নারী অধিকার vs নারীবাদ


নারীবাদ ও নারী অধিকার এক জিনিস না

নারীরা তাদের ইসলামি অধিকারগুলো পায়নি, এটা সত্য। এর সুদীর্ঘ সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। আমরা ইসলামে ফেরার কথা বলছি। যার ভিতরে সকল সাংস্কৃতিক ভেজাল ও রাজনৈতিক অপারগতা ওভারকাম করে নারীর অধিকার ফিরিয়ে দেয়াটা ইনক্লুডেড। আমরাও চাই, নারী তার স্রষ্টাপ্রদত্ত অধিকার ফিরে পাক।

পশ্চিমা সভ্যতা নারী অধিকার চায় না। তারা চায় ব্যবসা। নারীবাদ নারীকে অধিকার দেয় না (যদিও নারীরা মনে করে নারীবাদ তাদের অধিকার দেয়)। নারীবাদী অধ্যাপক ন্যান্সি ফ্রেজার তাঁর ‘Is Feminism the handmaiden of Capitalism’ আর্টিকেলে দেখিয়েছেন। বরং নারীবাদ নারীকে ১ম বিশ্বের ব্যবসায় পরিণত করে। নারীকে ভোগবাদী করা হয়, স্বাধীনতার নামে ব্যক্তিস্বাধীনতাবাদী সমাজবিচ্ছিন্ন স্বার্থপর করে ফেলা হয়। এবং নারীকে দিয়ে কৃত্রিম চাকরি সংকট তৈরি করে শ্রমকে কমদামী করে রাখা হয়। নারীর উপর দ্বৈত ভূমিকা চাপিয়ে তাকে শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ করে ফেলা হয়। অধিকারের লোভ দেখিয়ে আরোপ করা হয় এক্সট্রা কর্তব্য। গোয়েবলস বলেন:

“প্রোপাগান্ডা সবচেয়ে ভাল কাজ করছে বুঝবেন যখন দেখবেন যাদেরকে ম্যানিপুলেট করা হচ্ছে, আর তারা ভাবছে যে, আমরা যা করছি নিজ ইচ্ছাতেই করছি”।

নারীর অধিকারের জায়গা থেকেই আমরা নারীবাদের বিরোধিতা করি। ১ম ওয়েভ পশ্চিমা নারীর অধিকারের জায়গা থেকে শুরু হলেও ২য় ওয়েভ থেকে নারীবাদ আর নারীর নিয়ন্ত্রণে নেই। নারীবাদ নিয়ন্ত্রণ করে কর্পোরেট পুঁজিবাদী শ্বেতাঙ্গ পুরুষ। কেউ যদি বলে আমি নারী অধিকারের কথা বলি, নারীবাদও নারী অধিকারের কথা বলে, তাই একইরকম শোনায়। ভুল কথা। সেকেন্ড ওয়েভ ‘নারী অধিকারের’ নামে নারীকে শোষণ করার কথা বলে।

<image1>

আমরা কী চাই?

আমরা চাই নারী তার স্রষ্টাদত্ত অধিকার ফিরে পাক। পুঁজিবাদী নারীবাদ যেগুলোকে অধিকার বলছে, আমরা সেগুলোকে অধিকারই বলি না। বরং এগুলোই শোষণ। পুরুষের সমান হতে পাঠানো একজন নারীর বডি-সাইকির উপর অত্যাচার। তাকে আপনি খুব মোটিভেট করে পাঠাতে পারবেন, কিন্তু তা অত্যাচার। নারীকে তার বডি-সাইকির অনুকূল রোল থেকে পুরুষের রোলে এসাইন করা তার উপর অত্যাচার। খুব গ্লোরিফাই করলেই তার ক্ষতি ‘নাই’ হয়ে যাবে না। ফেমিনিজম দিয়ে ক্যাপিটালিজম এই কাজটাই করে। নারীর বডি-সাইকি-নিউরোফিজিওলজি যে বিশেষ রোল প্লে করার জন্য তৈরি, সেখান থেকে তাকে আরেক ভূমিকায় নামায়, যা তার দেহ-মনের বিপরীত। এবং এর ফল ভালো হবার নয়।

আমরা নারীকে অধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই

স্বামী কামাই করবে, আর নারী বাসায় থাকবে, এটা তার অধিকার। স্বামী তার ভরণপোষণ সাধ-আহ্লাদ পূরণ করবে, এটা তার অধিকার। সন্তানপ্রসবের সময় এবং দুধপানের ফলে যে বিপুল অক্সিটোসিন-জাত বাৎসল্য টান, সে ফিজিওলজির টান ছিন্ন করে সে বাইরে থাকবে না, নিজ সন্তানের আশেপাশে থাকবে, এটা তার অধিকার। প্রয়োজনে চাকরি করলেও পুরুষের সমান করবে না, কম করবে, কম শ্রম করবে, বেতনও কম পাবে। পুরুষের মত সমতা নারীর অধিকার নয়। বরং নারীর শরীর-মন-চাহিদা অনুপাতে বিশ্রাম পাবে, কম কর্মঘণ্টা কাজ করবে, মাসিক অসুস্থতায় ছুটি পাবে, নারী নারীর পরিবেশে মন খুলে নিঃসংকোচে ফুল ফ্লারিশমেন্টের সাথে কাজ করবে। এটা নারীর অধিকার। সমতা নারীর জন্য জুলুম।

আমরা চাই, নারী তার মসজিদের সাথে রিকানেক্ট করার ‘পরিবেশ’ ফিরে পাক। আমরা চাই নারী তার উচ্চশিক্ষার ‘পরিবেশ’ ফিরে পাক। উচ্চশিক্ষার নামে অহেতুক সময়ক্ষেপণ ও অহেতুক বিষয় পড়া থেকে রক্ষা পাক। বরং এমন শিক্ষা শিখুক যা তার রোল প্লে করতে তাকে সাহায্য করুক। পশ্চিমা সোশ্যাল সায়েন্স, জেন্ডার স্টাডিজের মতো দীনত্যাগমূলক কিছু না শিখুক। সেই ‘পরিবেশ’ তৈরির কাজটা মুসলিম-মুসলিমা একসাথে আমরা করতে চাই। এর মাঝে যারা শত্রুসভ্যতার সুরে কথা বলে, শত্রুসভ্যতার থিওরি-ফ্যাকাল্টি দিয়ে আমাদের নারীদের শত্রুর ছকে ফেলে দিতে চায়, জেন্ডার স্ট্রেস তৈরি করে, আমরা ঈমানী দায়িত্ব মনে করি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোকে।

হ্যা, আমরা এগুলো তাদেরকে দিতে পারিনি। তার সমাধান নারীবাদের জুলুমে ঠেলে দেয়া না। নারীবাদের ভাষায় ইসলামকে আক্রমণ করে নারীবাদকে জয়ী করা না। নারী অধিকার নিহিত ইসলামের ট্রেডিশনাল ব্যাখ্যাতেই। ইসলামের টেক্সট যেমন পাস হয়েছে, ইসলামের বুঝও পাস হয়েছে। সেই বুঝও আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। ভিন্ন কোনো ‘ভাষা’য় ইসলামকে ব্যাখ্যার সুযোগ নেই। যুগের ভাষায় ইসলাম বদলায় না, ইসলামই যুগের ভাষাকে বদলায়।


Leave a Reply