ডা. সুষমা রেজার লাস্ট পোস্টে এই কমেন্টটা করলাম। জানি না উনি পড়বেন কিনা। একজন কলিগের প্রতি জাস্ট দায়বদ্ধতা থেকে লিখলাম।
ধন্যবাদ আপু, আপনি খুব সুন্দর করে আপনাদের স্ট্যান্ডপয়েন্টটা ব্যাখ্যা করেছেন। ডেফিনিটলি আমি আপনাদের যে সামান্য কিছু বক্তব্য নানান ইস্যুতে দেখেছি বা পোস্ট পড়েছি, আপনার অবস্থানটা সবসময়েই সব ইস্যুতেই আমার কাছে সেন্সিবল লেগেছে। প্রধান পুরুষ দুজনের অবস্থান, ব্যাখ্যা, রিএকশন বেশ হঠকারী ও অপরিণত। যখন এতো এতো মানুষ আপনাদের ফলো করে, আপনাদের থেকে শেখে তখন অটোমেটিক আপনাদের একটা ধর্মীয় দায়ও তৈরি হয়ে যায় (যখন আপনারা ধর্মীয় বিষয়গুলো টেনে কথা বলছেন), হুবহু যেমনটা মুফতিদের থাকে। সুতরাং আপনাদের ক্ল্যাসিক্যাল দীনী জ্ঞান (নট তালমেলানো) অর্জনেও সময় দেয়া প্রয়োজন মনে করি।
দ্বিতীয়, আপনারা স্বামীস্ত্রী কেবল ডাক্তার নন, যারা শুধুই চেম্বার করছেন আর রুগী দেখছেন। আপনারা যখন ভিডিও করছেন যা লক্ষ মানুষ দেখছে, তখন আপনারা ডাক্তারের সাথে সাথে।সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারও, একজন সমাজকর্মীও। সমাজটা আপনার চেম্বার নয়। সমাজ আর চেম্বার যে আলাদা, এই পার্থক্যটুকু কুশল ভাই না করতে পারলেও আপনি করতে পারবেন, আশা ছিল। চেম্বারের এপ্রোচ একরকম হবে, আর সমাজের কাছে একটা মেসেজ যখন দেবেন তখন এপ্রোচ হবে আরেক রকম।
এটা আলিমরাও করে থাকেন। একজন সমকামী যখন আলিমের কাছে যান নিজে থেকে, তখন আলিমরাও খুব স্নেহশীল আচরণ করেন। পরামর্শ চাইলে স্নেহশীল পরামর্শ দেন। আপনি একজন হার্মফুল লাইফস্টাইলের রুগীকে চেম্বারে সহানুভূতি দেখাবেন, কিন্তু সমাজকর্মী হিসেবে আপনি কখনোই হার্মফুল চিন্তা, হ্যাবিট বা লাইফস্টাইলকে স্পেস দেবার কথা বলতে পারেন না। যখন আপনি এওয়ারনেস তৈরি করতে চাচ্ছেন, তখন আপনি চূড়ান্তভাবে এসব চিন্তা-যৌনআচরণগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে যা যা বলার সব বলবেন। একে চেম্বারে সাপোর্ট দেবেন, সমাজে না। ব্যক্তিকে সহায়তা স্নেহ দেবেন। চিন্তা-দর্শন বা প্র্যাক্টিসটাকে ন্যূনতম ছাড় দেবেন না।
সমকামিতা, পরকীয়া, হস্তমৈথুন-পর্নো, ট্রান্স এসবই বড় বড় সামাজিক ব্যাধি। এগুলোকেও আমরা ডিজিজ কন্ডিশনের মতোই ট্রীট করবো। আক্রান্তকে সহায়তা, রোগটাকে ও রোগের প্রচারকদের চূড়ান্তভাবে নেগেট করা। রোগও চাই, রুগীও চাই, এটা সমাধান নয় আপু। তাদেরকে নিজেদের পক্ষে বাকস্বাধীনতা দেয়া মানে তাদের প্রচারণা চালানোর সুযোগ দেয়া, আরও হাজারও তরুণ-তরুণীর মনে জেন্ডার ডিস্ফোরিয়াকে উস্কে দেয়া কি ঠিক? বরং ঠিক যেভাবে নাটক-সিনেমায় নায়কের/ ভিলেনের সিগারেট বা মদ খাবার সিনকে জায়গাটুকু ব্লার করে দেয়া হয়, সেভাবে এদের মিডিয়া ফোকাস কমানোটাই জরুরি ছিল, যা আমরা করতে পারছি না, পারবোও না। এমন জায়ান্ট একটা অপশক্তি পক্ষে যায়, এমন একটা বর্ণও আমাদের না বলা উচিত ওপেন প্লাটফর্মে। আমার জন্য এটা ছোট ভুল হলেও, আপনাদের মত বিশাল প্লাটফর্মের এই ছোট ভুলও সমাজে বিরাট ভুলের সূচনা করবে।
