ইসলাম ‘ধর্ম’-এর আধুনিক সংজ্ঞায় ধর্ম না। ধর্ম বলতে পশ্চিমারা বোঝে নিখাদ ভাববাদ-কে। যার সাথে বস্তুর সম্পর্ক নাই। কিন্তু ইসলাম নিছক ভাববাদ না। ইসলাম ভাব ও বস্তু, শরীর ও আত্মা, ইহলোক ও পরলোকের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ সংজ্ঞা, পরিপূর্ণ জীবন বিধান।
সুতরাং বস্তুজগত নিয়ে ইসলামের বক্তব্য আছে। বিজ্ঞান বস্তুবাদ ডীল করবে, ধর্ম ভাববাদ ডীল করবে। সুতরাং এ দুয়ের মাঝে কোনো সম্পর্ক নাই। এই কথা ভাববাদী ধর্মগুলোর জন্য সত্য। যেহেতু ইসলাম ভাবজগতও ডীল করে বস্তুজগতও ডীল করে সুতরাং বিজ্ঞানের সাথে ইসলামের কমন কিছু গ্রাউন্ড আছে। বিজ্ঞান থেকে ইসলামকে পুরো খারিজ করা যায় না। যারা খারিজ করতে চায়, তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ইসলামের এখতিয়ার স্বীকার করতে চায় না। জ্ঞানতত্ত্বেও ওহীর এখতিয়ার আছে, এটা তারা মানতে অস্বীকার করে। ফলে সেক্যুলারায়নেরই পক্ষ তারা, জেনে বা না জেনে।
ঢাবি’র কেমিস্ট্রির একজন প্রফেসরের একটা পোস্টার নিয়ে তারা খুব ট্রলবাজি করছে। অথচ পুরো পোস্টারে গবেষণা-রিসার্চ জাতীয় কোনো আলাপ নেই। বুঝাই যাচ্ছে এটা একান্তই তার বিশ্বাসগত কিছু ধারণা। তিনি বলেনওনি এটা গবেষণা করে পেয়েছেন। তবে জিনিসটা নেহাত বোকা বোকা। এতোটা বোকা বোকা হওয়াটা মানায় না৷ ইসলামই আমাদেরকে পার্থিব বিষয়ে যুক্তিভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছে, তাহকীক-যাচাই শিখিয়েছে। ইসলামই জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার। সুতরাং আরেকটু যৌক্তিকতা কাম্য আমাদের কাজকর্মে।
যে যেই সাবজেক্ট পড়ছেন সেই সাবজেক্ট থেকে ইসলামের দিকে তাকান। পোস্টারটিতে আমি কেমিস্ট্রির ও কিছু পেলাম না। স্রেফ অপ্রয়োজনীয় কিছু ধারণা পেলাম। আমি যে কাজ করি তা কোনো না কোনোভাবে আমার ফিল্ড (মেডিকেল সায়েন্স, ফিজিওলজি) এর সাথে কানেক্টেড। এমনকি নারীবাদ নিয়ে আমি যে আলাপ করি, তাও শারীরবিদ্যার (নিউরোফিজিওলজি, রিপ্রোডাক্টিভ ফিজিওলজি) পরিধির মাঝে বলি।
ন্যাচারাল সায়েন্সকে ইসলাম মানবজ্ঞানের উপর ছেড়ে দিয়েছে। আর হিউম্যান সায়েন্স (অর্থনীতি-রাষ্ট্রবিজ্ঞান-সমাজবিদ্যা-ইথিক্স-আইন) নিয়ে ইসলাম সুস্পষ্ট অবস্থান নির্দেশ করেছে। সুতরাং কর্তব্য হল, ন্যাচারাল সায়েন্সের মুসলিমরা ইসলামী ইথিক্স বজায় রেখে নিজ টপিকে রিসার্চ করে যাওয়া। আর হিউম্যান সায়েন্সের মুসলিমরা ধর্মমুক্ত পশ্চিমা লিবারেল কাঠামোর বিপরীতে ইসলামের কাঠামোর তুলনা পেশ করা। ইসলামের হিউম্যান সায়েন্স কাঠামোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা।
বিজ্ঞানের ভিতরেও ইসলামের কিছু বলার আছে। বিজ্ঞান ও ইসলাম আলাদা করার ফলেই আজ পরিবেশ বিপর্যয়। এমনকি ন্যাচারাল সায়েন্সেও ইসলামের ইথিক্স প্রবেশ করানো দরকার। জিয়াউদ্দিন সরদারের Touch of Midas বইটায় বিস্তারিত আলাপ পাবেন। আজ যে পুঁজিবাদের দাসে পরিণত হয়েছে বিজ্ঞান, পরিবেশ ধ্বংসের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বিজ্ঞান, এর সমাধানও ইসলামকে বিজ্ঞানের মাঝে প্রয়োগের ভিতর।
সুতরাং ধর্মের মাঝে বিজ্ঞান আনবেন না, এটা অন্য ধর্মের জন্য। ইসলাম ভাববাদী ধর্ম না। ইসলামে বিজ্ঞান থাকবে, বিজ্ঞানেও ইসলাম থাকবে। ইসলাম আমাদের পার্থিব জীবনের বস্তুগত যে অংশটুকু ডীল করে, সেই বিজ্ঞান ও ইসলামের কমন গ্রাউন্ড।
আইনস্টাইন যা বুঝলো, আধুনিক মোজলেমরা বুঝতে চায় না। ধর্মওয়ালা বিজ্ঞান পঙ্গু না, বিজ্ঞানওয়ালা ধর্ম অন্ধ না। জীবন-জগত সম্পর্কে সত্যিকার ধারণা আসতে বস্তুবাদ-ভাববাদের সমন্বয় লাগবে। ওহী-গাইডেড বিজ্ঞান ও নৈতিক প্রযুক্তিই বিশ্বের সমাধান। মুসলিমরা যখন অমুসলিমদের মত কথা বলে ইসলামকে খারিজ করে সেটা একটা আইরনি।