মুসলিমবঙ্গের জমিদারগণ


৩৩৩ জনের মধ্যে ৩৪ জন মুসলিম (১০%)। ৯০% জমিদার হিন্দু। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ৮০% ছিল মুসলিম। রেখে দিলাম। কখনও কোনো কাজে লেগে যাবে।

 অমৃত নগর জমিদারবাড়ি 
 অতুল কৃষ্ণ রায় চৌধুরীর জমিদার বাড়ি (বর্তমানে মৈশান বাড়ি নামে পরিচিত) 
 অভিমন্যুর জমিদার বাড়ি 
 অলোয়া জমিদার বাড়িপ্রায় ১৮০০ শতকে জমিদার সচী নাথ রায় চৌধুরী বর্তমান টাঙ্গাইল সদরের পৌরসভা এলাকায় ১৩২ শতাংশ জমির উপর এই অলোয়া জমিদার বাড়িটি স্থাপন করেন। এরপর বংশপরামপণায় জমিদার বংশধররা এখানে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। শেষ জমিদার ছিলেন কনক লতা রায় চৌধুরী। তিনি তার পরিবার নিয়ে ১৯৫০ সালে ভারতে চলে যান।
 আঠারবাড়ী জমিদার বাড়িময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামের নাম আঠারবাড়ী। গোড়াপত্তনকারী হচ্ছেন দ্বীপ রায় চৌধুরী। দ্বীপ রায় চৌধুরী মূলত যশোর জেলার বাসিন্দা ছিলেন। দ্বীপ রায় চৌধুরী যশোর জেলার একটি পটরগনার জমিদার ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার শীবগঞ্জে এসে এই জমিদারি ক্রয় করেন। এই শীবগঞ্জের বর্তমান নামই আঠারবাড়ী। দ্বীপ রায় চৌধুরী এখানে আসার সময় তার জমিদার বাড়ির কাজকর্ম করার জন্য আঠারটি হিন্দু পরিবার নিয়ে আসেন এবং তাদেরকে বাড়ি করে দেন। যার কারণেই এই গ্রামের নাম পরবর্তীতে আঠারবাড়ী নামে পরিচিত হয়ে উঠে। দ্বীপ চৌধুরীর জীবননাশের পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারি পান তার পুত্র সম্ভুরায় চৌধুরী। কিন্তু তার কোনো পুত্র সন্তান হয়নি। তাই তিনি প্রমোদ রায় নামের এক ব্রাহ্মণকে এনে লালন পালন করেন। পরে ব্রাহ্মণ প্রমোদ রায় চৌধুরীই এই জমিদার বাড়ির জমিদার হন।
 আদাঐর জমিদার বাড়ি 
 আজিম চৌধুরীর জমিদার বাড়ি (দুলাই)সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামে প্রায় ২৫০ বৎসর আগে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িটির মূল গোড়াপত্তনকারী হচ্ছেন জমিদার আজিম চৌধুরীর পিতা রহিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনিই এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। জমিদার বাড়িটি আজিম চৌধুরীর নামে হওয়ার কারণ হল। তিনি যখন এই জমিদার বাড়ির জমিদারি পান তখনই এই জমিদার বাড়িটি বিস্তার লাভ করে। তিনি তার জমিদারির সময় ৩টি নীল কুঠি স্থাপন করেন দুলাই গ্রামে। আরেকটি জমিদার বংশ ছিল। যা ছিল হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর জমিদার বংশ। হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর সাথে এই মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।
 আড়াপাড়া জমিদার বাড়িপ্রায় একশত সতেরো বছর আগে সাভার উপজেলার আড়াপাড়া নামক জায়গা এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়।  মূল প্রাসাদটিতে লেখা রয়েছে রাই শশী নিবাস। [২] আর পরবর্তীতে যে প্রাসাদ তৈরি করা হয়েছিল সেটিতে লেখা রয়েছে রাই নিকেতন।
 আটঘড়িয়া জমিদার বাড়িসিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। জমিদার বাড়িটি জমিদার উৎসব নারায়ণ চক্রবর্তী ১৭০০ শতাব্দীর দিকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এরপর একাধারে তার বংশধররা উক্ত জমিদারীর জমিদারী পরিচালনা করেছেন। তাদের জমিদারী ছিল র মধ্যে আটঘড়িয়াসহ, রায়গঞ্জ, তাড়াশ, সলঙ্গা এবং শেরপুরে। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হলে জমিদার বংশধররা ভারতে চলে যান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদার বংশধর হিমেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী এখানে আসেন। পরে আবার ভারতে চলে যান।
 আমিরগঞ্জ জমিদার বাড়িনরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ গ্রামে অবস্থিত। তিন ভাই জমিদার সদর উদ্দীন ভূইয়া, হাজী মহব্বত আলী ভূইয়া ও হাজী মুন্সী সায়েবুল্লাহ ভূইয়া মিলে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। এই জমিদার বাড়ির ভবন তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯১৯ সালে এবং শেষ ১৯২৫ সালে। এই তিন জমিদার পাট ও ঠিকাদারি ব্যবসা করতেন।
 ইলিশিয়া জমিদার বাড়ি 
 ইসহাক জমিদার বাড়িবাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইসহাক চৌধুরী। মনির উদ্দিন ভূঁইয়া ছিলেন এই বাড়ির প্রথম স্থপতি। তিনি জমিদার ইসহাক চৌধুরীর দাদা। পরে জমিদার ইসহাক চৌধুরী ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে এই বাড়িতে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই পরবর্তীতে এই জমিদার বাড়িটি ইসহাক জমিদার বাড়ি নামে পরিচিতি পায়।
 ইটাকুমারী জমিদার বাড়িরংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। পুরো ভারতবর্ষের মধ্যে এই ইটাকুমারী এলাকাটি উন্নত শিক্ষা ও সংস্কৃতিময় এলাকা ছিল। তাই এটিকে অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় নবদ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ইটাকুমারীর জমিদার ছিলেন রাজা রঘুনাথ চন্দ্র রায় (যিনি রাজা শিব চন্দ্র রায়ের পিতা)। তিনি এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তার ছেলে শিব চন্দ্র রায় এই জমিদার বাড়ি থেকেই রংপুরের কৃষক প্রজা বিদ্রোহ পরিচালনা করেন। ১৭৮৩ সালে রংপুরের  ঐতিহাসিক প্রজা বিদ্রোহ ইটাকুমারী রাজা শিব চন্দ্রের বাড়ী থেকে সংঘটিত হয়েছিল। ১৭৮৩ সালে বৃটিশ বিরোধী শীব চন্দ্র ও দেবী চৌধুরানী প্রজা বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়ে  দেবী সিংহের অত্যাচার থেকে রংপুরের কৃষক প্রজাদের রক্ষা করেছিলেন।
 ঈসা খাঁ জমিদার বাড়ি (সরদার বাড়ি)নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় অবস্থিত। ১৬০০ শতাব্দীর দিকে ২৭৪০০ বর্গফুট জায়গার উপর ঈশা খাঁ এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। যা স্থানীয়ভাবে বড় সরদার বাড়ি নামে পরিচিত। ঈসা খাঁ ছিলেন বাংলার স্বাধীন বারো ভূঁইয়া বা জমিদারদের প্রধান জমিদার। ঈসা খাঁর শাসনামলেই নারায়ণগঞ্জের ঐতিহাসিক পানাম নগরসহ আরো দুটি সুন্দর নগরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
 উজানচর জমিদার বাড়ি[১] 
 উলপুর জমিদার বাড়িগোপালগঞ্জ জেলার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ১২নং উলপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়ায় অবস্থিত। তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের নির্মিত ৩৬০টি জমিদারি ভবন। প্রায় ২০০ একর জায়গা নিয়ে আনুমানিক ১৯০০ শতকের দিকে জমিদার প্রীতীশচন্দ্র রায় চৌধুরী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায় তিনি ছিলেন একজন রাজকর্মচারী। অতি সম্প্রতি জমিদার প্রীতিশ রায় চৌধুরীর উত্তরসূরী নাতি মৃনাল কান্তি রায় চৌধুরী তার পূর্ব পুরুষের জমিদারি স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং এ মর্মে তিনি কতগুলো জমিদারি ভবন পুনঃ সংস্কার করেন এবং একই সাথে কয়েকটি ভবন সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করেন।
 উলানিয়া জমিদার বাড়িবরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার অন্তর্ভুক্ত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে অবস্থিত। আনুমানিক ১৭০০ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই জমিদার বাড়ির বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সুবেদার হানিফ। ইনি ভারতীয় বংশধর ছিলেন না। ইনার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন পারস্যের। সুবেদার হানিফ সৈনিক পদে চাকরি করতেন। এই মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় তখন ওলন্দাজ দস্যু দল, মগ ও ফিরিঙ্গিদের অত্যাচারে জর্জরিত ছিল। যা সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তখন সুবেদার হানিফের উপর দ্বায়িত্ব আসে এদেরকে প্রতিহিত করার। তখন তিনি শক্ত হাতে তাদেরকে দমন করেন এবং এখানে বসতি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তার বংশধররা এখানকার জমিদার হন।
 উত্তর তেতাভূমি জমিদার বাড়ি 
 এলেঙ্গা পুরনো জমিদার বাড়ি 
 একরাম আলী হাওলাদারের জমিদার বাড়ি 
 কড়ৈতলী জমিদার বাড়ি (বাবুর বাড়ি)চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত ফরিদগঞ্জ উপজেলার। প্রায় আটশতক আগে বরিশাল জেলার অধিবাসী বাংলা ১২২০ সালে হরিশ চন্দ্র বসু নামের একজন এই কড়ৈতলী জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন করেন। এই হরিশ চন্দ্র বসু দের আগের পদবী ভট্টাচার্য্য ছিল। পরবর্তী কালে তা হরিশ চন্দ্র বসু নিজে পরিবর্তন করে বসু পদবী ব্যবহার শুরু করেন। তিনি নিলামের মাধ্যমে এই জমিদারি ক্রয় করেন। তিনি প্রায় সত্তর বছর ধরে এই জমিদার বাড়ির জমিদারি করার পর মৃত্যুবরণ করেন। শত বছর বয়সে ১২৯০ বঙ্গাব্দে পরলোকগমণ করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘসময় ধরে তার উত্তরসূরীরা এখানকার জমিদারি করেন। এই জমিদাররা ছিলেন অনেক অত্যাচারী। এই জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে সাধারণ মানুষ জুতা পায়ে দিয়ে ও ছাতা মাথায় দিয়ে হাটতে পারতোনা। এই বংশের সবচেয়ে অত্যাচারী জমিদার ছিলেন উমেশ চন্দ্র বসু।উমেশ চন্দ্র বসু ব্রিটিশ সরকারের থেকে পাওয়া উপাধি বিশ্বাস নিজেদের নামের শেষে ব্যবহার করা শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে উমেশ চন্দ্র বসু-র পুত্র যজ্ঞেশ্বর বিশ্বাস জমিদারি প্রথা এগিয়ে নিয়ে যান।তার দুই ছেলে হয়। বড়ো ছেলে বিনয়ভূষণ বিশ্বাস যিনি হরিপদ বিশ্বাস নামেও খ্যাত ছিলেন এবং ছোটো ছেলে ছিলেন গোবিন্দ বসু ,যিনি ব্রিটিশ দের দেওয়া উপাধি ব্যবহার করবেন না বলে নিজেদের পদবী বসু পদবী ব্যবহার করতেন। সেই সময়ে জমিদার বাড়ীর ওপরে শত্রু দের আক্রমণ ঘটলে বিনয়ভূষণ বিশ্বাস নিজের স্ত্রী ,পুত্র ও তার একমাত্র কন্যা কে নিয়ে প্রথমে ঢাকা জেলার অন্তর্গত কলাগাছিয়া গ্রামে কিছুকালের জন্য আত্মগোপন করে থাকেন। ভারতবর্ষ ভাগের পরপরে ইংরেজি ১৯৪৮ সালে তিনি নিজের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায় বসবাস শুরু করেন। ভারতবর্ষ ভাগের পর ইংরেজি ১৯৫১ সালে শেষ জমিদার গোবিন্দ বসুর হাত ধরেই এই জমিদার বাড়ির পতন ঘটে।
 কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িবরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি জেলায় কীর্ত্তিপাশা গ্রামে অবস্থিত। প্রায় একশ বছর আগে। বিক্রমপুর জমিদারের বংশধরের কিছু অংশ প্রায় ১৯ শতকের শেষ সময়ে ঝালকাঠি জেলার কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুর জমিদার বংশের রাজা রাম সেনগুপ্ত এই কীর্ত্তিপাশা গ্রামে আসেন। এখানে তিনি তার দুই ছেলের জন্য দুইটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এই জমিদার বংশের দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন রোহিণী রায় চৌধুরী ও তপন রায় চৌধুরী।
 কাশিমপুর জমিদার বাড়িগাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর নামক স্থানে অবস্থিত। এই বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জমিদার (ব্রিটিশ সরকারের কাছে রায় বাহাদুর উপাধি পাওয়া) কেদারনাথ লাহিড়ী। তার জমিদারী আওতায় পুরো কাশিমপুর ও বলধা এলাকা জুড়ে ছিল। এই জমিদার বাড়ির শেষ জমিদার ছিলেন আনামী প্রাসাদ রায় চৌধুরী।
 কমলা বাড়ি estate সিলেট পঞ্চখণ্ড 