আপনার বক্তব্যের মাত্র ৫ মিনিট (যেখানে তাদের স্পেস দেবার কথা বলেছেন) ছাড়া পুরোটুকুই অসাধারণ ছিল। সেটুকু ধরিয়ে দিয়ে কথা যিনি বলেছিলেন (ড. সরোয়ার) তিনি, দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে জেন্ডার-সেক্সুয়ালিটি নিয়ে গবেষণায় রত। এ পর্যায়ের খুব কম লোকই সারা দুনিয়াতে এই জায়ান্ট অপশক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বিদেশের সুন্দর জীবন রেখে দেশে এসব শয়তানি মতবাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ে ছুটে চলেছেন একাকী, দূতাবাস-রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কনস্ট্যান্ট থ্রেটের মুখে তিনি চেষ্টা করে চলেছেন একাই এই জায়ান্টকে এদেশে আসতে না দেবার জন্য। শিক্ষিত ইসলামপ্রিয় বিপুল তরুণ তাঁর এই কাজে অনুপ্রেরণা পায়। চেম্বার ও সমাজে এপ্রোচের এই পার্থক্যটা তিনি আপনাদের ধরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কুশল ভায়ের দ্বারা খুব ন্যাক্কারজনক প্রত্যুত্তর এসেছে। ৫০+ বয়সের একজন অভিজ্ঞ গবেষককে নিয়ে তাঁর কমেন্ট সকল সভ্যতা ভদ্রতার ঊর্ধ্বে। বিশেষ করে কুশল ভাই ও ড. সরোয়ার দুজনের কেউই এমন পর্যায়ের লোক না যে এই ভাষা ইউজ হতে পারে।
[৩য় পর্ব]
তৃতীয়ত, এইযে আপনারা বার বার বলছেন, একটা গ্রুপ একটা গ্রুপ। বলে বলে কিছু মানুষকে আপনারা ট্যাগিং ও ‘অপসোনাইজেশন’ করতে চাচ্ছেন, মার্ক করতে চাচ্ছেন, ঠিক এই কাজটাই এই বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী, বামপন্থী ও পশ্চিমা লিবারেল কালচার আমদানিকারকরা (ওয়ার অন টেরর) দিয়ে করে। ইসলামের আদি ও আসল মেজাজ যাঁরা আঁকড়ে ধরতে চায়, নবীজির ইসলামটা যারা প্রচার করতে চায়, ইসলামকেই সকল অন্যায়-অবিচারের সমাধান হিসেবে মেইনস্ট্রীমিং করতে চায়, সেই আলিম-ওলামা-তরুণদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে সমাজে মার্জিনালাইজ করার যে বৈশ্বিক প্রকল্প, আপনাদের অবস্থান একই প্রমাণ হচ্ছে। আপনারা তিনজনই ‘একটা গ্রুপ’ ‘একটা গ্রুপ’ বলে বলে একই কাজটা করছেন। ভিকটিম প্লে করছেন। চোর, ডাকাত, পরকীয়া, সমকামী সবাইকে আপনারা বুঝতে চান স্পেস দিতে চান, শুধু ইসলামকে বিজয়ী করতে চাওয়া মানুষদের স্পেস দিতে চান না।
বরং আপনারা যদি ট্রান্স, পরকীয়া, সমকামের বিরুদ্ধেই হয়ে থাকেন, তবে এই গ্রুপটা হতে পারতো আপনাদের সহযোগী। ড. সরোয়ারের একাডেমিক যোগ্যতাকে আপনারা ব্যবহার করতে পারতেন। মোজাম্মেল স্যারের দর্শনের যোগ্যতাকে আপনারা ব্যবহার করতে পারতেন। বরং সেটা না করে আক্রমণাত্মক ভাষায় কমেন্ট আমাদের উল্টো মেসেজ দেয়। এই মেসেজ দেয় যে, আপনারা বৈশ্বিক জেন্ডার ডিস্ফোরিয়া তৈরি ও ট্রান্সজেন্ডার মার্কেট তৈরি প্রকল্পের অংশ কিনা। মার্কেটে রোগও থাকুক, রুগীও থাকুক, এই মুনাফাসর্বস্ব মানসিকতার প্রতিষ্ঠান কিনা। যারা এই আদর্শের বিরুদ্ধে, আপনারাও তাদেরই আক্রমণ করছেন কেন তবে? এই গরীব দেশে পরকীয়া, সমকামিতা, ট্রান্স যে হাজার কোটি টাকার নতুন মার্কেট তৈরি করবে, সেটা ঠেকানোর বদলে সফটলি সেগুলোকে স্পেস দিতে চাওয়াকে পক্ষ নেয়াই বলে।
এলোমেলো অনেকগুলো কথা লিখলাম। ডিগ্রি নিয়ে ইয়াহিয়া সাহেবের ব্যাপারে কথা উঠেছে, ডাক্তারদের নিয়ে নয়। অহেতুক নিজেদের জড়িয়ে বৈধ প্রশ্নকে ঢেকে দেয়া সমাধান নয়, বরং আরও প্রশ্নের জন্ম দেবে। ধন্যবাদ।