এক. DSM-নামা ও সমকামী আন্দোলন
মানসিক রোগনির্ণয়ে ও শ্রেণিকরণে American Psychiatric Association (APA) কর্তৃক নির্মিত Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM)-এর বহুল প্রচলন রয়েছে। ১৯৫২ সালে DSM-1 এবং ১৯৬৮ সালের DSM-2 তে সমকামকে যৌনবিকৃতি ও মানসিক রোগ হিসেবে তালিকাভুক্ত রাখা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে DSM-2 এর ৬ষ্ঠ মুদ্রণে গিয়ে সমকামিতাকে রোগের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। রিসার্চের ভিত্তিতে?… একদমই না।
১৯৬৪ সাল থেকেই সমকামীরা নিজেদের দুরবস্থার কারণ হিসেবে APA যে তাদেরকে রুগী বানিয়ে রেখেছে, এটাকে দায়ী করে আসছিল। ১৯৬৯ থেকে স্টোনওয়াল দাঙ্গার মাধ্যমে সমকামীদের আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল। ১৯৭০ সালে সানফ্রান্সিসকোতে APA-এর সম্মেলন চলাকালে সমকামী এক্টিভিস্টরা সম্মেলনকক্ষে ঢুকে পড়ে, বক্তাদের বক্তব্যের মাঝে শোরগোল করতে থাকে, চিৎকার ও টিটকারি করতে থাকে। APA-এর সদস্যগণ ও বিক্ষোভকারীদের মাঝে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশ পর্যন্ত ডাকা লাগে। ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনের সম্মেলনে গে-এক্টিভিস্টদের সাথে আলোচনার জন্য ‘গে-প্যানেল’ রাখা হয়। সেখানে তাদের নেতা Frank Kameny মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে চিৎকার করতে থাকেন:
Psychiatry is the enemy incarnate. Psychiatry has waged a relentless war of extermination against us. You may take this as a declaration of war against you.
“মনোচিকিৎসা বিভাগই আমাদের নব্য শত্রু। পুরো বিষয়টিই আমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করতে নিরন্তর সংগ্রামে লিপ্ত। আপনারা একে আমাদের পক্ষ থেকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে নিতে পারেন।”
Ronald Bayer Homosexuality and American Psychiatry: The Politics of Diagnosis (1981) Princeton University Press p. 105.
পরের বছর তারা আবার অংশ নেয় সম্মেলনে। পরের বছর ১৯৭৩ সালে সমকামিতাকে রোগের তালিকা থেকে তড়িঘড়ি করে রিসার্চ ছাড়াই বাদ দেবার সিদ্ধান্ত হয়। প্যানেলে সমকামিদের পক্ষে ওকালতি-কারী Barbara Gittings-ও বলেন:
It was never a medical decision. And it was a political move, that’s why i think the decision came so fast’
Marcus E. (2002), Making Gay History: The Half-century fight for lesbian and gay equal rights, p179
১৯৭৪ সালে ভোট হয়, সমকামিতাকে কি বাদই রাখা হবে, নাকি আবার ঢুকানো হবে লিস্টে। ৫৮% ভোট পড়ে ‘বাদ-ই থাকুক’ এর পক্ষে। এভাবেই রিসার্চ ছাড়াই ভোটে, হুমকিতে আর প্রেসারে তৈরি হয়ে গেল বিজ্ঞান। যাকে গত ৫০ বছর অন্ধভাবে অনুসরণ করে চলেছে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকেরা।
Sarah Baughey-Gill, When Gay was not Okay with the APA, Occam’s Razor, vol 1 (2011)