 কনা মিঞা চৌধুরী জমিদার বাড়ি, বিরাইমাবাদ, মৌলভীবাজার, সিলেট 
 কানসাটের জমিদার বাড়িচাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা হলেন সূর্যকান্ত, শশীকান্ত ও শীতাংশুকান্ত। এই জমিদাররা ছিলেন মুসলিম বিদ্বেষী। জমিদারদের মধ্যে মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে তাদের পরিচিতিটা বেশি ছিল। তারা ১৯৪০ সালে মুসলিমদেরকে উচ্ছেদ করার কাজে লিপ্ত হয় পড়ে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হয়। পরে শ্যামপুর চৌধুরী বাড়ির নেতৃত্বে বাজিতপুর গ্রামের ১২টি ইউনিয়নের মুসলমানরা একসাথে হয়ে এর তীব্র আন্দোলন প্রতিবাদ জানায় এবং জমিদার বাড়ির বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। তার ফল স্বরূপ কানসাটের জমিদার শীতাংশু বাবু মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চান। এইভাবে এই জমিদারদের ইতিহাস মানুষের মনে গেঁথে আছে। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর জমিদার প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও পতন হয়।
 কাইতলা জমিদার বাড়ি[১]ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ২০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত। কাইতলা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী। বিশ্বনাথ রায় চৌধুরী ছিলেন ভারতের কলকাতার শিমগাঁওয়ের বাসিন্দা। জমিদার বিশ্বনাথ রায় চৌধুরীর তিন ছেলে ছিল। তিন ছেলের নাম – তিলক চন্দ্র রায় চৌধুরী, অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরী ও ঈশান চন্দ্র রায় চৌধুরী। নবীনগর উপজেলায় এখনো এই কাইতলা জমিদারদের কিছু স্মৃতি রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অভয়নগর গ্রাম, যা অভয় চন্দ্র রায় চৌধুরীর নামানুসারে করা হয়েছে। তারপর মেহেরী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম ঈশান নগর, যা ঈশান চৌধুরীর নামানুসারে করা হয়েছে। এবং কাইতলা যজ্ঞেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়, যা ঈশান চৌধুরীর ছেলে যজ্ঞেশ্বরের নামানুসারে করা হয়েছে। আবার যজ্ঞেশ্বরের স্ত্রী সুখমনি রায়ের নাম একটি দীঘি রয়েছে।
 কাকিনা জমিদার বাড়িরংপুর বিভাগের অন্তর্গত লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। প্রায় চারশত বছর আগে ১৬৮৭ সালে এই কাকিনা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাকিনার এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে এটি ছিল একটি চাকলা। যা ছিল কোচবিহার রাজ্যের মহারাজা মোদ নারায়ণের অধীনে। তখন এই কাকিনা চাকলার চাকলাদার ছিলেন ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী। ১৬৮৭ সালে ঘোড়াঘাটের ফৌজদার এবাদত খাঁ কোচবিহারের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তার পরীপ্রেক্ষীতে রঘু রামের দুই পুত্র রাঘবেন্দ্র নারায়ণ ও রাম নারায়ণ ফৌজদারের পক্ষে চলে যায়। রাঘবেন্দ্র নারায়ণ ও রাম নারায়ণ পিতা রঘু রাম ছিলেন চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ণ চত্রুবর্তীর কাকিনা চাকলার সাধারণ কর্মচারী। মোগলদের এই অভিজানে কোচবিহাররা পরাজিত হয় এবং মোগলদের জয় হয়। তখন তারা চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তীকে চাকলাদার থেকে বহিষ্কার করেন। তারপরে রঘু রামের দুই পুত্র রাঘবেন্দ্র নারায়ণকে পরগনা বাষট্রি ও রাম নারায়ণকে পরগনা কাকিনার চৌধুরী নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে এই কাকিনা জমিদার বাড়ির জমিদার বংশধররা দীর্ঘদিন জমিদারি করার পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারির পতন হয় জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জনের জমিদারির সময়। তার বিশাল ব্যয় ও বিলাসিতার কারণেই মূলত ধ্বংসের কারণ। মহাজন ও সরকারি রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯২৫ সালে তার জমিদারি নিলাম হয়ে যায়। জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জন জমিদার এর অবশিষ্ট বংশধর পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সর্বশেষ হামিদা খাতুন গংগাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কামদেব শেখপাড়া গ্রামে তার স্বামীর বাড়ীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হামিদা খাতুন এর বড় ছেলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন এর বর্তমান চেয়ারম্যান মোছাদ্দেক আলী আজাদ। ১৮৪৯ সালে এই জমিদার বাড়ির জমিদারি পাওয়া শম্ভুচরণ রায়। তিনি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন ১৮৬০ সালে, যার নাম দেওয়া হয় ‘রঙ্গপুর প্রকাশ।’ এটিই হলো রংপুর জেলার প্রথম পত্রিকা। আর একটা হাসপাতাল তৈরি করেন। নাম দেন ‘শম্ভুচরণ চ্যারিটাবল হসপিটাল’। পরবর্তীকালে সেটা রাণী শান্তিবালা চ্যারিটাবল হসপিটাল নামে পরিচিতি লাভ করে। এই হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোর সেবার ব্যবস্থা ছিলো। তারপর ওনার দত্তক পুত্র মহিমা রঞ্জন রায় জমিদারি পাওয়ার পর ১৯০৮ সালে বগুড়ার ‘উডবার্ণ’ লাইব্রেরী, রংপুর জেলার রেলপথ, রেল স্টেশন ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। দুটি রেল স্টেশন মহেন্দ্রনগর ও মহিমাগঞ্জ তার নিজের এবং পুত্রের নামে করেন। এছাড়াও রংপুর শহরে ‘কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়’ ও ‘মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়’ (হাই ইংলিশ স্কুল) তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে।
 কলসকাঠী জমিদার বাড়িবরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার। প্রায় তিনশতক আগে এই কলসকাঠী জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন জমিদার রামাকান্তের পুত্র। আর এই রামাকান্ত ছিলেন গারুড়িয়ার জমিদার। জানকী বল্লভ রায় চৌধুরীরা ছিলেন দুই ভাই। তিনি ছিলেন ছোট। আর বড় ভাই ছিলেন রাম বল্লভ। বড় ভাই ছোট ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মূলত এই জমিদারির জন্যই এই হত্যার পরিকল্পনা। ছোট ভাই অর্থাৎ জানকী বল্লভ রায় চৌধুরী তার বৌদির মাধ্যমে এই ব্যাপারটি জানতে পারে। পরে রাতের আঁধারে তিনি মুর্শিদাবাদে চলে যান এবং সেখানে নবাবের কাছে এই বিষয়ে বলেন। তখন মুর্শিদাবাদের নবাব তাকে অরংপুর পরগনার জমিদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। জমিদারি পেয়ে তিনি কলসকাঠীতে এসে বসতি স্থাপন করেন। আর এইভাবেই কলসকাঠীতে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ১৩ জন জমিদারের বাস ছিল। আর তাদের আলাদা আলাদা জমিদার বাড়ি ছিল। যারা মূলত এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী জানকী বল্লভ রায় চৌধুরীর বংশধর ছিল। তারা এই এলাকার প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন।
 করটিয়া জমিদার বাড়িটাঙ্গাইল জেলার অন্তর্ভুক্ত করটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত। “আটিয়ার চাঁদ” নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, আফগান অধিপতি সোলায়মান খান পন্নী কররানির ছেলে বায়েজিদ খান পন্নী ভারতে আগমন করেন। তার পুত্র সাঈদ খান পন্নী আটিয়ায় বসতি স্থাপন এবং ১৬০৮ খ্রিঃ সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে আটিয়ার বিখ্যাত মসজিদ নির্মাণ করেন। এই বংশেরই ১১তম পুরুষ সা’দত আলী খান পন্নী টাঙ্গাইলের করটিয়ায় এসে পন্নী বংশের ভিত প্রতিষ্ঠা করেন। পন্নী পরিবারের ১৩তম পুরুষ দানবীর জমিদার আটিয়ার চাঁদ হিসেবে খ্যাত ওয়াজেদ আলী খান পন্নী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে ১৯২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর কারা অবরুদ্ধ হন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার অনমনীয় মনোভাব ও দৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ আজও লন্ডন মিউজিয়ামে সংরক্ষিত ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর তৈলচিত্রের নিচে লেখা রয়েছে ‘ওয়ান হু ডিফাইড দি ব্রিটিশ।’ ১৯২২ সালে জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি সমাজ ও শিক্ষা সংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন এবং বাংলার আলীগড় নামে খ্যাত ১৯২৬ সালে করটিয়ায় সা’দত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
 কার্তিকপুর জমিদার বাড়িশরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কার্তিকপুর গ্রামে অবস্থিত। আগে বিক্রমপুরের জমিদারীর আওতাভুক্ত ছিল। বিক্রমপুরের জমিদারীর পাঁচজন সেনাপতি ছিল। যাদের মাঝে পরবর্তীতে বিক্রমপুরের জমিদারীকে তিন ভাগ করে দিয়ে দেন বিক্রমপুরের জমিদার। যার ফলস্বরূপ কার্তিকপুরের জমিদারী পান কমলশরন ও শেখ কালু। পরবর্তীতে শেখ কালুর মেয়ের সাথে মোঘল সাম্রাজ্যের এক সেনাপতি ফতেহ মুহাম্মদের বিবাহ হয়। মূলত ঐখান থেকে উক্ত জমিদার বংশের সূচনা হয়।
 কোকিলপেয়ারি জমিদার বাড়িঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আনুমানিক ১৮০০ শতকে জমিদার ব্রজেন কুমার প্রায় ৪ একর জায়গার উপর এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই জমিদারের আরেক নাম হচ্ছে সুদর্শন রায়।
 কল্যান্দি জমিদার বাড়িনোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে অবস্থিত।  এই বাড়িটি দুই জমিদার মিলে প্রতিষ্ঠা করেছেন। জমিদার রামেন্দ্র রায় চৌধুরী ও জমিদার কাঙালি রায় চৌধুরী ১৮০০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারা প্রজাদের কল্যাণে অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করে গেছেন। জমিদার রামেন্দ্র রায় চৌধুরী তার নামানুসারে নোয়াখালী জেলায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার এইরকম বিভিন্ন ধরনের সাহসী উদ্যোগের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন। এই জমিদারদের অধীনে মোট ১৯টি তালুক ছিল। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বংশের অনেকেই ভারতে চলে যান। এখনও জমিদার বংশের কয়েকজন এখানে বসবাস করতেছেন।
 করপাড়া জমিদার বাড়ি 
 কামানখোলা জমিদার বাড়িলক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কামানখোলা নামক স্থানে অবস্থিত।  প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে জমিদার রাজেন্দ্র নাথ দাস তা জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে এখানে জমিদার বংশের ক্ষেত্রনাথ দাস, যদুনাথ দাস এবং হরেন্দ্র নারায়ন দাস এখানে জমিদারী পরিচালনা করেন।
 কোদলা চারআনী জমিদার বাড়ি 
 কানাইপুর জমিদার বাড়িফরিদপুর জেলার, ফরিদপুর সদর উপজেলার, কানাইপুর ইউনিয়নের, কুমার নদীর পাড়ে অবস্থিত। ৪০০ শত বছর আগে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জমিদার বংশের রাণী ভবতারিণী শিকদার সুশাসক ছিলেন। জমিদার হিসেবে শিকদার বংশের উন্নতি শুরু হয় ভবতারিনী শিকদারের আমল থেকে। বিধবা রানী ভবতারিণী তার একমাত্র সন্তান সতীশ চন্দ্র শিকদার এবং অপর এক বিপত্নিক কর্মচারীর সহায্যে তার জমিদারি পরিচালনা করতেন। তবে রাণী ভবতারিণীর এই একমাত্র পুত্র সুশাসকের চাইতে উদ্ধত, অহংকারী এবং কুটনৈতিক হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীকালে সতীশ চন্দ্র শিকদারের দুই পুত্র সুরেন্দ্র নাথ শিকদার এবং নিরদবরন শিকদারের মধ্যে জমিদারি ভাগাভাগি হয়ে যায় এবং সুরেন্দ্র নাথ বড় সন্তান হিসেবে জমিদারীর সিংহভাগ মালিকানা লাভ করে। সুরেন্দ্র নাথের অকাল মত্যুর পরে তার স্ত্রী রাধা রানী শিকদার জমিদারি পরিচালনা করা শুরু করেন। রাধা রানী শিকদারের মত্যুর পর পুত্ররা কলকাতায় অভিবাসন করেন এবং অর্থনৈতিক ভাঙ্গনের কারণে এক সময়ে এই জমিদারি সরকার বাজেয়াপ্ত করে নেয়।
