আহমদ সিরহিন্দী রহ. এর মেহনত
মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. (১৫৬৪-১৬২৪) এর বয়স ৪৩ বছর যখন আকবর মারা যান। তাঁর জীবনকালটা ছিল (৯৭১-১০৩৪ হি.) ইসলামের ১০০০ বছর পূর্তির সময়টা। নানান ফিতনা ক্রমাগত ইসলামের উপর হামলে পড়ছিল। ইসলামী শরীয়তের প্রয়োজন, অকাট্যতা, প্রযোজ্যতাকে শত দিক থেকে চ্যালেঞ্জ জানানো হচ্ছিল। এমন ক্রান্তিকালে আহমদ সিরহিন্দী রহ. তাঁর সংস্কার মেহনত শুরু করেন। এজন্যই তাঁর উপাধি ‘মুজাদ্দিদে আলফে সানী’ বা ইসলামের ‘দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মুজাদ্দিদ/পুনরুজ্জীবক’। সে সময়কার অবস্থা একটু আলোচনা করে না নিলে পটভূমি বুঝা যাবে না। কী কী ফিতনা সে সময় গ্রাস করছে ভারতের মুসলিমদেরকে।
১.
ইসলামের মূলধারা সে সময় অতিমাত্রায় গ্রীকদর্শন দ্বারা প্রভাবিত, যা শুরু হয়েছে হিজরী ৮ম শতকে বাগদাদে।সবকিছু যুক্তি-বুদ্ধি দিয়েই ফিল্টার হতে হবে।স্বভাবতই যুক্তি-বুদ্ধি বস্তুজগতকে (observable world) অতিক্রম করতে পারে না।ফলে অতিবস্তুবাদী চিন্তা-চেতনা ইসলামের বহু বুনিয়াদী বিষয়কে নাকচ করতে থাকে। [তুলনীয়. আজকের বিজ্ঞানবাদ]
২.
আর ভারতবর্ষে মূলধারা প্রভাবিত ছিল নিওপ্লেটোনিক অতিভাববাদী/মরমিবাদী চিন্তা দ্বারা। এর মূল কথা হল, যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে সত্যকে পাওয়া যাবে না। সত্যকে পেতে হয় অন্তরের আলো দিয়ে; যা অর্জন হবে ধ্যান, নিজেকে কষ্ট দেয়া, কঠোর সংযম ইত্যাদির মাধ্যমে। দৈব অনুভূতি, কাশফ-এসব দিয়ে হাকীকত-মারেফাত পাওয়া যাবে। এর দলিল দিয়ে শরীয়তের বিধি বিধান অগ্রাহ্য করা হতে থাকে।জন্ম নেয় বহু বহু বিদআত। ভারতীয় দর্শনের মিশেলে ‘ওয়াহদাতুল উজুদ’ নামক বিকৃত দর্শন জন্ম নেয়। [তুলনীয়. আজকের ভ্রান্ত সুফিবাদ, গ্রামে গ্রামে ভণ্ডপীর, কোয়ান্টাম মেথড]
৩.
ইরানের নুক্বতাভী (Nuqtawi) আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। যার মূল কথা ছিল, ১০০০ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় শরীয়তে মুহাম্মদী বাতিল হয়ে যাবে। দর্শন ও বুদ্ধিবৃত্তির উপর নতুন শরীয়তের বুনিয়াদ হবে, যা প্রণীত হবে ইরান ও ভারতে। আকবর নিজেও এই আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত ছিল।[তুলনীয়. আজকের মডার্নিস্ট, ফেমিনিস্ট চিন্তা]
৪.
সরকারি কর্মকর্তা ও রাজপুরুষদের মাঝে বিপুল সংখ্যক ইমামিয়া শিয়া ছিল।ফলে তাদের সাহাবিবিদ্বেষী আকিদা-চেতনা, আচার-অভ্যাস মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।[তুলনীয়. আজকের ওরিয়েন্টালিস্টদের লেখাজোখা]
৫.