৪০ ও ৫০ এর দশকের বিখ্যাত আমেরিকান ডাক্তাররা ছিলেন বিড়ির ব্র্যান্ড এম্বাস্যাডর। বিড়ি কেন স্বাস্থ্যের জন্য ভাল, বিড়ি খেলে কেন ক্ষতি হয় না, বিড়ি কিভাবে স্ট্রেস দূর করে, এসব নিয়ে থরে থরে ‘বৈজ্ঞানিক গবেষণা’ হয়েছিল। পরে দেখা গেল, লাং ক্যান্সার আর হার্ট ডিজিজের সাথে বিড়ির সরাসরি ভালোবাসা। ইউরোপ-ইউএসএ যা করে, তাই নিরপেক্ষ বিজ্ঞান না। তার বাইরে ভাবার কোন সক্ষমতা ডেভলপ করতে হবে আমাদের। আমরা তৃতীয়বিশ্বের ডাক্তার, এই সত্যটা মনে রাখা চাই। পশ্চিম যা করে তাই বিজ্ঞান নয়। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানের পার্থক্যটা আমাদের বুঝতে হবে। পশ্চিমা বিজ্ঞান বা নতুন যেকোনো কনসেপ্টকে ৩য় বিশ্বের মানুষ হিসেবে রাজনীতি ও বাজার অর্থনীতির এঙ্গেল থেকে প্রশ্ন করতে হবে। একইভাবে আজ সমকামিতাকে নর্মালাইজ করার জন্য ডাক্তারদেরই ব্যবহার করা হবে বা হচ্ছে। ডাক্তারদের গ্রুপে সমকামিতা বিরোধী পোস্ট এপ্রুভ হবে না। গত দুইদিন আগে একটা পোস্ট করেছি, আজও এপ্রুভ হয়নি। BMSS সমকামিতা নিয়ে প্রোগ্রাম করেছে গত বছর। বহু ডাক্তার মনে করে এর জেনেটিক বেসিস আছে, হরমোনাল বেসিস আছে। আমাদেরকে দিয়েই এদেশে এটাকে নর্মাল করে ফেলা হবে।
<image>
২০০৯ সালের অবস্থা। অধিকাংশ বিজ্ঞানী লিবারেল ধর্মের। ধর্মের প্রতিফলন ঘটে রিসার্চে।
দুই.
সমকামিতা ও নারীবাদের পক্ষে যত গবেষণা তার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ করে থাকে American Psychological Association (APA). সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের ভোটের বিজ্ঞান আমরা আগের পোস্টে দেখেছি। আজ দেখা যাক সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশনের উপর দিয়ে ফিটফাট, ভিতরে কতখানি সদরঘাট।
২০০৫ সালের নভেম্বর মাসের ১২ তারিখ। Marina Del Rey Marriott Hotel-এ চলছে NARTH (National Association for Research & Therapy of Homosexuality) এর কনফারেন্স। প্রায় শতাধিক মনোচিকিৎসকের সামনে American Psychological Association (APA)-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট Nicholas Cummings, Ph.D. উচ্চারণ করলেন কিছু অপ্রিয় সত্য:
- সমাজকর্মীরা American Psychological Association-কে বাধ্য করছে তাদের হয়ে কথা বলতে। এমন সামাজিক অবস্থান নিতে জোর করছে, যার পক্ষে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। (হোয়াট?)
- তখনই APA কোন রিসার্চ পরিচালনা করে, যখন তারা জানে যে রেজাল্ট কী হবে। সম্ভাব্য যে ফলাফল পক্ষে আসবে, তেমন রিসার্চই কেবল অনুমোদন দেয়া হয়। (আর তা বিজ্ঞান হিসেবে সবাই খায়)
- যখন Cummings সাহেব ও আরেক মনোবিদ Rogers Wright, Ph.D একটা বই লিখছিলেন Destructive Trends in Mental Health নামে, তখন তারা আরও কিছু সহকর্মীর সাহায্য চান। তারা কেউই সাহায্য করেনি বরখাস্ত হবার ভয়ে কিংবা পদোন্নতি বঞ্চিত হবার ভয়ে (?)। বেশি ভয় পেত তারা ‘Gay lobby’ বা ‘সমকাম সমর্থক’দেরকে, যারা APA-তে খুবই শক্তিশালী। (আচ্ছা?)
- সমকাম কর্মীদের এজেন্ডার অমত করলেই তাকে থামিয়ে দেয়া হয় এ কথা বলে যে— ‘সমকামীদের বিরোধিতা মানে কাপুরুষতা’। Cummings সাহেব তাঁর এক অভিজ্ঞতার কথা বলেন: তদকালীন APA-র প্রেসিডেন্ট, যিনি আবার ছিলেন লেসবিয়ান, আমার বক্তব্য থামিয়ে দিয়েছিলেন, কথাই বলতে দেননি এ কথা বলে যে, আপনি স্ট্রেইট পুরুষ আর আমি লেসবিয়ান নারী। আপনার সাথে আমি কোনো বিষয়েই একমত হতে পারব না। অথচ পুরো হলের কেউ আমার পক্ষে কোনো কথাই বলল না। এই নারী APA-এর একজন প্রখ্যাত গবেষক ও বহু অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত। পাঠক, তাহলেই বোঝেন কী গবেষণা হয়। (কেন গবেষকের ব্যক্তিগত জীবনকে বিচার করা হবে না?)