 কাদিয়া বাড়ি ঢিবিজয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলায় অবস্থিত। অনেকের মতে রাজা লক্ষ্মণসেন এর নির্মাতা।
 কাদিরপাড়া জমিদার বাড়ি 
 কুলপদ্দি জমিদার বাড়িমাদারীপুর জেলার মাদারীপুর পৌরসভার। কুলিন বংশের এক হিন্দু ভদ্রলোকের নাম অনুসারে এই অঞ্চলকে “কুলপদ্দি” নাম রাখা হয়। আদিকাল থেকে এই জায়গায় বেশির ভাগ লোকই পেশায় ছিল বণিক। সেই ধনী বণিকদের মধ্যে শশী রায় ছিলেন অন্যতম। শশী রায় (১৩৩৯ বঙ্গাব্দে ইংরেজি ১৯৩২) সালে এই কুলপদ্দি জমিদার বাড়িটি স্থাপন করেন এবং তার পাশাপাশি দুই ভাই স্বধন সাহা এবং স্বাধু সাহা আরোও দুটি বাড়ি স্থাপন করেন যা “সাহা বাড়ি” নামে স্থানীয় লোকদের কাছে পরিচিত ছিল।
 নিবারনচন্দ কুন্ডু জমিদার বাড়ি(শুক্তাগড়) 
 কুমারী সাহা জমিদার বাড়িচুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী নামক গ্রামে অবস্থিত।
 কালু মিঞা চৌধুরীর জমিদার বাড়ি 
 কুমুদরঞ্জন চৌধুরীর জমিদার বাড়ি 
 কালীদহ বরদা বাবু জমিদার বাড়িফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলার কালীদহ ইউনিয়নে অবস্থিত। জমিদার বরদা প্রসন্ন দাস ফেনী সদর উপজেলার কালীদহ ইউনিয়নে ১৮৬০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন।
 কেশরনগর জমিদার বাড়ি 
 খানসামা জমিদার বাড়িদিনাজপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত খানসামা উপজেলায় অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং কোনো জমিদারের ইতিহাসে নাম না থাকলেও শেষ জমিদারের রয়েছে। শেষ জমিদারের নাম জয়শঙ্কর। তার নামানুসারে এই এই গ্রামের নামকরণ করা হয় জয়গঞ্জ। পরবর্তীতে দেশ ভাগের আগেই জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর শেষ জমিদার জয়শঙ্কর প্রায় ১০০ একর জমি এবং জমিদার বাড়িটি রেখে ভারতের শিলিগুড়িতে চলে যান।
 খালিয়া জমিদার বাড়িমাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার খালিয়া নামক গ্রামে অবস্থিত। আনুমানিক ১৭০০ শতকের দিকে এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন। মূলত এই জমিদারীটি আগে উজানি জমিদারদের ছিল। তাদের মোট সাতটি জমিদারী ছিল। উজানির জমিদার এই সাতটি জমিদারী থেকে একটি জমিদারী অর্থাৎ খালিয়া জমিদারীটি রাজারাম রায়কে দান করে দেন। এখানকার জমিদাররা ছিলেন প্রচণ্ড প্রতাপশালী। ওই সময়ে জমিদারদের বাড়ির কাছ ঘেঁষে জনসাধারণের চলা চল নিষিদ্ধ ছিল। এই জমিদার বংশের মধ্যে জমিদার রাজা রামমোহন রায় চৌধুরীই ছিলেন ইতিহাসখ্যাত একজন জমিদার। তিনি তার জমিদারী আমলে প্রজাদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তার আমলে তৈরি করা একটি মন্দির যা তার নামে রাজারাম মন্দির হিসেবে পরিচিত। এবং রাজারাম ইনস্টিটিউট নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
 খলিষখালী জমিদার বাড়ি 
 গোড়াই জমিদার বাড়ি 
 গোপালদী জমিদার বাড়িনারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত আড়াইহাজার উপজেলার। প্রায় একশত বছর আগে এই গোপালদী জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। এই জমিদার বাড়িটি আবার সদাসদী জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত। এই গোপালদী এলাকায় ৩ জন জমিদার ছিলেন আর ৩ জন ছিলেন ৩ বংশের। জমিদার বংশগুলো হলো – সর্দার, তেলি ও ভূঁঞা। এই ৩ বংশের জমিদারের মধ্যে সবচেয়ে বড় জমিদার ছিলেন সর্দার বংশধররা। সর্দার বংশের জমিদার ছিলেন শ্রী প্রসন্ন কুমার সর্দার। আর তারা ছিলেন ৩ ভাই। জমিদার শ্রী প্রসন্ন কুমার সর্দারের এক ভাইয়ের নাম ছিলো মরিন্দ্র কুমার সর্দার আর অন্য ভাইয়ের নাম ছিলো শ্রী গোপাল চন্দ্র সর্দার। আর গোপাল চন্দ্রের নাম অনসুারে এই এলাকার নাম হয় গোপালদী। এই জমিদার বংশের শেষ জমিদার ছিলেন গোপাল চন্দ্রের ছেলে খোকন সর্দার। যিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ভারতে চলে যান। এখানে ৩টি জমিদার বাড়ির আরেকটি হলো ভূঁঞা জমিদার বাড়ি। ভূঁঞা জমিদাররা ছিলেন ২ ভাই। হরিচন্দ্র ভূঁঞা ও কানাইচন্দ্র ভূঁঞা এবং এই জমিদার বংশের শেষ জমিদার ছিলেন জগবন্ধু জমিদার।
 গোপালাশ্রম জমিদার বাড়ি(ডা: ধীরেন্দ্রনাথ সরকারের বাড়ি) 
 গাংগাটিয়া জমিদার বাড়ি (মানব বাবুর বাড়ি)কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত হোসেনপুর উপজেলার। গোড়াপত্তন হয় ব্রিটিশ শাসনামল শুরুর দিকে। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ভোলানাথ চক্রবর্তী। এখনো এই জমিদার বাড়ির বংশধর এই বাড়িতে বসবাস করছেন। এই জমিদার বাড়ির বর্তমান বংশধর হচ্ছেন মানব বাবু(ডাকনাম) মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী । মানব বাবু, তার স্ত্রী, ও বোনকে নিয়ে এই বাড়িতে বসবাস করতেছেন। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরু থেকেই তাদের জমিদারিত্ব শুরু হয় এবং দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাদের জমিদারিও শেষ হয়। এখন পর্যন্ত তাহারা তাদের ভূমিতে শান্তিপূর্ণ ভাবেই বসবাস করছেন। এবং, এখন ও এই অঞ্চলের মানুষেরা মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী চৌধুরী (মানব বাবু) কে জমিদার হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় ও সম্মান করে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী এই জমিদার বাড়িতে হামলা চালায়। মানব বাবুর পিতা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে তারা হত্যা করে। বর্তমানে পাকবাহিনী যে জায়গায় মানব বাবুর পিতাকে হত্যা করেছে। সেখানে তিনি একটি সমাধি তৈরি করেছেন।
 গৌরারং জমিদার বাড়িসিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার। প্রায় দুইশত বছর আগে জমিদার রাজেন্দ্র কুমার চৌধুরী ও জমিদার রাকেশ রঞ্জন চৌধুরীর হাতে এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। মূলত জমিদার রাম গোবিন্দ চৌধুরীর সময়ে এই জমিদার বাড়িটি বিস্তৃত লাভ করে। তিনিই ছিলেন এই এলাকার প্রতাপশালী জমিদার। তার জমিদারির আমলে জমিদার বংশধর ব্যতীত অন্য কেউ এখান দিয়ে জুতা পায়ে দিয়ে হাঁটতে পারতোনা। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীরা এই জমিদার বাড়ির ওপর ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ভূমিকম্পের সময় জমিদারের ছোট ভাই মাটি চাপা পড়ে মারা যায়। বর্তমানে জমিদার বংশের কেউই এখানে বসবাস করেননা। দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর এখানকার জমিদারিরও পতন হয়। আর এখানকার শেষ জমিদার ছিলেন নগেন্দ্র চৌধুরী। তবে এই জমিদার বংশধর এখনো এখানে আছেন। সর্বশেষ জমিদার নগেন্দ্র চৌধুরীর ছেলে নিরঞ্জন চৌধুরী এখন সুনামগঞ্জ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেছেন।
 গোয়ালকান্দি জমিদার বাড়িরাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ির জমিদার ছিলেন জমিদার কংস নারায়ণ। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হলে এই জমিদার বংশধররা ভারতের এক ব্যক্তির সাথে জায়গাজমি বিনিময়ের মাধ্যমে এই দেশ থেকে চলে যান।
 গাবতলী জমিদার বাড়ি 
 গৌরনদী জমিদার বাড়ি (জমিদার লাল মোহন সাহার বাড়ি)বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার। প্রায় একশত ষাট বছর আগে গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী গ্রামে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন জমিদার মোহন লাল সাহা। তখনকার সময় এই জমিদারের ছিল অনেক প্রতাপ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীরা এই জমিদার বাড়িটিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। তারা জমিদার বাড়ির পাক-পেয়াদাদের ঘর বাড়ির জালিয়ে দেয় এবং মন্দির ভাংচুর করে। এখনো জমিদার বাড়ির বংশধররা এখানে বসবাস করতেছেন। দেশ ভাগের পর ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে তাদেরও জমিদারি বিলুপ্ত হয়।
 গিরীশ চন্দ্র সেনের জমিদার বাড়িগোপালগঞ্জ জেলার। জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার গিরীশ চন্দ্র সেন।
 গুপ্ত জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া গ্রামে অবস্থিত। প্রায় তিনশত বছর আগে জমিদার রামমোহন গুপ্তের হাত ধরে সৃষ্টি। মূলত এই জমিদার বংশধররা ময়মনসিংহ জেলা থেকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় এসে বসতি স্থাপন করেন। তখন এই এলাকাটি আরকান রাজ্যের অধীনে ছিল এবং এখানে একচেটিয়া আদিবাসিদের অর্থাৎ মং, চাকমা ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। তখন তারা বাঙালিদের উপর অত্যাচার করত। তাই মং, চাকমা ও অন্যান্য আদিবাসিদের এই এলাকা ছাড়ার জন্য রামমোহন গুপ্ত হিন্দু ও মুসলমান বাঙালি জাতিকে নিয়ে আদিবাসি খেদাও আন্দোলন গড়ে তোলেন। রামমোহন গুপ্ত ছিলেন অত্যন্ত প্রজাহিতৈষী জমিদার। তিনি তার প্রজাদের জন্য অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অনেক মসজিদ, মন্দির ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন। জমিদার রামমোহন গুপ্ত তার ধর্মবোন মারা গেলে তার জন্য প্রতি বছর তিনি একই রঙের প্রায় আটটি গরু জবাই করে মেহমানদারির আয়োজন করতেন। জমিদার রামমোহন গুপ্ত মারা যাওয়ার পর পরবর্তী জমিদাররা আস্তে আস্তে রামমোহনের ধর্মবোনেরর জন্য করা মেহমানদারি বন্ধ করে দেন। এখানে এখনো জমিদার বংশের উত্তরসূরীরা বসবাস করতেছেন।
 গৌরীপুর রাজবাড়িময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলায় অবস্থিত। ১৭০০ শতাব্দীর দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গৌরীপুর জমিদার বাড়ি হলেও পাশাপাশি এখানে দুই জমিদারের জমিদারী ছিল। তাই তাদের আলাদা আলাদা দুইটি বাড়ি ছিল। স্থানীয়রা একটিকে আনন্দ কিশোরের ও অন্যটিকে সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহড়ীর জমিদার বাড়ি হিসেবে বলে থাকে।
 গোরকঘাটা জমিদার বাড়িমূলত কোম্পানী শাসনামলেই মহেশখালী দ্বীপটি ইংরেজদের নজরে পড়ে। সাগরের মাঝখানে অবস্থিত মনোরম দ্বীপটি, ১৭৭৯ খ্রিষ্টাব্দে রবার্ট ওয়ারলেজ নামক জনৈক ইংরেজ কর্মচারী, বন্দোবস্তি নেবার জন্য আবেদন করলে ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রামে, দ্বীপটি বন্দোবস্তি সংক্রান্ত দলিল সম্পাদিত হয়। ১৭৮২ সালের ২০ নভেম্বর রবার্ট ওয়ারলেজ চট্টগ্রামের ইংরেজ কালেক্টর চার্লস ক্রাফটস-এর কাছে ২০,০০০ টাকার বিনিময়ে দ্বীপটি হস্তান্তর করেন। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে দুরত্ব আর যোগাযোগের অসুবিধার কারণে জনাব ক্রাফটস স্থানীয় দেওয়ান কালিচরণ কানুনগোর কাছে ৪০,০০০ টাকার বিনিময়ে দ্বীপটির মালিকানা হস্তান্তর করেন। কালিচরণ কানুনগো নিঃসন্তান ছিলেন। চণ্ডিচরণ নামক এক ছেলেকে তিনি দত্তক পুত্ররূপে গ্রহণ করেন। ১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে কালিচরণ কানুনগোর মৃত্যু হলে তার স্ত্রী প্রভাবতী মহেশখালীর মালিক হন। প্রভাবতির জীবদ্দশায় চণ্ডিচরণ শরৎচন্দ্র নামক এক পুত্রসন্তান রেখে মৃত্যুবরণ করলে ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় শরৎচন্দ্র অপ্রাপ্তবয়স্ক থাকায় প্রভাবতীর নামে বন্দোবস্ত হয়। পরে শরৎচন্দ্র মহেশখালী দ্বীপের প্রজাবৎসল জমিদার হন। তিনিই জনসাধারণের পানীয় জলের অভাব মোচনের জন্য বিশাল একটি দীঘি খনন করেন (যা বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের সম্মুখে অবস্থিত)। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে নুরুল আমিন সরকার কর্তৃক জমিদারী প্রথার বিলোপ ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত শ্রীযুক্ত বাবু অজিত কুমার রায় বাহাদুর চৌধুরী মহেশখালী দ্বীপের জমিদার ছিলেন। বাবুদের মূল বাড়ি চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া গ্রামে। অজিত কুমার রায় বাহাদুর প্রজাবৎসল ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন।