আকবরের শাসনে ছিল—
- হিন্দু-মুসলিমকে ধর্মীয়ভাবে একত্র করার প্রয়াস।[তুলনীয়. আজকের সেক্যুলারিজম, বাঙালি জাতীয়তাবাদ]
- হিন্দুদের মনোতুষ্টির জন্য হিন্দু উপাদানগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণ [তুলনীয়. আজকের বাংলাদেশ]
- দীন-ই-ইলাহী নামক নতুন ধর্ম তৈরি [তুলনীয়. ইন্টারফেইথ]
- উচ্চপদগুলোতে শিয়া, হিন্দু, মুরতাদদের আধিক্য [তুলনীয়. আজকের বাংলাদেশ]
- মুসলিমদের ধর্মপালনে বাধা প্রদান (আযান, জামাতে নামাজ, রোজা, গরু কুরবানি, হজ্জ, দাড়ি রাখা) [তুলনীয়. বর্তমান]
বর্তমান যুগের সাথে কী পরিমাণ মিল, চিন্তা করে দেখুন। এবার আমরা দেখব, শাইখ আহমাদ কীভাবে তাঁর কাজ শুরু করেছিলেন।
১.
প্রথমেই তিনি ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক ধারাকে ফিরিয়ে আনেন। যুক্তিবুদ্ধিও পরমসত্যে নিতে পারে না, কাশফের ব্যক্তিগত অনুভূতিও দলিল হতে পারে না।পরম সত্য দিতে পারে কেবল নবুওয়াত। নবুওয়াতের এলেমই পারে প্রকৃত সত্যটা জানাতে, স্রষ্টার পছন্দ-অপছন্দ জানাতে। আহলে সুন্নাতের আকীদা-বিশ্বাসকে তিনি মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে বাকিসব খণ্ডন করেন। [প্রচলিত ন্যারেটিভকে খণ্ডন করে আহলুস সুন্নাহর ন্যারেটিভ তুলে ধরা]
২.
১০২৬ হি. থেকে হাতে-গড়া ছাত্রদেরকে খলিফা করে দুনিয়ার নানান স্থানে প্রেরণ করেন।
- মাওলানা কাসিমের নেতৃত্বে ৭০ জন: তুর্কিস্তানে
- মাওলানা ফররুখ হুসাইনের নেতৃত্বে ৪০ জন: আরব-ইয়েমেন-শাম-তুরস্কে
- মাওলানা সাদিক কাবুলীর নেতৃত্বে ১০ জন: কাশগড়ে
- মাওলানা আহমদ বাকীর নেতৃত্বে ৩০ জন: ইরান-খোরাসানে
- খাজা মীর নোমান : দাক্ষিণাত্যে
- শায়েখ বদিউদ্দীন : সাহারানপুরে ও আগ্রাতে শাহী ক্যান্টনমেন্টে
- শায়েখ তাহের লাহোরী: লাহোরে
- নূর মোহাম্মদ পাটনী, মাওলানা আবদুল হাই শাদমানী: পাটনায়
- শায়েখ হামিদ: বাংলায়
- তাহের বাদাখশী : জৌনপুরে
- মাওলানা আহমদ : বারক এলাকায়
- সায়্যিদ মুহিব্বুল্লাহ : মানিকপুরে
ভারতবর্ষে এমন শহর খুবই কম ছিল যেখানে তাঁর কোনো প্রতিনিধি বা দায়ী ইলাল্লাহ বিদ্যমান ছিলেন না। এ কথা সম্রাট জাহাঙ্গীরও নেগেটিভ-ভাবে উল্লেখ করেছেন আত্মজীবনীতে, যেহেতু তখনও জাহাঙ্গীর শায়খের প্রকৃত পরিচয় পাননি।প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তার সাথে তালিম-তরবিয়তে কাজ করেন। মানুষ দলে দলে সঠিক দীনের দিকে ফিরে আসতে থাকে।মুজাদ্দিদ রহ. নিজে পত্র মারফত এসব প্রতিনিধিদের সাথে সংযুক্ত থাকতেন। তাঁর এসব পত্র সংকলিত রয়েছে (Maktubat)। [ট্রেইনিং-এর দ্বারা দাঈ তৈরি যারা বুদ্ধিবৃত্তিক, আধ্যাত্মিক, ইলমীভাবে মজবুত]
৩.
শাইখ আহমদ বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দরবারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপর মেহনত করেন। একের পর এক পত্র লিখে লিখে তিনি তাদেরকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরেন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের দায়িত্ব ও ফরযিয়াতকে স্মরণ করাতে থাকেন। খান-ই-আজম মির্জা আযীযুদ্দিন, খান-ই-জাহান খান লোদী, খানে খানান মির্জা আব্দুর রহীম, মির্জা দারাব, কিলিজ খান, খাজা জাহান, নবাব সৈয়দ ফরিদ প্রমুখের উপর তিনি দাওয়াতী কাজ চালিয়েছেন। কিছু নমুনা দেখা যাক।
৪.
