-
ভাষাগত বাঙালিয়ানা : শেষ পর্ব
বর্তমান বাংলা গদ্যধারার সাথে বাঙালির নাড়ির সম্পর্ক নেই। নাড়ির ভাষাটা কই গেল? সেটা ‘মুসলমানি বাংলা’ নাম ধারণ করে ‘গদ্য হিসেবে’ পরিত্যক্ত হল। কিন্তু পদ্য হিসেবে আরও একশ বছর টিকেছিল সেই বাংলা। যাকে আমরা ‘দোভাষী পুঁথি’ বা ‘বটতলার পুঁথি’ নামে চিনি। যদিও এতে সংস্কৃতায়নের প্রতিক্রিয়ায় আরবি-ফারসি শব্দের বাহুল্য ছিল। ৩০-৪০% ফার্সি শব্দ ছিল এতে। (ছবিতে) মানুষের…
-
ভাষাগত বাঙালিয়ানা : পর্ব ৫
এবার একটা গল্প শোনাই। ডাকাতে আমাকে অপহরণ করে দাস বানিয়ে দিল। আমার তল্পিতল্পা ঘাঁটতে গিয়ে সেই হারামী আমার দাদার দাদার এক পুরনো ছবি খুঁজে পেল। সে সিদ্ধান্ত নিল: এটা আমার বাপের ছবি। এবং আমি দেখতে যেমন, আমার এই চেহারাটা আসলে ভুল। আমার চেহারাটা আমার বাপের সাথে (আসলে আমার দাদার দাদা) মিল খাওয়া দরকার। তাই সে…
-
ভাষাগত বাঙালিয়ানা : পর্ব ৪
উপনিবেশপূর্ব বাংলা ভাষা: তের-চৌদ্দ শতক বাংলা ভাষার গঠন যুগ তথা স্বরূপ প্রাপ্তির যুগ। ১৪শ/১৫শ শতকে মুসলিম শাসনামলে ফারসি রাজভাষা হওয়ায় এবং এর বিশেষ মর্যাদার কারণে বাংলায় স্থান পায় প্রচুর ফার্সি শব্দ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুকুমার সেনের মতো বিদগ্ধ ভাষাতাত্বিকদের মতে বাংলা ভাষায় কমবেশি আড়াই হাজারের মতো আরবি ফার্সি শব্দ আছে। ভাষার স্বাভাবিক নিয়মে ক্রমে…
-
ভাষাগত বাঙালিয়ানা : পর্ব ৩
মধ্য বাংলার যুগ: আসল ঠিকাদার ১৩ শতকের শুরুতেও আমরা অপরিণত বাংলা (প্রোটো-বাংলা) পাই কথ্য ভাষা হিসেবে। সেন আমলে দমন পীড়নের মাঝেও কারা সে ভাষা টিকিয়ে রাখল দেখা যাক। ডক্টর নীহাররঞ্জন রায়ের ভাষায়, “ইসলামের প্রভাবে প্রভাবান্বিত কিছু লোক বাংলার কোথাও কোথাও সেই প্রাকৃতধর্মী সংস্কৃতির ধারা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন।” [ সুত্র : নীহাররঞ্জন রায় – বাঙালীর ইতিহাস, আদিপর্ব,…
-
ভাষাগত বাঙালিয়ানা : পর্ব ২
উদ্ভবের সময় থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাকে তিনটি ঐতিহাসিক পর্যায়ে ভাগ করে দেখা হয়: প্রাচীন বাংলা: প্রাচীন বাংলার নিদর্শন যে চর্যাপদ, সেটা আসলে বাংলা ভাষা কিনা তা নিয়েও বিতর্ক আছে। অনেক পণ্ডিত বলেছেন, এটা আসলে বাংলা-ই না। আসলে চর্যার পদগুলো বিভিন্ন অঞ্চলের কবিদের দ্বারা লিখিত। এবং তাদের লেখায় তাদের নিজেদের অঞ্চলের ভাষারূপ বা উপভাষার প্রভাবই পাওয়া…
-
ভাষাগত বাঙালিয়ানা : ১ম পর্ব