মজার কথা হল, কেউ ট্রান্সজেন্ডার হতে চাইলে পারবে। যে বয়সের বাচ্চা সম্মতি দেবার অধিকারও রাখে না, সে বয়সের বাচ্চাও যদি বলে আব্বু আব্বু, আমি মেয়ে হব, আমার মনে হয় আমি মেয়ে। তাহলে তাকে মেয়ে হিসেবে বড় করার পরামর্শই দিতে হবে, এটাই নিয়ম। gender dysphoria-র চিকিৎসা প্রোটোকলই হলো তাকে কাউন্সেলিং করে, হরমোন থেরাপি দিয়ে, প্রয়োজনে সার্জারি করে সে মনে মনে নিজেকে যা ভাবে তাতে পরিণত করে দেয়া। কিন্তু কোনো সমকামী যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়, সেটা পারবে না। তাকে স্বাভাবিক জীবনের জন্য কাউন্সেলিং করা যাবে না, তাকে কোনো চিকিৎসা দেয়া যাবে না। কেউ কেউ নাকি ইলেক্ট্রিক শক দিয়েছে, এই অজুহাত তুলে পুরো ‘বিষমকামী-করণ থেরাপি’কেই অবৈধ করবার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ‘সমকামী এক্টিভিস্টরা’। আর এটা করাচ্ছে APA… সমকামীদের মনোচিকিৎসা করে তাদের স্বাভাবিক যৌনতায় ফিরিয়ে আনাকে ‘অনৈতিক’ ঘোষণা করেছে। তাহলে বুঝা গেল ব্যক্তিস্বাধীনতা একমুখেই চলবে। উল্টোটা ব্যক্তিস্বাধীনতা না। কারণ উল্টোটা বাজার কমিয়ে দেয়।
যেসব সমকামি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, তাদের নিয়ে কাজ করছেন Dr. Joseph Nicolosi. ওনার সাইটটা ভিজিত করতে পারেন। রেফারেন্স: Psych Association Loses Credibility, Say Insiders. Dr. Joseph Nicolosi website.
<image>
লিবারেল ধর্মে রবিজ্ঞানীরাও তাই রিসার্চে দেখে যা তাদের লিবারেল বিশ্বাসের সাথে যায়।
তিন.
ইদানীং আমরা যে IQ টেস্ট করি সেই পদ্ধতিটি ১৯৫০-এর দশকে Dr. D Wechsler-এর বানানো। শুরুতে তিনি পেলেন, ৩০-এরও বেশি টেস্ট নারী-পুরুষের মাঝে ‘একজনের’ পক্ষে ‘বৈষম্য’ করছে। যেন, টেস্টেরই দোষ, সে কেন একই রেজাল্ট দিচ্ছে না। কেন দুই লিঙ্গ দুই রকম পারফর্ম করবে? উভয়ে তো সমান। অতএব, টেস্টই ঠিক নেই। বুইঝেন ব্যাপারটা।
পারফর্মেন্স গ্যাপ যেগুলোতে বেশি, সেই টেস্টগুলো বাদ দিয়ে দিলেন Wechsler সাহেব। ‘সমস্যা’টা সমাধান করা দরকার। এরপরও যখন দুই লিঙ্গকে সমান দেখানো যাচ্ছে না, তখন যেটা করা হল: কিছু টেস্ট রাখা হল যেগুলোতে পুরুষ ভালো করে, নারী খারাপ করে। আর কিছু টেস্ট রাখা হল, যেগুলোতে নারীরা ভালো করে, পুরুষ খারাপ করে। পুরোটাকে বলা হল ‘IQ টেস্ট’; এবং ‘নারী-পুরুষ’ আইকিউ সমান।
এই হল বিজ্ঞানের অবস্থা। যখন গবেষণার রেজাল্ট আপনার পছন্দ হচ্ছে না, মনমতো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে আপনি প্রাপ্ত ডেটাগুলো এদিক-সেদিক করে নিচ্ছেন। উদাহরণ যেন, অলিম্পিকে কোনো পোলভোল্ট ইভেন্টে কয়েকজন অ্যাথলেটকে আপনি ওজনের বাটখারা বেঁধে দিচ্ছেন। আর কয়েকজনকে পোলের উচ্চতা কমিয়ে দিচ্ছেন।
যাতে ‘সত্য’টা প্রমাণিত হয় যে, শক্তি আর দ্রুততা যাই হোক, সৃষ্টিগতভাবে সব পোলভল্টারই সমান। (all the pole-vaulters, regardless of their prowess and agility, are created equal)