১৬১৯ সালে (১০২৮ হি.) জাহাঙ্গীর তাঁকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে আনেন। শাইখের ঘর-বাড়ি, কুয়া, বাগান, কিতাবপত্র সবকিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরিবার পরিজনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।
১ বছরের কিছু বেশি তাঁকে ‘গোয়ালিয়র দূর্গে’ বন্দি রাখা হয়। বন্দিজীবনে তাঁর যে আধ্যাত্মিক উন্নতি ও নির্জনে আল্লাহর নৈকট্যের যে স্বাদ তিনি পান, তা তিনি বর্ণনা করেছে সেসময়কার চিঠিপত্রে। T.W. Arnold লেখেন:
“সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে (১৬০৫-১৬২৮) শায়খ আহমদ মুজাদ্দিদ নামক একজন সুন্নী আলেম শিয়া আকিদা-বিশ্বাস প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে খুবই বিখ্যাত ছিলেন। সে সময় শাহী দরবারে শিয়াদের অপ্রতিহত প্রভাব ছিল। তারা কোনো এক অজুহাতে তাকে বন্দি করাতে সক্ষম হয়। দু’বছর তিনি বন্দি ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি তার কারাসঙ্গীদের ভেতর থেকে শত শত মূর্তিপূজককে ইসলামে দীক্ষিত করেন”।
গ্রেপ্তারির পিছনে আরও যেসব কারণ থাকতে পারে বলে ইতিহাসবিদগণ মনে করেন:
- শায়খের কর্মতৎপরতাকে ক্ষমতার জন্য হুমকি মনে করা।
- খলিফাদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত চিঠিগুলোর বাতেনী অভিজ্ঞতাগুলোকে দীনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখানো হয়েছে।
- সম্রাটকে কুর্নিশ করতে অস্বীকার করা।
১৬২০ সালের মে মাসে তিনি কারামুক্ত হন। জাহাঙ্গীর তাঁকে অফার করেন, সিরহিন্দে ফিরে যাবেন, নাকি এখানেই থাকবেন? তিনি জাহাঙ্গীরের কাছাকাছি থাকাকে বেছে নেন।
৫.
এ সময় জাহাঙ্গীরের দরবারে কয়েক পর্বে সম্রাটের সাথে শাইখের সাক্ষাত হয়। কুরআন পাঠ ও ব্যাখ্যা করে শোনান, শরীয়ার মূলনীতি ও বিধান বিস্তারিত জানান।[1] শাইখ নিয়মিত দরবারে বিতর্কে অংশ নিতেন এবং দরবারে প্রচলিত নানান মতবাদ ও জাহেলি রীতিনীতির খণ্ডন পেশ করতেন।[2] এসবের প্রভাব পড়ে সম্রাটের উপর।
এই চিঠিপত্রগুলো এবং নসীহার ফলাফল কী ছিল, সেটা বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে জাহাঙ্গীরের মাঝে পরিবর্তনের কাহিনীগুলো। জাহাঙ্গীর ক্ষমতায় বসেন অক্টোবর, ১৬০৫ সালে।
- English East India Company-র প্রতিনিধি Sir William Hawkins জানাচ্ছেন: তিনি জাহাঙ্গীরকে ফজরের নামায পড়তে দেখেছেন।[3]
- হিন্দু ইতিহাসবিদরা উল্লেখ করেছেন: জাহাঙ্গীর একজন মুসলিম বাদশাহ হিসেবে তাঁর কর্তব্যের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন।[4] ‘তিনি ইসলামের ভবিষ্যত নিয়ে বাপের চেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন এবং ইসলামের সম্মানকে উচ্চকিত করার চেষ্টা করতেন।[5]
- কাংড়া দূর্গ জয়ের পর (১৬২১ সালে), শাইখ আহমাদকে দাওয়াত করে নেন। তাঁর উপস্থিতিতে প্রতিমা চূর্ণ করেন, গরু জবাই করেন, খুতবা পাঠ করেন এবং ইসলামী রীতিনীতি পালন করেন।[6]
- একই বছর হিন্দু-মুসলিমে বিবাহ নিষিদ্ধ করেন।
- পর্যটক Terry (১৬১৬-১৬১৯ ভারত ভ্রমণ করেন) জানাচ্ছেন: মসজিদগুলো মুসল্লিতে পরিপূর্ণ। মুসলমানদের হাতে হাতে তসবীহ, কুরআন-হাদিসে অপার ভক্তি, রোজা-ঈদে অভ্যস্ত।[7]
- আকবরের দেয়া বিয়ের বয়সসীমা রদ করা হলো।
- Stanly Lane Poole জানাচ্ছেন, আকবর যে হিজরী সাল পরিত্যাগ করেছিল, জাহাঙ্গীর আবার সেটা প্রতিষ্ঠা করেন। [8]
- পরিত্যক্ত মসজিদগুলোকে আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়, দীনী ইলম শিক্ষাকে আবার উৎসাহিত করা হয়। [9]
দেখুন, ১০-১৫ বছরের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী প্রশাসন সংশোধন হয়ে গেছে। প্রতিমা ভেঙে গরু জবাই দিয়ে হিন্দুদের দূর্গ বিজয় হচ্ছে। আমরা কি তবে শাইখ মুজাদ্দিদের মেহনতকে রাজনীতি বলব না? এটা কি ইসলামী রাজনীতি না? ক্ষমতার জায়গায় ইসলামকে প্রতিষ্ঠার যেকোনো মেহনতই ‘ইসলামী রাজনীতি’। ইসলামী ‘রাজনীতি’র প্রচলিত সংজ্ঞা পরিবর্তন হওয়া জরুরি। ভোট-মিছিলই রাজনীতি; অন্য কোন কিছুই রাজনীতি নয়- এই চিন্তা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত।
৬.