 গজরা জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার টর্কি এওয়াজ গ্রামে। প্রায় ১৮০০ শতকের শেষদিকে জমিদার অক্ষয় চন্দ্র সরকার বর্তমান চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের টর্কি এওয়াজ গ্রামে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি এখান থেকেই তার জমিদারীর শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। এই জমিদার বাড়ির আরো দুইজন জমিদারের নাম জানা যায়। তারা হলেন গঙ্গাই সরকার ও সুরেন্দ্র সরকার,এছাড়াও পূর্ব রায়ের দিয়া গ্রামের সলিমুদ্দিন সরকার নামেও একজন এই জমিদারি কার্য কিছু দিন পরিচালনা করেন ।
 গৌরীপুর রাজবাড়িময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলায় অবস্থিত। আনুমানিক ১৭০০ শতাব্দীর দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। গৌরীপুর জমিদার বাড়ি হলেও পাশাপাশি এখানে দুই জমিদারের জমিদারী ছিল। তাই তাদের আলাদা আলাদা দুইটি বাড়ি ছিল। স্থানীয়রা একটিকে আনন্দ কিশোরের ও অন্যটিকে সুরেন্দ্র প্রসাদ লাহড়ীর জমিদার বাড়ি হিসেবে বলে থাকে।
 গৌরীপুর লজময়মনসিংহ জেলার ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে অবস্থিত। ১৮২৮ সালে ময়মনসিংহের মহারাজা শশীকান্ত সেনের শাসনামলে বর্তমান ময়মনসিংহ সদরের ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর এই দ্বিতল বিশিষ্ট্য বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। বাড়িটি কাঠ ও টিন জাতীয় পদার্থ দিয়ে তৈরি করা। কারণ ইট দিয়ে দালান করার উপর ময়মনসিংহের মহারাজা নিষেধাজ্ঞা ছিল। জমিদার ব্রজেন্দ্র কিশোর বাড়িটি তৈরি করতে চীন থেকে মিস্ত্রী এনেছিলেন।
 ঘোড়াশাল জহুর মিয়া জমিদার বাড়ি, পলাশ- নরসিংদী 
 ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়িদিনাজপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে আউলিয়াপুর ইউনিয়নে পূর্নভবা নদীর তীরে ঘুঘুডাঙ্গা জমিদার বাড়ির অবস্থান। নবীর মোহাম্মদের পুত্র ফুল মোহাম্মদ চৌধুরী ক্রমান্বয়ে বহু জমিদারী ক্রয় করেন এবং পাথর ঘাটা হতে ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার বাড়ি নির্মান করেন। ১৯৫০ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি পর্যন্ত বংশ পরম্পরায় ঘুঘুডাঙ্গা জমিদারি টিকে ছিল। ঘুঘুডাঙ্গার জমিদাররা বিভিন্ন সময়ে সামাজিক কল্যাণের জন্য কাজ করে গেছেন। বর্তমান ঘুঘুডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ তাদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। বর্তমান ভারতের গঙ্গারামপুরের খোজাপুরেও তারা ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত একটি এম ই স্কুল করেছিলেন। ঘুঘুডাঙ্গায় গরিব মানুষের রোগ মুক্তি কামনায় তারা একটি হোমিও দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই চিকিৎসালয়টি বর্তমানে সরকারী ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পল্লী মঙ্গল সমিতি নামে একটি জনকল্যাণ মূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার পরিবারের সদস্যরা। ঘুঘুডাঙ্গার বর্তমান পোস্ট অফিস তাদের উদ্যোগেই ব্রিটিশ শাসনামলে স্থাপিত হয়েছিল। ঘুঘুডাঙ্গায় একটি ফুরকানিয়া মাদ্রাসা স্থাপন, মসজিদ নির্মাণ, দিনাজপুর স্টেশন রোড জামে মসজিদের নির্মাণ, বর্তমান দিনাজপুর জেলা জজকোর্ট এলাকায় ২টি মসজিদ নির্মাণ, কাচারীতে কপিকল সহ কূয়া স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন ঘুঘুডাঙ্গার জমিদার পরিবার। সাধারণ মানুষের পানি সমস্যা মোকাবেলায় জমিদারগণ ঘুঘুডাঙ্গা এষ্টেটে পীরপুকুর, বঁচাপুকুর, ঝাড়–য়ানী দিঘী সহ বেশ কয়েকটি বড় দিঘি খনন করেছিলেন।
 ঘড়িয়ালডাঙ্গা জমিদার বাড়িকুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় অবস্থিত। জমিদার শরৎচন্দ্র চৌধুরী এটি নির্মাণ করেন। কিন্তু স্বাধীনতার আগে জমিদারের উত্তরসূরিরা নিজ পরিবারে ভারতে পাড়ি জমানোর পর বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের সব ধর্মীয় কার্যক্রম।
 ঘোষাল রাজবাড়ি 
 চারআনি জমিদার বাড়ি 
 চৌধুরী হাটের জমিদার বাড়ি 
 চরহোগলা জমিদার বাড়িবরিশাল জেলার অন্তর্গত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার। জমিদার পাঞ্জুশরিফ এই বংশের গোরাপত্তন করে,তার পিতার নাম “বুধাই শরিফ” এবং মাতার নাম “চান বিবি”। ” বুধাই শরিফ ” ছিলেন বিহারের রাজ কোষাধ্যক্ষ ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব মির্জা মুহাম্মদ সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের ফলে বিহার বৃটিশদের অধীনস্থ হওয়ায় বুধাই শরিফ প্রান ভয়ে তার পরিবার সহ পূর্ব বাংলার সিলেটে চলে আসেন এবং সেখানেই তিনি মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুর পরে “পাঞ্জুশরিফ ” তার মাতা” চান বিবিকে ” নিয়ে প্রথমে খুলনা চলে আসেন এবং এর কিছুদিন পরে ১৭৮০ সালে মেহেন্দিগঞ্জ চোলে আসেন এবং বসতি স্থাপন করেন যা ছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুর এস্টেটে জমিদারির অংশ । “পাঞ্জুশরিফ” ঠাকুর এস্টেটের কর্তৃক এই অঞ্চলে জমিদারি প্রাপ্ত হন এবং পরবর্তী সময়ে আত্মীয়তা স্বরূপ শায়েস্তাবাদ নবাব কর্তৃক কিছু অঞ্চল উপহার প্রাপ্ত হন। পরবর্তী সময়ে পাঞ্জুশরিফের নাতি আবু জমিল শামসুল হামিদ চৌধুরী( আকা মিয়া) বৃটিশ কর্তৃক নতুন জমিদারি অঞ্চল ক্রয় করেন আর বৃটিশ কর্তৃক “চৌধুরী” উপাধি লাভ করেন। পাঞ্জুশরিফে জ্যেষ্ঠ পুত্র আব্দুল করিম চৌধুরীর(ভেলু মিয়া) সময় কালে চরহোগলা জমিদার পরিবার বৃটিশ কর্তৃক জলকর প্রাপ্তির আধিকার লাভ করে যার সীমানা মেহেন্দিগঞ্জ থেকে বঙ্গোপসাগর আবধি
 চাঁদড়া জমিদার বাড়িফরিদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত আলফাডাঙা উপজেলার চাঁদড়া গ্রামের। প্রায় ৮৩ বছর আগে এই ঐতিহাসিক চাঁদড়া জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়। গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় প্রথমে মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার নায়েব ছিলেন। এখানে নায়েব থাকায় অবস্থায় তিনি অনেক অর্থ সম্পদের মালিক হন এবং চাঁদড়া গ্রামে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জমিদার গির্জাকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় তার পরিবার নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আর ফিরে আসেন নাই।
 চৌগ্রাম জমিদার বাড়িনাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম গ্রামে অবস্থিত। ১৭২০ সালের দিকে জমিদার রসিক রায়ের হাত ধরে এই জমিদার বংশ ও বাড়ির গোড়াপত্তন। মূলত এটি নাটোর জমিদার বাড়ির অধীনস্থ একটি জমিদার বাড়ি ছিল। নাটোরের জমিদার রামজীবন রসিক রায়কে উক্ত জমিদারী দান করেন। এরপর বংশানুক্রমে একের পর এক জমিদার বংশধররা এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। রসিক রায়ের পরে জমিদাররা হলেন কৃষ্ণকান্ত রায়, রুদ্রকান্ত রায়, রোহিনীকান্ত রায়, রমণীকান্ত রায় ও জমিদার বংশের শেষ জমিদার রাজেশকান্ত রায় ও রমেন্দ্রকান্ত রায়। পরবর্তীতে ভারতবর্ষ ভাগ হলে জমিদার বাড়ির শেষ বংশধররা ভারতে চলে যান।
 চান্দাইকোনা পুর্বপাড়া জমিদার বাড়ি 
 চৌধুরী বাড়িচাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জমিদার তনু রাজা চৌধুরী। যিনি ব্রিটিশ শাসনামলের ব্রিটিশদের এই দেশ থেকে তাড়াতে সিপাহী বিদ্রোহ আন্দলোন করেন এবং এর প্রথম সারীর নেতা ছিলেন। ব্রিটিশদের ধরপাকড়ের কারণে আত্মগোপন করেন। তারপর এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং পরবর্তীতে এখানের জমিদারীত্ব লাভ করেন। তিনি মারা যাবার পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারীত্ব বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। এই জমিদার বাড়ির জমিদাররা কালে কালে বহু সুনাম অর্জন করেন যা এখনো সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যমান। উল্লেখ্য যে এই জমিদার বংশধররা ছিলেন ইসলাম ধর্মালম্বী। এখনো এই জমিদার বাড়ির বংশধররা আছেন। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা জমিদার তনু রাজা চৌধুরীর ছিলেন এক সন্তানের জনক। যার নাম ছিল আলী আজগর চৌধুরী। আলী আজগর ছিলেন সাত সন্তানের জনক। তারা হলেন মতি রাজা চৌধুরী, উমেদ রাজা চৌধুরী, কামিজ রাজা চৌধুরী, হামিদ রাজা চৌধুরী, মোহাম্মদ রাজা চৌধুরী, প্রেম রাজা চৌধুরী ও গোলাম রাজা চৌধুরী।
 চান্দিশকরা জমিদার বাড়ি,চৌদ্দগ্রাম,কুমিল্লা 
 চাঁচড়া জমিদার বাড়িযশোর জেলার যশোর সদর উপজেলায় অবস্থিত।  এই জমিদার বংশের একজন জমিদার প্রতাপাদিত্যের কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়। তিনি তার জমিদারী আমলে খুবই প্রভাবশালী একজন জমিদার ছিলেন।
 চাকমা রাজবাড়ি (রাঙ্গুনিয়া)চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নে। ১৭৫৭ সাল থেকে চাকমা রাজন্যবর্গ শুকদেব রায়, শেরদৌলত খাঁ, জানবক্স খাঁ, টব্বর খাঁ, জব্বর খাঁ, ধরম বক্স খাঁ, রাণী কালীন্দি, হরিশচন্দ্র রায় প্রমুখ এ অঞ্চলে রাজত্ব করেছেন। ১৮৭৪ সালে চাকমা রাজা হরিশচন্দ্র রাজধানী রাঙ্গুনিয়ার রাজানগর হতে রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত করেন। চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, তাঁর স্ত্রী ইয়েন ইয়েন ও মা আরতি রায় এই বাড়িতে থাকেন।
 চাকমা রাজবাড়ি (রাঙ্গামাটি) 
 চন্দ্রনাথ সেনের জমিদার বাড়িপাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নে। ১৮০০ শতকের দিকে জমিদার চন্দ্রনাথ সেন বর্তমান পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার চাঁদভা ইউনিয়নে এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন।
 ছয়গাঁও জমিদার বাড়িশরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামে অবস্থিত।
 ছনুয়া পুরোনো জমিদার বাড়ি 
 ছোট বনগ্রাম জমিদার বাড়িগোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার ছোট বনগ্রাম গ্রামে।
 ছান্দড়া জমিদার বাড়িমাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার তালখাড়ি ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামে অবস্থিত। এটি প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার অলঙ্ঘন মোহন দেব রায়, যিনি একজন অঢেল সম্পদ ও প্রভাবশালী ধনী জমিদার ছিলেন, যার কোন সন্তান ছিল না। তার অপর ভাই সুরেন দেব রায়ও ছিলেন নিঃসন্তান। তার মৃত্যুর পর, জমিদারি তার ছোট ভাই অবনী মোহন দেব রায়ের কাছে চলে যায়, যিনি ছিলেন চিরকুমার। ছান্দড়ার শেষ জমিদার ছিলেন অবনী মোহন দেব রায়, যিনি ১৯৭৩ সালে মারা যান।
 জালালপুর জমিদার বাড়ি 
 জয়মনিরহাট জমিদার বাড়ি 
