হুজুরদের কথা আমাদের ঠিক পছন্দ হতে চায় না। চবি’র দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল স্যারের স্ক্রীনশটটা দিলাম (ছবি-১)। একজন একাডেমিশিয়ান বলছেন: নারীবাদ ধর্মবিরোধী কুফর। সুতরাং ‘ইসলামী নারীবাদ’ শব্দটা আর ব্যবহার করবেন না। শব্দটা শুনলে মনে হয় যেন এটা আরেকটা ফিকহ, ইসলামের ভিতরই আরেকটা দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু ব্যাপারটা তা না। যেমন ‘ইসলামী কুফর’ হয় না। তেমনি ‘ইসলামী নারীবাদ’ও হয় না। আমরা এদের এখন থেকে বলব ‘হিজাবী লিবারেল মিশনারী’, ‘সেক্যুলারিজমের হিজাবী এজেন্ট’ বা ‘নারীবাদের হিজাবী এজেন্ট’ বা নব্য-উপনিবেশবাদ নব্য-সাম্রাজ্যবাদের হিজাবী দালাল। ‘ইসলামী নারীবাদী’ বলে ইসলামের সীমায় এদের ‘প্রচার’ কে স্থান দেয়া যাবে না।
<image1>
ফেসবুকে কিছু নারী আইডি, কিছু সিম্প হুজুর ও ইন্টেলেকচুয়াল এক্স-কওমী এক্সশিবির সোল্ড আউট ছেলেমেয়েরা এই আদর্শ প্রচার করে। ইসলামের উৎসগুলোকে অস্বীকার ও কুরআনের বক্র অর্থ করে মডার্নিজমের পার্পাস সার্ভ করে। এদের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে চাই মুসলিমদের উদ্দেশ্যে…
- এদের সকল রাগ ইসলামিস্টদের সাথে। যারা ইসলামের মূলসূত্র আঁকড়ে ধরতে চায়। কুরআন-হাদিস-ইজমা-কিয়াস অনুসারে ইসলামকে বুঝতে চায়, তাদেরকে ট্রল করে। গালাগালি করে। (ছবি-৪)
- ইসলামিস্টদের সাথে বিন্দুমাত্র সংযোগ নাই, এমন জিনিসকেও ইসলামিস্টদের ব্যাশিং এর জন্য ব্যবহার করে। বিনা উস্কানিতে। ছবি-২ এর ভিডিওটা অনেকেই দেখেছেন। মেয়েটা যতবার মুখ খুলতে নেয়, দাড়িহীন পুরুষটা ততবারই ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। এখানে ইসলামিস্টদের মনে পড়ার কোনো কারণই নেই। না পুরুষটাকে দেখে। আর না ইসলামপ্রিয় কোনো মানুষ বউকে এভাবে ধমকায় অকারণে। পোস্টদাতার সামনে কোনো ইসলামিস্ট নিশ্চয় কখনও করেনি। অথচ এটা দেখে তার ইসলামিস্টদের কথাই মনে হয়েছে। যারা ইসলামকে আবার একটা শক্তি হিসেবে চায়, তারা এদের শত্রু। তাহলে এদের বন্ধু কে?