শাইখ রহ. আগ্রায় শাহী সেনানিবাসে অবস্থান করেন বেশ কিছুদিন। তিনি নিজ পুত্রদের উদ্দেশ্য করে পত্রে লেখেন:
সেনা শিবিরে এভাবে স্বার্থলেশহীনভাবে থাকাকে আমি খুবই দুর্লভ সম্পদ মনে করছি এবং এখানকার একটি মুহূর্তকে অন্য যেকোনো স্থানের সহস্র মুহূর্তের তুলনায় শ্রেয় জ্ঞান করছি।
Ahmed, Maktubat Imam Rabbani, vol.III, Letter 43
কী বিষয়ে আলোচনাগুলো হত। চলুন দেখা যাক:
“আল্লাহ পাকের অপার রহমতে ঐসব মজলিসে সেইসব কথাবার্তাই আলোচিত হয়, যা একান্ত বৈঠকে ও নিভৃত মাহফিলে আলোচিত হয়ে থাকে। একটি বৈঠকের অবস্থা লিখতে গেলেও বিরাট ভলিউমের দরকার পড়বে।
Ahmed, Maktubat Imam Rabbani, vol.III, Letter 106
আর্মির সামনে, ক্ষমতাসীনদের সামনে আংশিক দীনের দাওয়াত দিতেন? দীনের নাজুক বিষয়ে কথা বলার সময় কাটছাঁট করতেন? তিনি অপর এক পত্রে লেখেন:
“আল্লাহ তাআলার অপার অনুগ্রহে ধর্মীয় ব্যাপারে ও ইসলামের মূলনীতি বিষয়ে আলোচনায় কোনোরূপ ছাড় প্রদানের কিংবা সমঝোতার অবকাশ পড়ে না”।
Ahmed, Maktubat Imam Rabbani, vol.III, Letter 106
এই অটল আপোষহীন মেহনতের ফল হল— খাজা হুসসামুদ্দীনকে লিখিত অপর এক পত্রে শাইখ বলেন,
“আমার পুত্র ও সঙ্গী-সাথীদের যারাই আমার সাথে রয়েছে তারা আধ্যাত্মিক পথে দ্রুত উন্নতি করেছে। তাদের উপস্থিতির দরুন এই সেনাছাউনি যেন খানকায় পরিণত হয়েছে।
Ahmed, Maktubat Imam Rabbani, vol.III, Letter 72
উপসংহারটা পরে লিখব বড় করে ইনশাআল্লাহ… এখানে মাঝে মাঝে চোখ রাখবেন পাঠক।
[1] Ahmed, Maktubat Imam Rabbani, vol.III, Letter 43
[2] Hasan Murtaza (1946). “7. Letters of Sheikh Ahmad. (A New Source of Historical Study) [1563—1624 A. D.]”. Proceedings of the Indian History Congress. 9: 273–281.
[3] Clements, Hawakin voyager,436.
[4] Roy,The State and Religion in Mughal India,101.
[5] Sirvastava,The Mughal Empirer,293.
[6] Jehangir,Tazuk–e– Jehangere,240
[7] Foster, Early Travels in India,315
[8] Elphinstone,Nurjahan and jehangir,78
[9] Aslam, Sarmayah Umar,128