আর্যরা এদেশে আসে খ্রিঃপূঃ ১৫০০ সালের দিকে। এর আগে নানা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এদেশে বাস করতো। দ্রাবিড়, কোল, মুন্ডা ইত্যাদি। স্থানীয়দের মুখে মুখে আর্যদের বৈদিক ভাষা (সংস্কৃত) বদলে ‘প্রাকৃত’ ভাষা হয়ে যায়। প্রাচীন ভারতবর্ষে সর্বসাধারণের কথ্যভাষা ছিল প্রাকৃত ভাষা। প্রাকৃত ভাষা প্রধানত পাঁচ প্রকার। ৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে এই ভাষাগুলো থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নব্যভারতীয় ভাষাগুলোর (ডান…
-
সংস্কৃতি-নামা ১
সংস্কৃতি কী? আমরা যা, তা-ই আমাদের সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানে জীবন, জীবনপ্রণালী। নিঃসন্দেহে সংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হচ্ছে ধর্ম। কেননা, একাদেমিয়া বস্তুবাদী হলেও মানুষ বস্তুবাদী না। শতভাগ বস্তুবাদী মানুষ আপনি পাবেন না। ধর্ম হিসেবে হাজির না থাকলেও অন্যকিছু হিসেবে মানুষের মাঝে ভাব হাজির থাকে। ধর্ম না থাকলেও কোনো না কোনোভাবে তার মেটাফিজিক্স থাকে, যা তার চিন্তাধারাকে…
-
আরবি হরফে বাংলা লিখন
ছোটোবেলায় পাঠ্যবইয়ে পড়া শত ভুল তথ্যের মাঝে একটা হল: পাকিস্তানিরা আরবি হরফে বাংলা চাপিয়ে দিতে চাইছিল। অথচ যখন থেকে বাংলা হরফে বাংলা লেখা শুরু হয়েছে (সুলতানী আমল) তখন থেকেই আরবি হরফে বাংলা লেখার ধারাও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি চলেছে ৭০০ বছর। বাম-হিন্দুত্ববাদের আগ্রাসনে মুসলমানদের সেই সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, মায়ের ভাষা বাংলার সেই বৈচিত্র্যময় রূপ আজ বিলুপ্ত। জানতে…
-
জেন্ডার : একটি কুফরী শব্দ
আগে দুইটা শব্দ বুঝতে হবে। পশ্চিমা সভ্যতার আগ্রাসনই হল ‘শব্দ নিয়ে খেলা’। শুনতে শোনা যায় একরকম, বাস্তবে আরেক রকম। পশ্চিমা নষ্টামি থেকে বাঁচতে চাইলে যেকোনো নতুন শব্দ শুনেই বিশ্বাস করবেন না। আগে শব্দটা গভীরভাবে বুঝা চাই। (১) সেক্স:জন্মের সময় আমরা যেটা নিয়ে জন্মাই (জন্মলিঙ্গ)। ছেলেবাবু লিঙ্গ ও অণ্ডথলি নিয়ে। মেয়েবাবু যোনি নিয়ে। এটা তার সেক্স/জন্মলিঙ্গ।…
-
নতুন শিক্ষাক্রমে ‘শিল্প-সংস্কৃতি’ বই
শূন্য থেকে সংস্কৃতি সৃষ্টি হয় না। সংস্কৃতি সৃষ্টি হয় বিশ্বাস (belief system) থেকে।‘আমরা যা তা-ই আমাদের সংস্কৃতি’- যদি হয়, তবে মানুষ তা-ই করে, যা সে বিশ্বাস করে। Belief system যে প্রাতিষ্ঠানিক কোন ধর্মই হতে হবে, তা নয়। নির্ধর্মী কোনো বিশ্ববীক্ষাও কোনো জাতির বিশ্বাসের শূন্যস্থান পূর্ণ করতে পারে। সেক্যুলারিজমও একটা belief system. সংস্কৃতির প্রতিটি উপাদানই একটি…