 জাহাপুর জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার। জাহাপুর জমিদার বাড়িটির জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয় আঠারশত বাষট্টি সালের দিকে।এ বাড়ির প্রথম পুরুষ শ্রী কানাই লাল রায়। তবে জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায় নবম পুরুষ শ্রী গৌর মোহন রায়ের আমলে। তাঁর উক্ত কাজে সহযোগিতা করেছেন তার সহোদর ভাই শ্রী মথুরা মোহন রায় এবং তাঁর জ্ঞাতি ভ্রাতা শ্রী রামদয়াল রায় ও শ্রী কমলা কান্ত রায়। বর্তমানে জমিদার বংশধরের মধ্যে যারা এখন এ বাড়িতে বসবাস করছেন তাঁরা হলেন শ্রী আশীষ কুমার রায়,শ্রী সমরেন্দ্র রায়,শ্রী অজিত কুমার রায়, প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়, অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার রায় ও তাদের পরিবারবর্গ। তারাই এখন এই বিশাল বাড়িটি দেখাশুনাসহ বসবাস করতেছেন।
 জাওয়ার জমিদার বাড়ি 
 জয়কুমার জমিদার বাড়িব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায়
 জয়গঞ্জ জমিদার বাড়ি যা (খানসামা জমিদার বাড়ি) নামে পরিচিত 
 জমিদার পঞ্চানন রায় চৌধুরীর বাড়ি 
 জমিদার শিশির গাঙ্গলীর জমিদার বাড়ি 
 জয়েন্তশ্বরী বাড়ি পূর্ণনির্দেশিত জৈন্তা রাজবাড়ি 
 জগদল রাজবাড়িঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার জগদল নামক স্থানে। প্রায় ১৯০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার বীরেন্দ্র কুমার এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।
 জৈনরাজার রাজবাড়ী 
 জলাবাড়ী বাবুর বাড়ি(স্বরূপকাঠি থানা পিরোজপুর জেলা,জলাবাড়ী আমার বন্ধুর বাড়ির পাশে। 
 টাঙ্গাইল জমিদার বাড়ি 
 ডাংগা জমিদার বাড়ি 
 তাজহাট জমিদার বাড়িরংপুর শহরের পুরাণ রংপুর তথা তাজহাটে অবস্থিত। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায় নির্মাণ করেন। এতে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। মহারাজা গোপাল রায় ছিলেন হিন্দু এবং পেশায় ছিলেন একজন স্বর্ণকার। কথিত আছে, তার মনমুগ্ধকর ‘তাজ’ বা মুকুটের কারণেই এ এলাকা তাজহাট নামে অভিহিত হয়ে আসছে।
 তেওতা জমিদার বাড়িমানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত। সতেরশ’ শতকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি নির্মাণ করেছিলেন পঞ্চানন সেন নামক একজন জমিদার। জনশ্রুতি অনুসারে, পঞ্চানন সেন এক সময় খুবই দরিদ্র ছিলেন ও দিনাজপুর অঞ্চলে তিনি তামাক উৎপাদন করে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পর এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। পরবর্তিতে এখানে জমিদারি প্রতিষ্ঠিত করে জয়শংকর ও হেমশংকর নাম দুজন ব্যক্তি। ভারত বিভক্তির পর তারা দুজনেই ভারত চলে গেলে বাড়িটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
 তাড়াশ ভবনপাবনা জেলা সদরে অবস্থিত। ব্রিটিশ শাসনামলে তাড়াশ রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায়।
 তীর্থবাসি জমিদার বাড়িব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামে অবস্থিত। জমিদার তীর্থবাসী চন্দ্র রায় ১৯১৫ সালে ভারত থেকে নকশা ও রাজমিস্ত্রী এনে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার পুত্র জমিদার মহিষ চন্দ্র রায় তার দাদার নামে এখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
 তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়িলালমনিরহাট জেলার অন্তর্গত কালীগঞ্জ উপজেলার। প্রায় চারশত বৎসর আগে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুরারিদেব ঘোষাল ভট্টাচার্য। তিনি ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ। এই জমিদার বাড়িটি যে থানায় অবস্থিত অর্থাৎ কালীগঞ্জ থানায়। এই কালীগঞ্জ থানাটির নামকরণ করা হয়েছে এই জমিদার বংশের এক জমিদারের নামে। তিনি ছিলেন জমিদার কালী প্রসাদ রায় চৌধুরী। কালী প্রসাদ রায় চৌধুরী ছিলেন একজন ধর্মপরায়ণ ও সমাজসংস্কারক। ১৬৩৪ সালে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর প্রায় চারশত বছর পর এই তুষভাণ্ডার জমিদার বাড়ির সমাপ্তি ঘটে জমিদার গিরিন্দ্র মোহন রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর ১৯৩৫ সালে।
 তালজাঙ্গা জমিদার বাড়িকিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত তাড়াইল উপজেলার।  প্রায় একশত বৎসর আগে জমিদার বাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার রাজ চন্দ্র রায়। যিনি ছিলেন শিক্ষিত জমিদার, তখনকার সময়ের এম.এ.বি.এল ডিগ্রীপ্রাপ্ত উকিল ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করার পর প্রায় ৩৩ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জমিদারি করেন। তার জমিদারি শেষ হয় তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তারপর এই জমিদার বাড়ির জমিদার হন তার ছেলে মহিম চন্দ্র রায়। মহিম চন্দ্র রায়ও বাবার মত ছিলেন শিক্ষিত এবং এম.এ.বি.এল ডিগ্রীপ্রাপ্ত একজন উকিল। জমিদার মহিম চন্দ্র রায় বাবার স্মৃতিস্বরূপ একটি হাই স্কুল নির্মাণ করেন। তাই স্কুলটির নাম দেন আর.সি.রায় হাই স্কুল। যা বর্তমানে স্বনামধন্য স্কুল হিসেবে পরিচিত। স্কুলটি জমিদার বাড়ির পাশেই অবস্থিত। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদরারিরও সমাপ্তি ঘটে। জমিদার রাজ চন্দ্র রায়ের নাতি বা জমিদার মহেন্দ্র রায়ের ছেলে নৃপেন্দ্র চন্দ্র ও তার ৭ ভাই মিলে ভারতের কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখনো এই জমিদার বাড়ির বংশধররা কলকাতায় আছেন।
 তাঁতীবন্দ জমিদার বাড়িপাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ নামক গ্রামে অবস্থিত। আনুমানিক ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার উপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর হাতে এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। এরপর একে একে এই জমিদার বংশধররা উক্ত জমিদারী তাদের নিজ স্বীয় গুণাবলীর মাধ্যমে পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু এই জমিদার বাড়ির ইতিহাসে জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর নামটি একটু আলাদাভাবে জায়গা করে নেয় তার অসাধারণ গুণাবলীর কারণে। কারণ তার জমিদারী আমলেই উক্ত জমিদারী আরো বিশাল আকারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই অনেকের কাছে উক্ত জমিদার বাড়ি তার নামেই বেশ পরিচিত। তিনি তার জমিদারী কঠোর নিয়ম এবং উদারতার মাধ্যমে পরিচালনা করে প্রজাদের কাছে সু-পরিচিত হয়ে উঠেন। সামর্থবান প্রজার কাছ থেকে নিয়মমাফিক খাজনা আদায় করতেন। যাতে কোনোরকম ছাড় দিতেন না। আবার যারা অসামর্থ্যবান প্রজা। তাদের কাছ থেকে তিনি জোর করে কোনো খাজনা আদায় করতেন না। উল্টো তাদের খাজনাগুলো মাফ করে দিতেন। তার জমিদারী আমলে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনিও অন্যান্য হিন্দু জমিদারদের থেকে একটুও ব্যতিক্রম ছিলেন না। ঐসময় তার জমিদারী এলাকায় মুসলমানরা কোরবানির জন্য গরু জবাই দিতে পারতেন না। এছাড়াও মুসলমানদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপরও ছিল নিষেধাজ্ঞা। বিজয় গোবিন্দ তার শৌখিন জীবনে চলাফেরা করার জন্য হাতিবহর ব্যবহার করতেন। ঐ হাতিবহরের খরচের জন্য তিনি প্রতিমাসে প্রজাদের কাছ থেকে আলাদাভাবে খাজনা আদায় করতেন। কথিত আছে জমিদারী আমলে বর্তমান পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায় এই জমিদার বংশধরদের মত আরেকটি জমিদার বংশ ছিল। যা ছিল মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর জমিদার বংশ। মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর সাথে এই হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল।
 তেলোয়ারী জমিদার বাড়ি 
 তালখড়ি জমিদার বাড়ি 
 তিনআনী জমিদার বাড়ি 
 তের জমিদার বাড়ি 
 তামলি রাজার বাড়িরাজশাহী জেলার পবা উপজেলার বড়গাছী নামক এলাকায় অবস্থিত।
 তেঁতুলিয়া জমিদার বাড়ি 
 দেব জমিদার বাড়িহবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার অন্তর্গত বাড়াচান্দুরা গ্রামে অবস্থিত। “দেব বাড়ি” নামে সুপরিচিত জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জমিদার রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন জমিদার ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দেব। জমিদার কারো জমির উপর দিয়ে চলাফেরা করতেন না। তিনি নিজের জমিদার উপর দিয়ে চলাচল করতেন। তিনি সকল শ্রেণীর মানুষকে ভালোবাসতেন। যিনি ব্রিটিশ শাসনামলের ব্রিটিশদের এই দেশ থেকে তাড়াতে সিপাহী বিদ্রোহ আন্দলোন করেন। তিনি মারা যাবার পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারীত্ব বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে পর্যায়ক্রমে। এই জমিদার বাড়ির জমিদাররা কালে কালে বহু সুনাম অর্জন করেন যা এখনো সাধারণ মানুষের কাছে বিদ্যমান। উল্লেখ্য যে এই জমিদার বংশধররা ছিলেন হিন্দু ধর্মালম্বী।
 দত্তপাড়া জমিদার বাড়িগাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। জমিদার দত্ত সাহেব এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী। জমিদার দত্ত সাহেব ভাওয়াল জমিদার বংশের নাতি ছিলেন। দেশ ভাগের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলেও জমিদার দত্ত সাহেব এখানে প্রায় ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন। পরবর্তীতে ভারতের এক মুসলিম ব্যবসায়ীর সাথে জায়গা বিনিময় করে তিনি ভারতে চলে যান।
 দুর্গাপুর নবাব বাড়ি 
 দালাল বাজার জমিদার বাড়ীলক্ষ্মীপুর জেলার লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার নামক স্থানে অবস্থিত। প্রায় ৪০০ বছর আগে এই জমিদার বাড়িটি জমিদার লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণব প্রতিষ্ঠা করেন। তার আদি নিবাস ছিল ভারতের কলকাতায়। পরবর্তীতে তিনি লক্ষ্মীপুরে এসে এই জমিদারীর সূচনা করেন। তাই অনেকের কাছে এটি লক্ষ্মী নারায়ণ বৈষ্ণবের বাড়ি হিসেবেও পরিচিত। বর্তমানে দালাল বাজার জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিতির কারণ হচ্ছে তার বংশধররা ব্রিটিশ শাসনামলে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক এজেন্ট ছিল। তাই স্থানীয় লোকেরা তাদেরকে ব্রিটিশদের দালাল বলে আখ্যায়িত করে। আর ঐখান থেকেই এই স্থানটির দালাল বাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার আগ পর্যন্ত জমিদার বংশধররা একাধারে এখানে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় তারা এই জমিদার বাড়ি ত্যাগ অন্যত্র চলে যায়।
 দুবলহাটি রাজবাড়ীদুবলহাটী রাজবাড়ী প্রায় দু’শ’ বছরের প্রাচীন স্থাপনা এবং তৎকালীন জামিদার রাজা হরনাথ রায় চৌধুরীর সময়ে এই বাড়িটির ব্যাপক উন্নতি সাধন হয়। দুবলহাটির জমিদারী ছিল সিলেট, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, রংপুর ও ভারত এর কিছু অংশে। দুবলহাটি জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা জগতরাম একজন লবণ ব্যবসায়ী, বাণিজ্য উপলক্ষে দুবলহাটির কাছের গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন এবং বিল অঞ্চলের ইজারা পত্তন গ্রহণ করেন। ধীরে ধীরে তারা প্রচুর জমির মালিক হন। কথিত আছে যে, এই অঞ্চলে তেমন কোন ফসল উৎপন্ন না হওয়ায় ভুমা মহল অজুহাতে দুবলহাটির জমিদার কই মাছ দিয়ে কর পরিশোধ করতেন। মাত্র ২২ কাহন কই মাছ কর হিসেবে দিতেন। রঘুনাথের বিত্ত-বৈভবের খবর পৌঁছে যায় মোগল দরবারে। মোগল দরবারের নির্দেশে তাকে ডেকে পাঠানো হয় মুর্শিদাবাদ নবাবের দরবারে। নবাব তাকে রাজস্ব প্রদানের নির্দেশ জারি করেন। তিনি নবাবকে জানান, তিনি যে এলাকায় থাকেন সেখানে শুধু জল আর জল। কোন ফসল হয় না। তবে বড় বড় কৈ মাছ পাওয়া যায়। বিষয় বুঝতে পেরে নবাব তাকে প্রতি বছর রাজস্ব হিসাবে ২২ কাহন কৈ মাছ প্রদানের নির্দেশ দেন।
 দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি (নর্থ হাউজ)টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্ভুক্ত দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত। এই জমিদররা ছিলেন ইসলাম ধর্মাবলম্বী। যাদের পূর্ব পুরুষরা এখানে আফগানিস্তান থেকে এসেছেন। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হলেন ফতেহদাদ খান গজনবী লোহানি। জমিদার বংশধররা তাদের পূর্ব পুরুষ আফগানিস্তানের গজনী থেকে আসার কারণে তাদের নামের শেষে গজনবী লোহানি খেতাবটি ব্যবহার করতেন। জমিদার বাড়ির জমিদারদের মধ্যে দুজন ছিলেন খুবই আলোচিত স্বনামধন্য জমিদার। যারা ছিলেন দানবীর, উচ্চশিক্ষিত ও ব্যবসায়ী। তারা হলেন স্যার আবদুল করিম গজনভি এবং স্যার আবদুল হালিম গজনভি।
 দেবহাটা জমিদার বাড়িসাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলায় অবস্থিত। দেবহাটার গাতিদার (ছোট জমিদার) ছিলেন বিপিন বিহারী মন্ডল । তাঁর পুত্র ফণীভূষন মন্ডল ছিলেন বিখ্যাত জমিদার।
 দাগনভূঁইয়া জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী জেলার অন্তর্গত দাগনভূঞা উপজেলার। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিন কড়ি সাহার দুই পুত্র রাম সুন্দর সাহা ও রামচন্দ্র সাহা। স্থানীয়দের কাছে এটি প্রতাপপুর বড় বাড়ি বা রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। এই এলাকার আশেপাশে যত জমিদার ছিল সবার শীর্ষে ছিল এই জমিদার। এই জমিদার বংশধররা জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরও ২০০২ সাল পর্যন্ত এই জমিদার বাড়িটিতে ছিল।
 দিনাজপুর রাজবাড়িরংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার সদর উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। দিনাজপুর রাজবাড়ি ও রাজ্য রাজা দিনরাজ ঘোষ স্থাপন করেন। কিন্তু অনেকের মতামত পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে ইলিয়াস শাহীর শাসনামলে সুপরিচিত “রাজা গণেশ” এই বাড়ির স্থপতি। রাজা দিনরাজ ঘোষ গৌড়েশ্বর গণেশনারায়ণের (১৪১৪-১৪১৮ খ্রি:) অন্যতম রাজকর্মচারী। তিনি ছিলেন উত্তর রাঢ়ের কুলীন কায়স্থ । রাজা দিনরাজের নাম থেকেই রাজ্যের নাম হয় ‘দিনরাজপুর’, যা বারেন্দ্র বঙ্গীয় উপভাষায় পরিবর্তিত হয়ে হয় দিনাজপুর । গৌড় সংলগ্ন সনাতনী রাজ্য দিনাজপুর পাঠান, মুঘল ও নবাবদের বহু যুদ্ধে পরাস্ত করে চিরকাল এসেছে ।[১] সপ্তদশ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরী দিনাজপুরের জমিদার হন। কিন্তু শ্রীমন্ত দত্ত চৌধুরীর ছেলের অকাল মৃত্যুর হওয়াতে, তার ভাগ্নে “সুখদেব ঘোষ” তার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হন।
 দয়ারামপুর জমিদার বাড়িনাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুর নামক স্থানে অবস্থিত যা স্থানীয়দের কাছে দয়ারামপুর রাজবাড়ি ও শরৎচন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। দয়ারামপুর জমিদার বংশধররা দিঘাপতিয়া জমিদার বংশধরদের উত্তসূরী। মূলত এই দয়ারামপুর এলাকার নামকরণ করা হয়েছে দিঘাপতিয়া জমিদার বংশের গোড়াপত্তনকারী দয়ারামের নামানুসারেই। দিঘাপতিয়া জমিদার বংশের প্রমদানাথ রায় যখন দিঘাপতিয়া জমিদারীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  প্রথম জমিদার হিসেবে কুমার বসন্ত কুমার রায় ছিলেন উক্ত জমিদার বাড়ির জমিদার। এই জমিদার বাড়ির শেষ জমিদার ছিলেন শ্রী বাবু শরৎচন্দ্র রায়। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত তিনি এখানে শেষ জমিদার হিসেবে বসবাস করেন।
 দড়িগাঁও মিঞাবাড়ী জমিদার বাড়ি, জমিদার গওহর আলী খাঁ, কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ 
 দুর্গাপুর জমিদার বাড়ি 
 দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি বর্তমানে উত্তরা গণভবনবাংলাদেশের নাটোর শহরে অবস্থিত। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা দয়ারাম রায় নাটোর রাজ্যের রাজা রাম জীবনের দেওয়ান ছিলেন। দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায় (১৬৮০-১৭৬০) ১৭৩৪ সালে প্রায় ৪৩ একর জমির উপর দিঘাপতিয়া প্রাসাদের মূল অংশ ও এর সংলগ্ন কিছু ভবন নির্মাণ করেন।
 দেয়াঙ পাহাড়ের জমিদার বাড়ি 
 দেওকলসের জমিদার বাড়ি 
 ধানকোড়া জমিদার বাড়িমানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া নামক গ্রামে অবস্থিত। জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার নরসিংহ রায় চৌধুরী। তারপর জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত একেএকে জমিদার বংশধররা এই জমিদারীর দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। জমিদার নরসিংহ রায় চৌধুরীর ছেলে ছিলেন গিরিশগোবিন্দ রায় চৌধুরী। তার ছেলে ছিলেন হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী। তার ছিল তিন ছেলে অমূল্যচন্দ্র রায় চৌধুরী, বীরেনচন্দ্র রায় চৌধুরী এবং নির্মলচন্দ্র রায় চৌধুরী। জমিদার বাড়ির পাশেই জমিদাররা একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বাড়ির বংশধররা ১৯৫২ সালে ভারতে চলে যান।
 ধুবিল কাটার মহল জমিদার বাড়ি (মুন্সিবাড়ি)সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধুবিল ইউনিয়নের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত। প্রায় ১৮৪০ সালের দিকে জমিদার মুন্সি আব্দুর রহমান তালুকদার এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।
 ধামালিয়া জমিদার বাড়িখুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া নামক গ্রামে অবস্থিত।
 ধনবাড়ি জমিদার বাড়িটাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশদের কাছ থেকে বাহাদুর, নওয়াব, সি.আই.ই খেতাবপ্রাপ্ত জমিদার খান বাহাদুর সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী। যিনি ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথম মুসলিম হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীত্বের পদ লাভ করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম এবং বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবক ছিলেন তিনি। তিনি বেশ সুনামের সাথে উক্ত জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। এরপর জমিদারী আমল থেকে এখন পর্যন্ত তার বংশধররা উক্ত জমিদারীর আওতায় থাকায় সবকিছু দেখভাল করছেন। এই জমিদার বংশের একজন মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবং আরেকজন সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প মন্ত্রী ও বাংলাদেশ গঠনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বি.এন.পি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
 ধলাপাড়া চৌধুরীবাড়ীটাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলাতে।
 ধরাইল জমিদার বাড়িনাটোর জেলার সদর উপজেলার ধরাইল গ্রামে অবস্থিত। ইতিহাস থেকে উক্ত জমিদার বাড়ির একজন জমিদারের নাম জানা যায়। তিনি হলেন জমিদার শশাঙ্ক চৌধুরী। ৪৭ সালে দেশ ভাগের পর জমিদাররা আর ধরাইল গ্রামে আসেননি।
 নয়আনী জমিদার বাড়িশেরপুর জেলা সদরে অবস্থিত তৎকালীন একটি জমিদার বাড়ি।  আঠারোশ’ শতকের শেষের দিকে নয়আনী জমিদার বাড়িটি স্থাপন করা হয়ে থাকে। তৎকালীন সময়ে বাড়িটির চারপাশে জলাধার দিয়ে ঘেরা ছিলো ও আশেপাশে প্রার্থনার উদ্দেশ্যে আরও বেশ কয়েকটি মন্দিরও নির্মাণ করা হয়েছিলো। এছাড়াও এর পাশেই ছিলো রঙ মহল। উপমহাদেশে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ও ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় নয়আনীর তৎকালীন জমিদার বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারত চলে যান।
 নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়িকুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশদের কাছ থেকে বাহাদুর খেতাবপ্রাপ্ত প্রমদরঞ্জন বক্সী। তার ছিল তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তান। বড় ছেলে বিরেশ্বর প্রসাদ বক্সী আইন বিষয়ে বিদেশে পড়ালেখা করে কর্ম হিসেবে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং তিনি একজন বিচারক ছিলেন। ছোট ছেলে বিপুলেশ্বর প্রসাদ বক্সী প্রকৌশলী বিষয়ে পড়ালেখা করে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মজীবন বেচে নেন। কিন্তু মেজো ছেলে বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী পড়ালেখায় খারাপ থাকায় তিনবার প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেননি। তাই প্রমদরঞ্জন বক্সী তাকেই পরবর্তী জমিদার হিসেবে জমিদারীর দায়িত্ব দেন। জমিদার বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সীর দুই ভাই ভারতের কোচবিহার রাজ্যে একটি বাড়ি ক্রয় করে সেখানে তাদের বাবা জমিদার প্রমদরঞ্জন বক্সীকে নিয়ে চলে যান। শুধু শেষ জমিদার বিশ্বেশ্বর প্রসাদ বক্সী জমিদারী প্রথা বিলুপ্তী হওয়ার আগ পর্যন্ত এখানে ছিলেন এবং জমিদারী পরিচালনা করেছেন। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলেও তিনিও ভাইদের কাছে ভারতে চলে যান। আর এইভাবেই এই জমিদার বংশের জমিদারীর ইতি ঘটে।
 নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী পূর্ণনির্দেশিত (নাগরপুর জমিদার বাড়ি)টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত। নাগরপুর চৌধুরীবাড়ী প্রতিষ্ঠা করেন যদুনাথ চৌধুরী। কথিত আছে কলকাতার আদলে নাগরপুরকে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এখান থেকেই তিনি জমিদারি পরিচালনা করতেন। বংশক্রমে দেখা যায় – এমন তার তিন ছেলেঃউপেন্দ্র মোহন চৌধুরী, জগদীন্দ্র মোহন চৌধুরী, শশাঙ্ক মোহন চৌধুরী ।বৃটিশ সরকার উপেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বড় ছেলে সতীশ চন্দ্র রায় চৌধুরীকে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্যে বিভিন্ন মুখীন সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রায় বাহাদুর খেতাবে ভূষিত করে। ছোট ছেলে সুরেশ চন্দ্র রায় চৌধুরী অপেক্ষাকৃত পাশ্চাত্য সংস্কৃতিঘেষা। তিনি ছিলেন অনেকের চেয়ে সৌখিন প্রকৃতির মানুষ।তিনি ছিলেন খুব ক্রীড়ামোদী। উপ-মহাদেশের বিখ্যাত ফুটবল দল ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারী। ১৯৪৭ এর দেশ বিভক্তির পর একসময় তদানিন্তন সরকার চৌধুরী বাড়ীর সকল সম্পদ অধিগ্রহণ করে।
 নলডাঙ্গা জমিদার বাড়িঝিনাইদহ জেলার। নলডাঙ্গা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা বিষ্ণুদাস হাজরা প্রথমে ছিলেন একজন সন্ন্যাসি। প্রথমত উক্ত জমিদারীর নাম ছিল হাজরা জমিদারী। পরে নলডাঙ্গা এলাকার নামানুসারে উক্ত জমিদারীর নামকরণ করা হয়। এরপর একের পর এক বংশপরামপণায় এই জমিদার বংশধররা প্রায় তিনশত বছর ধরে এই জমিদারীর জমিদারী পরিচালনা করেন। তাদের শাসনামলে এখানে প্রায় আটটি মন্দির তৈরি করেছিল। যেগুলো এখনো বেশ ভালো অবস্থায় রয়েছে।
 নিমতিতা জমিদার বাড়ি 
 নকিপুর জমিদার বাড়িসাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই এলাকার একজন প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। এই বাড়িতে প্রতিবছর দুর্গা পূজা হতো। হরিচরণ অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হন। তখন থেকে সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে নিলামে উঠা চৌহার্দিগুলো তিনি কিনে নিতেন। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি একজন স্বতন্ত্র জমিদার হয়ে উঠেন।
 নীকলি জমিদার বাড়ি 
 নবাবগঞ্জ জমিদার বাড়ি 
 নড়াইল জমিদার বাড়িনড়াইল জেলার নড়াইল সদর উপজেলার নড়াইল নামক এলাকায় অবস্থিত। শুরু হয় ১৭৯১ সালে রূপরাম রায়ের হাত ধরে। যা তখন ছিল নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর আওতায় একটি তালুকি বা তালুকদার। তবে রূপরাম রায়ের ছেলে কালী শঙ্কর রায় মূলত তালুকদার থেকে স্বতন্ত্রভাবে জমিদারী শুরু করেন। তাই তাকেই এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা হয়। জমিদার কালী শঙ্কর রায় ও তার পিতা রূপরাম রায় দুইজনই নাটোর রাজ সরকারের কর্মচারী ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ যখন ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অনেক খাজনা বাকী থাকায় তা নীলামে বিক্রি হতে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নাটোরের রানী ভবানীর কর্মচারী কালী শঙ্কর রায় নীলামে বিক্রীত জমিদারী ক্রয় করতে থাকেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় তিনি স্বতন্ত্রভাবে নড়াইল এলাকায় তার জমিদারীর সদরদপ্তর করে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে জমিদার কালী শঙ্করের নাতীরা নীল চাষের ব্যবসা করে আরো বেশি ধন-সম্পদের মালিক হন। এই জমিদার বংশধররা একের পর এক শিক্ষা ও এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিশাল ভূমিকা পালন করেন। আর এইভাবে এই জমিদারীর শেষ সময় চলে আসে ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে। জমিদার বংশধররা তখন সবাই কলকাতা চলে যান।
 নারায়ণডহর জমিদার বাড়িনেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার নারায়ণডহর নামক এলাকায় অবস্থিত। জমিদার রামচরণ মজুমদারের হাত ধরেই এই জমিদার বংশের গোড়াপত্তন।
 নাটোর রাজবাড়ীনাটোর সদর উপজেলায় অবস্থিত। ১৭০৬ সালে পরগণা বানগাছির জমিদার গণেশ রায় ও ভবানী চরণ চৌধুরী রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হয়ে চাকরিচ্যুত হন। দেওয়ান রঘুনন্দন জমিদারিটি তার ভাই রাম জীবনের নামে বন্দোবস্ত নেন। এভাবে নাটোর রাজবংশের পত্তন হয়। রাজা রাম জীবন চৌধুরী নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন ১৭০৬ সালে, মতান্তরে ১৭১০ সালে। ১৭৩৪ সালে তিনি মারা যান। ১৭৩০ সালে রাণী ভবানীর সাথে রাজা রাম জীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের বিয়ে হয়। রাজা রাম জীবনের মৃত্যুর পরে রামকান্ত নাটোরের রাজা হন। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্তের মৃত্যুর পরে নবাব আলীবর্দী খাঁ রাণী ভবানীর ওপর জমিদারি পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। রাণী ভবানীর রাজত্বকালে তার জমিদারি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, রংপুর, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদহ জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।                    
 নান্দিয়া জমিদার বাড়ি 
 নবাব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও এলাকায় অবস্থিত। ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সভ্রান্ত এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ে করেন আরেক জমিদার গাজী চৌধুরীকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আর ঐ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় পাওয়া দেনমোহরের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে তিনি নিজে একটি বাড়ি তৈরি করেন। ঐসময় জমিদারীর প্রশিক্ষণ নেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার জমিদারীর আওতায় প্রায় হোমনাবাদ পরগণার বর্তমান সময়ের কুমিল্লা জেলার মোট ১৪টি মৌজা ছিল। ১৪টি মৌজাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৪টি কাছারিঘর ছিল। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী জমিদার। বিশেষ করে নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে। তার জমিদারীর অধিকাংশ আয় এই নারী শিক্ষার পিছনে ব্যয় করতেন। তার এই সাহসী উদ্যোগ ও সাফল্যের কারণে তৎকালীন ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়া তাকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “নওয়াব” উপাধিতে ভূষিত করেন। যা পুরো ভারত উপমহাদেশে একমাত্র মহিলা হিসেবে তিনি এই উপাধি পান।
 নন্দিরহাট জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার নন্দীরহাট গ্রামে অবস্থিত। বাড়িটি নির্মাণ করেন জমিদার লক্ষ্মীচরণ সাহা। তবে জমিদার চালুর পিছনে মূলত তিনজন রয়েছেন। তারা হলেন শ্রী লক্ষ্মীচরণ সাহা, মাদল সাহা ও নিশিকান্ত সাহা। এই জমিদার বাড়ির শেষ জমিদার ছিলেন জমিদার লক্ষ্মীচরণ সাহার বড় ছেলে প্রসন্ন সাহা।
 নাটু বাবুর জমিদার বাড়িবরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে অবস্থিত। জমিদার প্রসন্ন কুমার রায় চৌধুরী ১৬০০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে উক্ত বাড়িটি জমিদার বাড়ির ও জমিদার বংশের শেষ জমিদার নাটু বাবুর নামানুসারে জনসাধারণের কাছে নাটু বাবুর জমিদার বাড়ি হিসেবে পরিচিত। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন বছর পর শেষ জমিদার এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দাতা নাটু বাবুকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা হত্যা করে।
 করিমগঞ্জ নয়াকান্দি জমিদার বাড়ি (ভূইয়া বাড়ি) 
 পুকুরিয়া জমাদার বাড়ী 
 পাকুটিয়া জমিদার বাড়ীটাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত। পশ্চিম বঙ্গ কলকাতা থেকে আসেন রামকৃষ্ণ সাহা মন্ডল (ধনাঢ্য ব্যক্তি)।ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তিনি পাকুটিয়ায় জমিদারী শুরু করেন। এই স্থান এর জমিদাররা তাদের প্রজাদের তাদের জিমিদার বাড়ির সামনা দিয়ে জুতা পায়ে বা ছাতা মাথাই দিয়ে যাইতে দিতো না।
 পাইল গাও এর জমিদারসুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার। এ জমিদার পরিবারের শেষ জমিদার ব্রজেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের কংগ্রেস সভাপতি এবং আসাম আইন পরিষদের সদস্য। মোহনরামের ঘরে দুর্লভরাম, রামজীবন, হুলাসরাম ও যোগজীবন নামে চার পুত্রে জন্ম হয়। এই চার ভাই দশসনা বন্দোবস্তের সময় কিসমত আতোয়াজানের ১ থেকে ৪ নং তালুকের যতাক্রমে বন্দোবস্ত গ্রহণ করে তালুকদার নাম ধারণ করে । এদের মধ্যে হুলাসরাম বানিয়াচং রাজ্যের দেওয়ানি কার্যালয়ে উঁচ্চ পদের কর্মচারী নিযুক্ত হন। হুলাসরাম চৌধুরী বানিয়াচং রাজ্যের রাজা দেওয়ান উমেদ রজার অনুগ্রহে আতুয়াজান পরগণায় কতেক ভূমী দান প্রাপ্ত হন। হুলাসরামের প্রাপ্ত ভূমীর কিছু কিছু চাষগুয্য ও কিছু ভুমী চাষঅযুগ্য ছিল। পরবর্তিতে হুলাসরাম চাষঅযুগ্য ভূমীগুলোকে চাষযুগ্য করে তুললে এগুলোই এক বিরাট জমিদারীতে পরিণত হয়ে উঠে[৩]। হুলাস রামের ভাতুষ্পুত্র বিজয়নারায়ণের একমাত্র পুত্র ব্রজনাথ চৌধুরী জমিদারি বর্ধিত করে এক প্রভাবশালী জমিদারে পরিণত হন। ব্রজনাথ চৌধুরীর দুই পুত্র রসময় ও সুখময় চৌধুরী। রসময় চৌধুরীর পুত্র ব্রজেন্দ্র নারায়নই ছিলেন এ বংশের শেষ জমিদার
 পুঠিয়া রাজবাড়ী পূর্ণনির্দেশিত (পাঁচআনি জমিদারবাড়ী)রাজশাহী জেলা সদর হতে ৩২ কি.মি. উত্তর- পূর্বে। সপ্তদশ শতকে মোগল আমলে তৎকালীন বাংলার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে পুঠিয়া জমিদারি ছিল প্রাচীনতম। কথিত যে জনৈক নীলাম্বর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের (১৬০৫—২৭ খ্রি.) কাছ থেকে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করার পর সেটি পুঠিয়া রাজবাড়ীরূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৭৪৪ সালে জমিদারি ভাগ হয়। সেই ভাগাভাগিতে জমিদারের বড় ছেলে পান সম্পত্তির সাড়ে পাঁচ আনা এবং অন্য তিন ছেলে পান সাড়ে তিন আনা।[১] ১৯৫০ সাল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা ছিল। প্রথা বিলুপ্ত হলে পুঠিয়া রাজবাড়ীর জমিদারিও বিলুপ্ত হয়।
 পুঁইছড়ি জমিদার বাড়ি 
 পাঙ্গা জমিদার বাড়িকুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় অবস্থিত। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে অনিরুদ্ধ অভিষেক করে, পাঙ্গা রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। এ কারণে অনিরুদ্ধ পাঙ্গা রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা।
 প্রতাপপুর জমিদার বাড়িফেনী জেলার অন্তর্গত দাগনভূঞা উপজেলার। প্রায় ১৭৬০ সালে এই জমিদার বাড়িটি নির্মিত হয়। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিন কড়ি সাহার দুই পুত্র রাম সুন্দর সাহা ও রামচন্দ্র সাহা। স্থানীয়দের কাছে এটি প্রতাপপুর বড় বাড়ি বা রাজবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। এই এলাকার আশেপাশে যত জমিদার ছিল সবার শীর্ষে ছিল এই জমিদার। এই জমিদার বংশধররা জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরও ২০০২ সাল পর্যন্ত এই জমিদার বাড়িটিতে ছিল।
 পানাইল জমিদার বাড়ি 
 পারেড় হাট জমিদার বাড়ি 
 পৃত্থিমপাশা জমিদার বাড়িমৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায়। ১৭৯২ সালে ইংরেজ শাসকদের পক্ষ হয়ে নওগা কুকিদের বিদ্রোহ দমনে মোহাম্মদ আলী গুরত্বিপূর্ন ভূমিকা রাখেন। ইংরেজ সরকার এতে খুশি হয়ে মোহাম্মদ আলীর পুত্র গাউস আলী খাঁনকে ১২০০ হাল বা ১৪,৪০০ বিঘা জমি দান করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে এউ জমিদারীর মালিক হন তার ছেলে আলী আহমদ খান। ১৮৭২ সালে ছেলে আলী আমজাদ খানের নামে একটি ক্লক টাওয়ার স্থাপন করেন যা এখন আলী আমজাদের ঘড়ি নামে বিখ্যাত। নবাব আলী আমজাদ খাঁন তখনকার সময়ে বৃহত্তর সিলেটের মধ্যে সবচেয়ে স্বনামধন্য এবং প্রভাবশালী জমিদার ছিলেনে। আলী আমজাদ খানের পুত্র নবাব আলী হায়দার খান ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।
 পাঁচুরিয়া জমিদার বাড়ি 
 পুরাতন জমিদার বাড়ি (রাজবাড়ি) 
 পাল বাড়ি জমিদার বাড়ি 
 পরৈকোড়া জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া গ্রামে অবস্থিত। জমিদার শান্তিরাম কানুনগো ১৬০০ শতকের দিকে এই জমিদার বংশের গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র দেওয়ান বৈদ্যনাথ এই জমিদারী পরিচালনা করেন। তিনি তার জমিদারীর আমলে তার নামানুসারে চট্টগ্রাম শহরে “দেওয়ান বাজার” নামে একটি হাট প্রতিষ্ঠা করেন। দেওয়ান বৈধ্যনাথের পরে জমিদারী পরিচালনা করেন তার পুত্র হরচন্দ্র রায়। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। তাই তিনি দত্তক নেন গিরিশ চন্দ্রকে। এরপর তিনিই এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যু হলে এই পুরো জমিদারীর হাল ধরেন যোগেশ চন্দ্র রায়। এরপর তিনি দক্ষতার সাথে এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ও প্রজাহিতোষী জমিদার। তিনি প্রজাদের সুবিধার জন্য অনেক রাস্তাঘাট, ব্রীজ-কালভার্ট ও পুকুর-দিঘী খনন করেন। এছাড়াও তিনি প্রজাদের চিঠি আদান-প্রদানের জন্য তার জমিদারী এলাকায় একটি পোস্ট অফিস এবং চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। তাই তিনি প্রজাদের কাছে একজন সু-পরিচিত জমিদার ছিলেন। তাই এখনো এই জমিদার বাড়িকে তার নামেই অনেকে চেনেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে “রায় বাহাদুর” উপাধি লাভ করেন। তারপরে তার ৩ পুত্র এই জমিদারী পরিচালনা করেন। তারা হলেন পূর্ণেন্দু, সুখেন্দু ও অমলেন্দু বিকাশ রায়।
