ফ্যাশিবাদের প্রেতাত্মা


হাসিনা যদি প্রেতিনী (>পেত্নী) হয়, তবে প্রেতাত্মাটি হল বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হল মৌলিকভাবে হিন্দুত্ববাদ।

গণঅভ্যুত্থানে অনেক কওমিছাত্রদেরও দেখেছি ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রীতিলতাদের নিয়ে আদিখ্যেতা করতে। অথচ এরা ছিল হিন্দুত্ববাদী। বৃটিশের বিরুদ্ধে এরা লড়ছিল কারণ বৃটিশ মুসলিমদের উন্নতির জন্য বঙ্গভঙ্গ করেছিল। ফলে কলকাতা-নিবাসী হিন্দু জমিদারদের খাজনা ইত্যাদিতে অসুবিধা হচ্ছিল। প্রধান শত্রু ছিল মুসলিমরা। বৃটিশরা মুসলিমদের পক্ষে একটা কাজ করেছে বলে সেকেন্ডারি শত্রু হয়ে গেছে। হতাশ জমিদার রবীন্দ্রনাথ লিখল ‘তোমার বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি’।

স্বদেশী আন্দোলনকারীরা কালীর সামনে রক্তশপথ নিত, ফলে মুসলিম স্বদেশী ছিল না বললেই চলে। সুতরাং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ‘বাঙালি’ ধারণার উপর নির্মিত, আর ‘বাঙালি’ পারিভাষিকভাবে তাদের দাবিমতে ‘বাঙালি হিন্দু’। বাঙালি জাতীয়তাবাদ হল বঙ্কিম-রবিঠাকুরদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ

হিন্দু জমিদারদের অত্যাচার থেকে বাঙালি মুসলমানদের বিজয় ছিল বঙ্গভঙ্গ। সেটা ঠেকিয়ে দিতে পারলেও দ্বিতীয় বিজয় তারা ছিনিয়ে আনল : পাকিস্তান গঠন। জমিদারদের নাগপাশ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হলো চিরবঞ্চিত কৃষক মুসলমান। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান সরকার প্রজাস্বত্ব আইন করে সকল জমিদারি রহিত করল। সেই ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে শুরু হওয়া বৃটিশ-হিন্দু যৌথ নির্যাতন খতম হলো। ক্ষতিগ্রস্ত হলো হিন্দু জমিদাররা

জমিদার-সন্তান, স্ত্রী, নাতিপুতিরা গঠন করল পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি। অত্যন্ত সহজ সরল আন্ডারস্ট্যান্ডিং হল: একটা দেশে নানান ভাষাভাষী মানুষ থাকতে পারে। কিন্তু দেশে একটাই অফিসিয়াল ভাষা থাকবে। যেটা শিক্ষিত লোকে বোঝে। ১৯৪৭ সালেই পশ্চিম পাক শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে ছিল পূর্বপাকের চেয়ে। কেননা সেখানে হিন্দু জমিদাররা মুসলিম প্রজাদের কৃষক বানিয়ে রাখেনি, লাগাতার দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে রাখেনি। শিক্ষিত বাঙালি মুসলমান-হিন্দুরাও উর্দুতে পারদর্শী ছিল। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই একমাত্র অফিসিয়াল ভাষাটি হবে উর্দু। আজও বাংলাদেশে কোর্টে রায় লেখার ভাষা কি? ইংরেজি। আমার জানামতে পাকভারতেও ইংরেজি। উচ্চশিক্ষার ভাষা ইংরেজি। কারণ এটাই সহজ বৈশ্বিক পারিভাষিক সমন্বয়ের জন্য এবং যারা পড়বে তারা ইংরেজিটা পারে। এই সহজ স্বাভাবিক কথাটার বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলন হল, যার মূল কারিগর ছিল ঐ জমিদারি-হারানো কমিউনিস্ট পার্টি ও তাদের ল্যাসপেন্সার মুহাজির আধা-মুসলমান গং। একের পর এক ভাষা আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন (জমিদারপত্নী ইলা মিত্র) করে পাকিস্তান সরকারকে ব্যর্থ করার স্বপ্নে বিভোর ছিল এই হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা, মুখোশটা হল বাঙালি জাতীয়তাবাদের।

এই রাবীন্দ্রিকতা, এইসব উদীচী, বাম দলগুলো, এই কলকেতাঈ শান্তিনিকেতনী বাঙালিত্ব, পহেলা বৈশাখ এরাই সেই তারা, যারা প্রতিনিয়ত বাঙালি মুসলমানের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছি, আজ যাদের আমরা শাহবাগী বলি। ৭১ কাদের পার্পাস সার্ভ করলো, বুঝে নেন। ২৫ মার্চের আগে বিহারী গণহত্যা (৩০ হাজার থেকে দেড়লাখ), র’ এর প্রশিক্ষণে মুজিব-বাহিনী, আগরতলা মামলা সব কানেক্ট করে বুঝে নেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে গত ৫০টা বছর বাঙলাভাষী মুসলমানকে কোণঠাসা করে রাখা, আওয়ামী ফ্যাশিবাদ প্রতিষ্ঠা ও লালন, তাদের মতাদর্শের বিপক্ষকে স্বাধীনতাবিরোধী-রাজাকার ট্যাগিং-আদারিং করে আওয়ামী জুলুমকে বৈধতা দান এসব কারা করেছে বলেন? জামাত-শিবির মানেই বাঁচার অধিকার নেই, পাকিস্তান চলে যাও- এসব করে আওয়ামীলীগকে বয়ান সরবরাহ কারা করেছে?

আত্মাকে না ধরে শুধু দেহ সরিয়েছেন আপনারা। প্রেতাত্মা আবার নতুন দেহে ভর করে আসবে/এসেছে। আত্মাটাকে ছাড়িয়েন না। নতুন কোন দেহে ঢুকে আরেকটা মনস্টার তৈরি করবে। অলরেডি শুরু করেছে। শত্রু চেনেন। প্রতিরোধ জারি রাখেন।