- এদের বন্ধু হল নাস্তিক-শাতিমরা। এরা প্রতিক্রিয়া দেখানোর পর আমার কমেন্টে একাধিক নাস্তিক আইডি থেকে বাপমা তুলে গালাগালি করা হয়েছে। এই সোকল্ড ইসলামী আপু এবং শাতিম – নাস্তিকদের ‘কমন ফিলিংস’ হার্ট করেছি বলে? উগ্র নারীবাদী একটা চিন্তার সমালোচনা করেছি বলে? তাহলে এটা ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে কি না যে, এরা একসাথে কাজ করে। একই ইস্যুতে কাজ করে। ইসলামকে যারা চায়, তাদের বিরুদ্ধে এরা একাট্টা। শুধু তফাৎ যে, এরা হিজাব পরে।
- উগ্র নারীবাদী এবং এদের মাঝে আপনি ভাষাগত এক ফোঁটা পার্থক্যও পাবেন না। সেক্সিস্ট, পুরুষতন্ত্র, নারীবিদ্বেষী, আত্মমর্যাদা, ক্ষমতায়ন শব্দগুলো নারীবাদীরা ট্রাডিশনের বিরুদ্ধে ইউজ করে। আর এরা স্পেসিফিক ইসলামের বিরুদ্ধে ইউজ করে। পার্থক্য শুধু, এরা হিজাব পরে বলে মুসলিম মেয়েরা এদের দীনদার ভাবে। মোজাম্মেল স্যারের কথায় নারীবাদ কুফর হলে, এদের প্রচারিত মতাদর্শও কুফর। পার্থক্য হল, এরা ইসলামী টেক্সট ব্যবহার করে কুফরকে প্রমাণ করতে চায়।
আমার পড়াশুনার টপিক অব ইন্টারেস্ট ‘জেন্ডার এন্ড সেক্সুয়ালিটি’। একাডেমিক জীবন ঢুকেছি। রিপ্রোডাক্টিভ ফিজিওলজি নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা। মোটাদাগে আমি আমার সাবজেক্টের ভিতর আছি। আমরা চাই আমাদের মেয়েদের ঈমান-কোল রক্ষা করতে। আমরা চাই আমাদের মেয়েদের কোল থেকে শাতিম না বেরোক (ছবি ৫), হুসাইন তৈরি হোক। বোনেরা উপরের লক্ষণ দেখে সতর্ক হোন। ইসলামের আধুনিক কুফরীয় ব্যাখ্যা না, বরং ১৪০০ বছরের পরম্পরাগত ব্যাখ্যায় আত্মসমর্পণ করুন। ছবিগুলো দিচ্ছি।
<image2…..>
ঈমানের ব্যাপারে আমাদের আলোচনা কম কম। ঈমান আনা কাকে বলে, ঈমান কি বাবাতি সম্পত্তি, নাকি ঈমান চলেও যেতে পারে। কী কী কথা বা কাজের দ্বারা ঈমান চলে যায়। তখন কী করে ঈমান রিনিউ করতে হয়। ঈমান কি শুধুই মনের বিষয়? নাকি এর সাথে আইনী বিষয় জড়িত(বিয়ে, উত্তরাধিকার)। এগুলো নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করা দরকার।
নামাযী-হাজী সাহেবও কী বললে বা করলে বা কী মানসিকতা পোষণ করলে আর ঈমানদার থাকে না। একজন সমকামীও ঈমানদার থাকে যদি সে সমকামকে গুনাহ মনে করে। কিন্তু নামাজিও ঈমানদার থাকে না, যদি সে মনে করে সমকাম একটা অধিকার। যদি সে মনে করে আল্লাহ কাউকে কাউকে ভুল শরীরে জন্ম দিছেন। এই পার্থক্যগুলো জানাবুঝা জরুরি। সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হল: ঈমান আনতে গেলে সব টপিকের উপর ঈমান আনতে হয়৷ কিন্তু ঈমান যেতে হলে সবকিছু অস্বীকার করতে হয় না৷ একটা অস্বীকার কায়দামত হলেই আল্লাহর খাতায় আর মুসলিম থাকা হয় না।
যতই নিজেকে ‘আমি নারীবাদী না’ দাবি করুক। নামাযি, হিজাবি, সিম্প হুজুর যা-ই হোক, কোন কোন কথার দ্বারা, কোন বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানের দ্বারা কেউ ঈমান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। যেমনটি নিজেকে বার বার মুসলিম দাবিকারীও কিছু কথা/চিন্তার দ্বারা মুসলিম থাকে না। এদের কথা-এটিটিউড হয় কুফর নয় নিফাকের আলামত। হিজাবি ফেমিনিস্টদেরকে কুফরের খাতায় সবাইকে না ফেলা গেলেও নিফাকের খাতায় মোটাদাগে ফেলা যায়। এদের সাথে চলবো, তবে সতর্ক থাকা ও সতর্ক করা দরকার অন্যদের।
- নবিজি পুরুষ ছিলেন, তাই পুরুষবাদী ব্যাখ্যা করেছেন।
- সাহাবি-তাবেঈরা সেক্সিস্ট ছিলেন বলে নারীবিরোধী ইজমা করেছেন।
- কুরআন ঠিক আছে। কিন্তু হাদিস সংগ্রহ, ব্যাখ্যা, ফিকহ তৈরি সব পুরুষতান্ত্রিক সেক্সিস্ট মোল্লারা করেছে।
- ইন জেনারেল আলিম ও ইসলামপ্রেমী মানুষদের ঘৃণা করা।
- ইসলামের মুতাওয়াতির বিধান (অতি পরিচিত ও বিশুদ্ধ পরম্পরাগত বুঝ) কে কটাক্ষ করা। যেমন জেন্ডার রোল, জান্নাতে হুর, বহুবিবাহ।
এগুলোই এদের বক্তব্য। কেউ বেহায়ার মতো বলে। কেউ ইঙ্গিতে বলে। কারও আবার প্রোভোক করলে বেরিয়ে আসে চিন্তাগুলো।
সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্বের মতো ইসলাম কোনো সাবজেক্ট না, যে ফেমিনিস্ট ন্যারেটিভ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে৷ এরা ইসলামকে দীন হিসেবে না, বরং জাস্ট ইসলামিক স্টাডিজ সাবজেক্ট হিসেবে নিয়েছে। যে কাউকে ইসলামের ব্যাপারে ফেমিনিস্ট ন্যারেটিভ ব্যবহার করতে দেখবেন, বুঝান। কাজ না হলে মার্জিনালাইজ করুন। অন্যদের সতর্ক করুন। এদের কুফর-নিফাককে কুরআনের ভাষায় ‘ইলহাদ’ বলে। দীনের বক্র ব্যাখ্যা করা। নবিজি থেকে সাহাবি, সাহাবি থেকে তাবেঈ, তাবেঈ থেকে হাদিস-তাফসির-ফিকহের বইয়ে যে পরম্পরাগত বুঝ লিপিবদ্ধ বিধিবদ্ধ হয়েছে, তাকে অস্বীকার করে খায়েশমতো বক্র ব্যাখ্যা করা।
মুসলিমদেরকে ঈমান নিয়ে ট্রল করা
অনেক মুসলিম পাবেন হিন্দু-দোকানের মিষ্টি খায় না, হিন্দুরা বরকতের জন্য পঞ্চগব্য ব্যবহার করে এই তথ্যে। অনেক মুসলিম কোল্ড-ড্রিংক্স খায়না, আমি খাই। এক ভাই দেখলাম বাইরের বিরিয়ানি-টু-চা কিছুই খায়না, লিটারেলি নাথিং। তার ভাষ্য হল, তার স্ত্রী যিকিরের সাথে খানা পাকায়, সে শুধু সেটাই খায়, কর্মস্থলে নিয়ে যায়। একটু কষ্টমষ্ট হয় মাঝেমাঝে, কিন্তু তার দুআ কবুল হয় সবসময়। এটা সে হারাতে চায় না।
অনেক বোন কালো বোরকা পরেন, কালো বোরকাটাই আলিমগণ এডভোকেট করেন, যদিও বাধা-ধরা না। অনেক বোন পুরুষের সংস্পর্শে না আসার জন্য এমন অনেক কিছু করেন, যা ইসলাম জরুরি করেনি। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে করেন, অনেক আরামকে সহজতাকে ছেড়ে দেন। আল্লাহকে রাজি করার জন্য আপাত জায়েজ বা সন্দেহপূর্ণ সুবিধাগুলোও ছেড়ে দেন।
এই বিষয়গুলো আমার মনে সম্মানের উদ্রেক করে। আমি ভাবি: ইস, যদি আমি এদের মতো তাকওয়াবান হতে পারতাম। আজ আমি যা আছি, এর চেয়ে আরও আল্লাহকে পাবার দিওয়ানাপান থাকতো আমার। এদের মতো করে যদি আল্লাহকে দেখাতে পারতাম: আয় আল্লাহ, আপনার জন্য আমি সব করতে পারি। এটা ঈমানের আলামত। মুমিন তার ঈমান নিয়ে আমল নিয়ে সন্তুষ্ট হবে না, তৃপ্ত হবে না। মনে হবে, যদি আরও পারতাম। পারি আর না পারি, হয়ত পারতে চেষ্টাও করবো না, কিন্তু ঈর্ষা লাগে: কত প্রিয় হয়ে গেল রে, যদি আমিও পারতাম।
বিপরীতে এমন দেখে যদি কারও মনে হয়: এহ ভণ্ডামি, বাড়াবাড়ি, বেশি বেশি। তাকে নিয়ে ট্রল করে, টিটকারি করে, হাসাহাসি করে। এটাকে কেমন মানসিকতা বলবেন? ইসলামকে আষ্টেপৃষ্টে কঠোরভাবে প্র্যাকটিস করতে দেখে, ইসলামের বিধিবিধানের আযীমত হুকুমের দিকে দাওয়াহ করতে দেখে হিজাবী ফেমিনিস্টদের প্রতিক্রিয়া এমন। ইসলাম বিভিন্ন বিধানে রুখসত (ছাড়) ও আযীমত (কঠোর) ভার্সন আছে। হয়ত ঈমানের কমতির দরুন বা পরিস্থিতি আমাকে রুখসতের উপর আমল করাচ্ছে। কিন্তু ঈমানের দাবি হল: সুযোগ পেলে বা আল্লাহ তৌফিক দিলে আমি আযীমতের উপর আমল করে আল্লাহকে খুশি করবো। কিন্তু আযীমত নিয়ে ট্রল করা, যারা করতে পারছে এটাকে গোঁড়ামি বলে উপহাস করা নিফাকের আলামত। সূরা বাকারার ৮-১৫ আয়াতগুলো তাফসিরসহ একটু দেখুন তো মিল পান কিনা এদের সাথে। এদের কনটেক্সটে মিলান।
তারা বলে: আমরা কি বোকাদের মতো ঈমান আনব?… যখন তারা মুমিনদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তারা বলে: আরে আমরা তো মুমিন (আমরা নারীবাদী না)। আর তাদের শয়তানদের সাথে সাক্ষাৎ করে, তারা বলে, আমরা তো তোমাদের সাথেই, আমরা তো মুমিনদের সাথে উপহাস করি। (শাতিমদের সাথে ঢলাঢলি, সুসম্পর্ক, তাল মিলিয়ে কথা বলা)
আমার সাথে এদের (হিজাবী ফেমিনিস্ট, ক্রিয়েটিভ ইন্টেলেকচুয়াল এক্সকওমী এক্সশিবির) মূল সমস্যা এটাই। আমি আযীমত প্রচার করি। আসলে দাওয়াহর পদ্ধতিও কিন্তু এটাই। উম্মতের সামনে আযীমতের বিধান পেশ করা হবে। সবাই যার যার সুযোগ-যোগ্যতা অনুসারে দীন পালন করবে। আর আযীমতে উঠার ফিকিরে থাকবে। বোনদের ক্ষেত্রে যে হিজাব পরছে আপাতত, সে ভবিষ্যতে নিকাব করার ফিকিরে থাকবে। (জমহুর আলিম নিকাবকে ফরয/ওয়াজিব বলেন, আমি শিথিল মতের পক্ষে গিয়েই বললাম)। মানে বিধান বলা হবে, উৎসাহিত করা হবে, যে যার সুযোগমতো আমল করবে, আরও আযীমতের দিকে যাবার চেষ্টা করবে। যে জব করছে, চেষ্টা থাকবে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে আবার শরীয়ত নির্ধারিত রোলে ফেরত আসার।
বিকৃত ‘খিলাফতের’ ব্যাখ্যা বের করে আযীমতের বিধানগুলোকে উপহাস তো মূলত দীনকেই উপহাস করা। আযীমতের বিধানকে পুরুষতান্ত্রিক, সেক্সিস্ট মোল্লাদের বানানো, ভণ্ডামি বলা… এ আবার কেমন ইসলামি আপু, বলেন? তার মানে তো মনের ভিতর উগ্র নারীবাদই জেঁকে আছে, আল্লাহকে খুশি করার আগ্রহের চেয়ে। বলেন যে, পারছি না আল্লাহ মাফ কর। সামনে নিয়ত আছে ইনশাআল্লাহ। হয়ে গেল। এসব আলামত দেখে সতর্ক হতে হবে। যার তার কাছে দীনের ব্যাখ্যা নেবেন না। বিশেষ করে এসব আলামতধারীদের অনলাইন অফলাইনে মার্জিনালাইজ করুন। এদের পরিচয়কে স্পষ্ট করে দিন, মুখোশ খুলে দিন বোনদের ফোরামে। যাতে দীনের ব্যাপারে এদের মতের অনুসরণ কেউ না করে।
নির্লজ্জতা
মুসলিম নারী ইনফ্যাক্ট সকল নারীর জন্যই আল্লাহ আলাদা একটা সম্মানের জায়গা বরাদ্দ রেখেছেন। কারণটা হল লাজুকতা। আপনি যখন দেখবেন কেউ কোথাও আনইজি ফিল করছে তার জন্য আপনি সবকিছু ছাড় দেবেন। উঠে গিয়ে বসতে দেবেন। নিজ বাসার বাথরুমে সুযোগ দেয়া বা নামাজের জায়গা করে দেয়া, পুরুষ নারীর থরো বডিচেক না করা ইত্যাদি বিভিন্ন সুবিধা নারী পায় তার সংকোচ বা লাজুকতার দরুন।
মুসলিম পর্দানশীন নারী এই বেনিফিটটা আরও বেশি পায়। যখন বদ ছিলাম, তখনও বোরকা পরা না কেবল, এমনি হিজাব পরা নারী দেখলেও চোখ সরাতাম, যদিও দীন তেমন বুঝতাম না। ভিতর থেকেই কে যেন চোখ সরাতে বলতো। মনে হত They r not supposed to be stared at. এদের সাথে ইতরামি করা যাবে না। হায়া, শালীনতা, লাজুকতা অন্তরে সমীহ তৈরি করে। পুরুষরা আমরা যা-ই করি আর তা-ই করি, আমাদের নারীদের আমরা খুব দামী মনে করি। আল্লাহ তাদেরকে এই সম্মান দিয়েছেন। মুসলিম পুরুষ জান দিয়ে নিজেদের নারীদের রক্ষা করে। নিজে কষ্ট করে নারীর কষ্ট কমানোর চেষ্টা করে। শ্রম দিয়ে ঘাম দিয়ে সুদ-ঘুষ খেয়ে নারীর সাধ মেটানোর চেষ্টা করে। নিজ নারীদের রক্ষা ও মেইনটেইন করতে ব্যর্থতার চেয়ে জীবন চলে যাওয়াও পুরুষের কাছে সহনীয়। একজন আমার উপর নির্ভর করছে, আর আমি তার জন্য করতে পারলাম না। নারী-পুরুষ সম্পর্কটা মিউচুয়াল নির্ভরশীলতার। স্বাবলম্বিতার না। নির্ভরশীলতা থেকে ভালোবাসা, দুর্নিবার আকর্ষণ, গায়রত, ডেডিকেশন এসবের উৎপত্তি। এটা পশ্চিমা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদীরা বুঝতে চাইবে না।
অন্যদিকে চলে যাচ্ছি। মুসলিম নারীর সনাক্তকারী লক্ষণ এই মডেস্টি, হায়া, শালীনতা। চলনে-বলনে, কথায়-আবেগে। যা যে কারও সম্মানের উদ্রেক করে, ছাড় দেবার মানসিকতা তৈরি করে। নারীবাদ এই প্রাকৃতিক মেকানিজমটা অস্বীকার করে। নারীবাদের হিজাবী দালালদেরও আপনি দেখবেন, মুসলিম নারীর স্বভাবসুলভ লজ্জাকে এরা খারাপ মনে করে। কথাবার্তার ভিতর শালীনতা দেখবেন না। বরং শালীনতার প্রতি বিদ্রোহ দেখবেন। নাদিয়া ইসলামের সাথে এদের পার্থক্য হল, এরা হিজাব পরে আর মুসলিম সমাজে থাকে বলে সবকিছু করতে পারে না। টোন, এটিটিউডে, ইসলামকে আক্রমণ করার ধরনে এক ফোঁটা পার্থক্য পাবেন না। হায়াকে এরা নারীর অপমান মনে করে, নারীর পিছিয়ে যাবার কারণ মনে করে।
যেখানে আমাদের মেয়েরা নারীদের কমেন্টে পুরুষ রিপ্লাই দেবে এটুকুও পছন্দ করে না৷ সেখানে এরা কমেন্ট করুক সমস্যা নাই। কমেন্টের ভাষা, ইঙ্গিত, ভঙ্গি মুসলিম নারীর শরাফতের সাথে যায়? যেখানে আমি একটা আল্ট্রা র্যাডিক্যাল কুফরী (ফেমিনিস্ট) মেন্টালিটি নিয়ে কথা বলেছিলাম। এদের লাগার কোনো ঘটনাই ছিল না যদি এরা এই আল্ট্রা ফেমিনিজম সাপোর্ট না করতো৷ বুঝা গেল, এরাও এই মানসিকতার সমর্থক। দুঃখিত, আমি তাদের কোনো বেনিফিট অব ডাউট দিতে পারছি না। পাবলিক স্পেসে যারা এমন, ব্যক্তিগত জীবনে তারা কেমন?
<image….>
ভোগবাদী বেহায়ায়ির আইকন সাবেক পর্নো তারকা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। এর চেয়ে গভীর প্রভাব রাখে নারীবাদ দর্শন। পর্নোতারকা বড়জোর খানিক নির্লজ্জতা দিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু নির্লজ্জতাকে নারীবাদ গ্লোরিফাই করে, প্রতিবাদ হিসেবে করে। এটা আরও খারাপ। আমাদের মেয়েদের মাঝে নির্লজ্জতাকে নর্মালাইজ করে হিজাবী এজেন্টরা৷ সুতরাং কথা বলুন এটা নিয়ে।
ইসলামের বিপরীতে যদি কেউ আপনাকে কোনো অধিকার দিতে চায়, সেটা অধিকার নয়। সেটা ফাঁদ। তাহলে ইসলাম কী? ইসলাম হল:
- কুরআন। যেটা জিবরীল এনেছেন, নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝেছেন, সাহাবিদেরকে বুঝিয়েছেন (হাদিসের দ্বারা)।
- হাদিস। যেটা নবিজি বলেছেন, সাহাবিরা বুঝেছেন।
- আছার। যেটা সাহাবিরা বলেছেন, তাবেঈগণ বুঝেছেন। পরবর্তী যুগে পাস করেছেন।
- প্রতি যুগে অধিকাংশ হকপন্থী আলিম যে মতের উপর একমত হয়েছেন। (ইজমা)
- উপরের ৪টিকে দলিল ধরে নেয়া হকপন্থী আলিমদের সিদ্ধান্ত।
এভাবে টেক্সটের সাথে সাথে টেক্সটের বুঝও পরের জেনারেশনে পাস হয়েছে৷ ২-৩-৪-৫ বাদ দিয়ে… ২-৩-৪-৫ এর সকল বাহকদের সেক্সিস্ট, পুরুষতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে কোন ইসলাম শেখাচ্ছেন? কুরআন কি জিবরীল থেকে পাচ্ছেন নাকি, বইন? এই ৫টায় ঈমান ধরে রাখা খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নাহ?
কুরআন সালাত কায়েম করতে বলেছে। কীভাবে, কখন, কোথায়, কতটুকু এটা আমরা পরের ৪ টা উৎস থেকে শিখি ও মানি। কুরআন মানুষকে আল্লাহর খলিফা বলেছেন। কীভাবে, কখন, কোথায়, কতটুকু। সেটাও আমরা ২-৩-৪-৫ থেকে শিখি ও মানি। দীনকে বেঁকিয়ে মুচড়িয়ে ফেমিনিজমের খাপে আমরা ভরি না। উপরের ৪ ধাপে আল্লাহ আমাদের যে কর্মবণ্টন (জেন্ডার রোল) দিয়েছেন, আমরা তার উপর সন্তুষ্ট।
আমাদের দুইটা দুনিয়া: ঘর আর বাহির। দুইটা ফুলটাইম জব। ভবিষ্যতের জন্য দুইটাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। নারী ‘দুনিয়া’ সামলাবে, পুরুষ বাইরের ‘দুনিয়া’ সামলাবে। নারী বায়োলজি-সাইকোলজি মোতাবেক ঘরে আল্লাহর খলিফা। পুরুষ তার বায়োলজি-সাইকোলজি মোতাবেক বাইরে আল্লাহর খলিফা। এই জেন্ডার রোল মেনে নেয়া ওয়াজিব (মাআরেফুল কুরআন)। আল্লাহর খলিফা মানে এই রোল মেনে আল্লাহর আনুগত্য করা। রাসূল যখন বলবেন: স্বামীর আনুগত্যের কথা, সেটা মেনেই আমরা আল্লাহর খলিফা হই। প্রতিটি পদক্ষেপে ইসলামী শরিয়া যা বলে, সেটা পালন করাকেই আল্লাহর খলিফা হওয়া বলে। অর্থ একটা বানিয়ে মডার্নিজমের সাথে মিলিয়ে খানিক এসলাম খানিক কুফর মিশিয়ে কুফর দিয়ে ইসলাম ব্যাখ্যা করে কী এক সার্কাস। বাহ।
১-৫ অনুযায়ী আমরা মুসলিম পুরুষরা আপনাদেরকে অধিকার দিইনি, এটা সত্য। আমাদের ভুল হয়েছে। এর মানে এই না যে, কুফর (ফেমিনিস্ট ন্যারেটিভ) দিয়ে ইসলামকে বুঝে বিচ্ছিন্ন উদাহরণ টেনে বের করে কুফর মোতাবেক আমাদের মেয়েদের অধিকার পেতে হবে। বরং আমাদের মেয়েরা দাবি জানাবে ১-৫ এ ফিরে যাবার। পুরুষকে লজ্জা দেবে, কেন তারা ১-৫ মেনে চলছে না। আমাদের অধিকার-রাহাত-সুকুন-আরাম-স্বস্তি ইসলামে।
বোনেরা সতর্ক হোন। ভায়েরাও সতর্ক হোন। ইজলামি ফেমিনিজমের সাথে ইজলামি সিম্প ব্রো ও সিম্প হুজুরও পয়দা হইসে। সতর্ক হোন ও সতর্ক করুন।