিছুই হওয়ার জন্য হচ্ছে না। স্রোতের মত হচ্ছে না। বরং এই সবকিছুর পিছনে উদ্দেশ্য আছে। হক-বাতিলের দ্বন্দ্ব আছে। এক চূড়ান্ত পরিণতির দিকে সব এগিয়ে যাচ্ছে। নবীজীর স্পষ্ট সব হাদিসে এসবই উল্লেখ করা আছে, এখন দুনিয়াতে যা যা হচ্ছে। পৃথিবীতে শয়তান ও আদমের আসার ঘটনায় কি ঈমান আছে আমাদের? তারা পরস্পরের শত্রু হিসেবে এসেছিলেন। শয়তান ষড়যন্ত্রের ওয়াদা করে এসেছিল। সুতরাং ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকেই শয়তানের ষড়যন্ত্র মিশে আছে। বিভ্রান্তদেরকে দিয়ে শয়তান তার ষোড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। ইতিহাসের কোনো অংশই একটা আরেকটা অটোমেটিক পরিণতি না। বরং সব পরিবর্তনের পিছনে শয়তানের চাল সক্রিয় রয়েছে। এগুলো তো আকীদা রে ভাই। এখানে দ্বিমত, ট্রল, কাফিরদের সাফাই, এগুলো আমাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে,ভাবার সময় নেই?

সুতরাং কাফিররা যে সর্বদাই আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বাইরে আলাদা দেখা গেলেও ভিতরে ভিতরে তারা এক। সত্যপন্থীদের বিরুদ্ধে তারা সবাই এক জাতি হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এটা কুরআন-ই আমাদের শেখায়। এখন সেটা ইলুমিনাতি না কি রথচাইল্ড না কি অন্য কেউ, সেটা তো আপনার স্মার্টনেসে বাধা না। শয়তান কিছু মানুষকে নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এটা তো আপনাকে মুসলিম হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে, ভাইয়া। কিছু মানুষের সাথে শয়তানের সংযোগ থাকবে। যেমন বদরের যুদ্ধের সময় কুরাইশদের পরামর্শ দিয়েছিল শয়তান স্বয়ং এসে। আজকের যুগেও নেতৃস্থানীয়দের নিয়ে শয়তান মিটিং করবে, ষড়যন্ত্র করবে, এতে আশ্চর্যের কী আছে? বিজ্ঞানকে ব্যবহার করবে, একাডেমিয়াকে ব্যবহার করবে, কাফির-মুসলিম নেতাদেরকে ব্যবহার করবে, কোনো সিস্টেম ডেভলপ করাবে, মুসলিমদেরকে একটা সিস্টেমে ফেলে জাহান্নামের দিকে ধাবিত করবে, এতে অবাক হবার, নিজেকে ক্ষ্যাত ভাবার কী আছে বুঝলাম না।

‘ইহুদি-নাসারার ষড়যন্ত্র’ কথাটা শুনলেই নাক সিঁটকানো তো মুমিনের পরিচয় না ভাই। এটা তো কুরআনেরই কথা যে, তারা ষড়যন্ত্র করে, করছে। নবীর যুগেও করেছে, এখনও শয়তানের নেতৃত্বে করছে। ‘ইহুদি-নাসারার ষড়যন্ত্র’ বলা মানেই ‘এসকেপিজম’ না, ‘দায় এড়ানো’ না। বুদ্ধিবৃত্তিক ও পদ্ধতিগত মোকাবেলা করতে আগে তো বুঝতে হবে, ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করতে হবে। আপনি বেখেয়াল থাকলে, কাফিরদের আমাদের ব্যাপারে ইনসাফগার-নির্লিপ্ত-সত্যবাদী ভেবে বসে থাকলে সে ভাবনা তো কুরআনের সাথে মিলল না। আমাদের দায় হল, আমরা ফাঁদে পা দিয়েছি, সেখান থেকে আমাদের উঠতে হবে। এখন ‘ফাঁদ’ই যদি অস্বীকার করেন, তাহলে উঠবেন কোত্থেকে, শুয়ে থাকেন ওর ভেতর। আবার কেউ এসে হাত বাড়িয়ে আমাকে ফাঁদ থেকে উঠাবে, ততদিন শুয়েই থাকি, এই এলো বলে, ২০২০ এ সে আসবে, ২০২৮ এ আসবে, এই মনোভাব তৈরি হয়ে যাওয়াও একটা ষড়যন্ত্ররই অংশ।

আমার স্মার্টনেস আমাকে আবার আল্লাহর থেকে বেশি ক্রিটিক্যাল থিংকিং করার অভ্যেস না আবার এনে দেয়। নাউযুবিল্লাহ।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *