নারীদের মাঝে দাওয়াহ


হজ করে আসার পর আব্বা মুহতারাম নিয়ত করেছিলেন ২০/২৫টা মসজিদ বানানোর। এলাকাবাসীকে সংগঠিত করে নিজেও কিছু অবদান রেখে গোটা দশেক বোধ হয় দাঁড় করেছেন। গত জুমআ পড়িয়েছি এমন এক মসজিদে। ইমাম সাহেব নেই। এলাকার এক তাবলীগের মুরব্বি সাথী নামায পড়ান পাঞ্জেগানা। টিনশেড ছিল, এখন পাকা হবে। কোদালের পয়লা কোপ দেবার জন্য আব্বাকে দাওয়াত করেছে।

আলাপ এটা না। আলাপ হল, আমাদের বাসা থেকে তিন গ্রাম পার হয়ে সেই মসজিদ। রাস্তায় ৫/৬ টা মসজিদ পড়লো। এবং মনে এক ভাবের উদয় হইল। এই তিনটে গ্রাম, এমনকি পৌরসভায়ও, ইনফ্যাক্ট পুরো উপজেলায়ই নারীদের দুটো দীনী কথা শোনার (দীন শেখা তো দূর কি বাত) কোনো উপলক্ষ নাই। শীতের রাতে ওয়াজ মাহফিলে রাতের বেলা আসার কতখানি সুযোগ আছে জানিনা। নিজ গ্রাম ছাড়া পাশের গ্রামে ‘সভা শোনার’ জন্য রাতে-সন্ধ্যায় যাবার সুযোগ আদৌ আছে কি না, মনে হয় না।

আপনারা বুঝতে পারছেন? জনগণকে চার ভাগ করেন। পুরুষ, নারী, ছেলেবাচ্চা, মেয়েবাচ্চা। পুরুষ বাদে বাকি ৩ ভাগ একাট্টা। নারী এবং নারীনির্ভর। উম্মতের চারভাগের ৩ ভাগের দীনী চেতনা- তরবিয়তের জন্য, ইনফ্যাক্ট দীনী কথা ‘শোনা’র জন্য পুরো উপজেলায় আমরা কোনো জায়গা করিনি। বছরের পর বছর। উম্মতের মেজরিটি অংশ দীনী কথা শোনে না, শুনতে পায় না৷ বছরের পর বছর কানে দীন ঢোকে না। কিন্তু জি-বাংলা দেখে ভরপুর। শুধু ‘হায় হায়’ ‘গেল গেল’ বলে লাভ আছে? সব উচ্ছন্নে যাবার মেকানিজম কি আমরা নিজেরাই করিনি?

রোজার দিন। ঘরের কাজকাম হয়ত খানিক কম। যোহরের আগে-পরে বিভিন্ন মাদরাসায়-মসজিদে কিছু করা যায় কি না, আলিমগণ ভেবে দেখবেন। আব্বাকে বললাম, আমাদের মাদরাসার মুহতামিম সাহেবের সাথে আলাপ করে এই মাসটা গ্রামের নারীদেরকে মাদরাসায় কোনো ব্যবস্থা করে দেয়া যায় কিনা। আর শুধু রমজান না। নারীরা রুটিনলি দীনী কথা সারা বছর শুনতে পায় এমন জায়গা করে দেয়া দরকার মহল্লায় মহল্লায়। ‘দীন শেখা’র ব্যবস্থা না হলেও ‘দীনী কথা শোনা’র ন্যূনতম ব্যবস্থাটুকু করা দরকার। খুব ভারি ইলমী আলাপ না হলেও সই। এটা হতে পারে:

  1. মহল্লারই কোনো বাসা যেখানে উঁচু দেয়াল/বেড়া রয়েছে। সেখানে সপ্তাহে ১ দিন।
  2. কোনো মাদরাসা।
  3. মসজিদে শুক্রবার আসরের আগের সময়টা। যখন পুরুষরা ঘরে থাকে।

স্থানীয় দায়িত্বশীল আলিমগণের সাথে কথা বলুন। শত বছর ধরে আলিমগণ মজলুম। তাঁরা চাইলেও অনেক কিছু পারেন না৷ বরং নিজেরা একটা সেটআপ রেডি করে আলিমদের দেখান। তাঁরা ভিজিট করে অনুমোদন দিলে কাজ শুরু হোক। সকল উদ্যোগ তাঁদেরকেই কেন নিতে হবে? তাবলীগের একটা ফরমেট আছে সাপ্তাহিক। সেটা বেশ অপ্রতুল ও অতিরিক্ত নিয়মকানুনের বেড়াজালে প্রসারহীন। তিন-চতুর্থাংশকে আমরা দীনের কথা পৌঁছতে পারছি না। ভবিষ্যত যারা গড়বে তারাই আমাদের আওতার বাইরে এখনও।

,

Leave a Reply