 পূর্ব চন্দ্রপুর জমিদার বাড়ি 
 পুবাইল জমিদার বাড়ি 
 প্রসন্ন কুমার জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার পরৈকোড়া গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকে জমিদার প্রসন্ন কুমার রায় এই জমিদার বংশ এবং জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। তিনি খুবই প্রভাবশালী একজন জমিদার ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে রায় বাহাদুর উপাধি পান। প্রসন্ন কুমার রায়ের পরে তার ছোট ভাই ক্ষিরোদ রায় এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তিনি পেশায় একজন ম্যাজিস্ট্রেট ও চট্টগ্রাম জিলা বোর্ডের সচিব ছিলেন। এই জমিদার বংশের শেষ জমিদার ছিলেন অজিত কুমার রায়। তাদের জমিদারী ছিল ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত। এখনো অজিত কুমার রায় ও তার স্ত্রী এখানে বসবাস করতেছেন।
 পৌনে তিনআনী জমিদার বাড়ি 
 পায়রাবন্দ জমিদার বাড়িরংপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত। বেগম রোকেয়ার পিতা ছিলেন পায়রাবন্দের জমিদারীর সর্বশেষ জমিদার উত্তরাধিকারী। তার মাতা ছিলেন বলিয়াদী জমিদার বংশের কন্যা।
 ফুলদী জমিদার বাড়ি, কালিগঞ্জ-গাজীপুর। 
 ফুলবাড়ি জমিদার বাড়ি। 
 বলিহার রাজবাড়ী পূর্ণনির্দেশিত (বলিহার জমিদার বাড়ি)নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত। বলিহার জমিদার পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃসিংহ চক্রবর্তী। বলিহার জমিদার বাড়ির অনেক রাজা উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। তারমধ্যে কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর রাজা বিখ্যাত লেখক ছিলেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থাবলী প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড। দেশ বিভাগের সময়কালে বলিহারের রাজা ছিলেন বিমেলেন্দু রায়। দেশ বিভাগের সময় জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে বলিহারের রাজা বিমেলেন্দু রায় চলে যান ভারতে।
 বালিয়াটি প্রাসাদ পূর্ণনির্দেশিত (বালিয়াটি জমিদার বাড়ি)মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত।“গোবিন্দ রাম সাহা” বালিয়াটি জমিদার পরিবারের গোড়াপত্তন করেন। ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি লবণের বণিক ছিলেন। জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকারের মধ্যে “কিশোরীলাল রায় চৌধুরী, রায়বাহাদুর হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী তৎকালীন শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কিশোরিলাল রায় চৌধুরীর পিতা এবং যার নামানুসারে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয়।
 বেতিলা জমিদারবাড়িমানিকগঞ্জ জেলার সদর থানায় অবস্থিত। লোককথায় জানা যায় জ্যোতি বাবু নামের এক বণিক ছিলেন এই জমিদার বাড়ির পূর্বপুরুষ।
 বলিয়াদী জমিদার বাড়ীকালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত। আবু বকর রা.-এর ৩১তম পুরুষ চৌধুরী নাজেম উদ্দিন হোসেন সিদ্দিকী তালেবাবাদ পরগনার বলিয়াদী গ্রামে নতুন নিবাস স্থাপন করেন। তখন থেকে উক্ত পরিবার বলিয়াদীতে বসতি স্থাপন করেন। বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বলিয়াদী জমিদার পরিবার সর্বত্র বলিয়াদী সিদ্দিকী পরিবার হিসাবে পরিচিত। ৩৫ তম বংশধর খান বাহাদুর চৌধুরী কাজেম উদ্দিন আহম্মদ ১৯২৩ সালের ২ জুন ইংল্যান্ডের রাজার জন্মদিন উপলক্ষে খান বাহাদুর উপাদী লাভ করেন। তিনি ১৯০৫ সালে আসাম বেঙ্গল মুসলীম লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ৩৬তম বংশধর খান বাহাদুর চৌধুরী লাবিব উদ্দিন আহম্মদ সিদ্দিকী ১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজার দেয়া প্রদত্ত খান বাহাদুর উপাধি লাভ করেন।
 বালাপুর জমিদার বাড়িনরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর উপজেলার বালাপুর গ্রামে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা জমিদার বাবু নবীনচন্দ্র সাহা। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হলে তারা তাদের জমিজমা মন্দিরের নামে উইল করে দিয়ে এই দেশ ছেড়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান।
 বোয়ালিয়া জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত মতলব দক্ষিণ উপজেলায় অবস্থিত। চিরস্থায়ী বন্দবস্ত এর পরবর্তী সময়ে মহববতপুর গ্রামের রায় মজুমদার ও বোয়ালিয়া গ্রামের দে চৌধুরী মিলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তারা একসাথে এখানের জমিদারির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর বংশপরামপনায় এখানে জমিদারি চলতে থাকে। এই জমিদার বাড়ির জমিদাররা ছিলেন বেশ দানশীল। এরজন্য তাদের বেশ সুনাম ছিল যা এখনো রয়েছে। মতলবের মসজিদ ও জগন্নাথ মন্দির তৈরি করার জন্য জমিদার রাজকুমার চৌধুরী জায়গা দান করেছিলেন। জমিদার ললিত মোহন রায় চৌধুরী বোয়ালিয়া গ্রামে বোয়ালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা বিদ্যালয়, বাজার ও ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন। এইরকম তাদের অসংখ্য দানশীলতার চিহ্ন এখনো এখানে বিদ্যমান রয়েছে। দেশ ভাগের পর জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বাড়ির জমিদারিরও ইতি ঘটে।
 বাংগরা জমিদার বাড়ি 
 বলধা জমিদার বাড়িগাজীপুর জেলার গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের বলধা গ্রামে অবস্থিত। জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী জমিদার রাজ কিশোর রায় চৌধুরী। তার আমলে বর্তমান গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ ও গাজীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা তার জমিদারীর আওতাভুক্ত ছিল। জমিদার রাজ কিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন নিঃসন্তান। তাই তিনি এই জমিদারী টিকে রাখার জন্য হরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীকে দত্তক নেন। এই জমিদার হরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীই জমিদার বাড়ির অবকাঠামোতে পরিবর্তন আনেন।
 বাইশ রশি জমিদার বাড়িফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার বাইশরশি গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের দিকে এই বাইশরশি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। লবণ ব্যবসায়ী উদ্ধর চন্দ্র সাহা বিপুল অর্থসম্পত্তির মালিক হয়ে বাইশরশিতে অনেক জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন। ১৮২৪ সালে লর্ড ক্লাইভের সময়ে জমিদার উদ্ধর চন্দ্র সাহা বরিশালে কালিয়াতে জমিদারি কেনেন। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর ঐ সময়ের জমিদার ভারতে কলকাতায় বসে এখানের জমিদারী পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বংশের একজন ছাড়া বাকি সকলেই ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
 বক্তারনগর পুরোনো জমিদার বাড়ি 
 বালিয়াপাড়া জমিদার বাড়িনারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মণদি ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯০০ শতকে জমিদার মুকুন্দ মুরালি এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জমিদার হওয়ার আগে অন্য এক জমিদারের আওতায় একজন খাজনা আদায়কারী ছিলেন। এছাড়াও তিনি একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারী লাভ করেন। দেশ ভাগের পর তিনি তার জমিদারী এলাকার সকল সম্পত্তি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।
 বলাখাল জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হাজীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।  প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যোগেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী।
 বড়কুল জমিদার বাড়ি (ভাগ্যিতা বাড়ি)চাঁদপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হাজীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার পদ্মলোচন সাহা। তিনি ছিলেন খুবই শৌখিন।
 বামনডাঙ্গা জমিদার বাড়িগাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা নামক এলাকায় অবস্থিত। গোড়াপত্তনকারী জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায়। জমিদার কৃষ্ণকান্ত রায় ছিলেন গৌড় বংশীয় একজন ব্রাহ্মণ। গৌড় বংশীয়রা যখন সম্রাট আকবরের কাছে পরাজিত ও রাজ্যচ্যুত হন। তখন এই ব্রাহ্মণ অর্থাৎ কৃষ্ণকান্ত বর্তমান গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার * বামনডাঙ্গা নামক এলাকা পালিয়ে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং এখানে তার জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। বড় তরফের জমিদার তার জমিদারী ঠিকমত পরিচালনা করতে পারেননি এবং ব্রিটিশ সরকারকে খাজনা প্রদান করতে পারেননি। আর তাই বড় তরফের জমিদারী ১৯৪৬ সালে নিলামে উঠে যায়। যা মহারাজা কৃষাণ লাল সিংহ নামক একজন ক্রয় করেন। তবে বড় তরফের জমিদারী নিলামে বিক্রি হলেও ছোট তরফের দুই জমিদারের জমিদারী সুন্দরমতই চলতে থাকে। কিন্তু ভারতবর্ষ ভাগের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে এই জমিদার বংশের জমিদারীর সমাপ্তি ঘটে।
 বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর জমিদার বাড়িভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচরা ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা হলেন জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরী। তিনি ঐ সময়ে একজন প্রভাবশালী জমিদার ছিলেন। বর্তমানে তার নামেই ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার নামকরণ করা হয়। যা ব্রিটিশরা করেছিল।
 বড় উঠান জমিদার বাড়ি (মিয়া বাড়ি) 
 বালিহাকী জমিদার বাড়ি 
 বানারীপাড়া জমিদার বাড়ি 
 বোমাং রাজবাড়ী 
 বানিয়াচং রাজবাড়ি 
 বিরামপুর জমিদার বাড়িদিনাজপুর জেলায় অবস্থিত বিরামপুর উপজেলার। ব্রিটিশরা অষ্টাদশ শতকে ফুলবাড়ি জমিদারের পক্ষে খাজনা আদায়কারী হিসাবে রাজকুমার সরকারকে বিরামপুরের রতনপুর কাচারীতে প্রেরণ করা হয়। এখান থেকে তিনি বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ফুলবাড়ী এলাকার প্রজাদের নিকট থেকে নৈপুণ্য ও যোগ্যতার সাথে খাজনা আদায় করতেন। আদায়কারী কর্মদক্ষতায় সন্তুষ্ট হয়ে জমিদার তার বোনের সাথে রাজকুমারের বিয়ে দেয় এবং সাড়ে ৬শ বিঘা জমিসহ রতনপুর কাচারী উপহার দেন। সাধারণ আদায়কারী থেকে জমিদার বনে রাজকুমার আরো অধিক অর্থসম্পদের নেশায় মেতে ওঠেন। অপরদিকে একই মৌজায় আড়াইশত একর জমি ও অঢেল অর্থের মালিক রঘুহাসদা নামের একজন প্রতাপশালী সাঁওতাল ছিলেন। রাজকুমার সুযোগ বুঝে সাঁওতাল বঘু হাসদার কাছ থেকে ৫ বস্তা কাঁচা টাকা ধারে নিয়ে অন্য জমিদারের আরো ৩শ একর জমি নিলামে ডেকে ৫০ একর ফলের বাগান দখল করে নিয়ে উপকারী রঘু হাসদাকে বিতাড়িত করেন। রাজকুমারের মৃত্যু ঘটলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অঢেল সম্পদ, বাগান ও পুকুরসহ ১২শ বিঘা জমিদারী লাভ করেন রক্ষুনী রাজকুমার সরকার।বিরামপুর অঞ্চলের শাসক এবং জমিদার রখুনি কান্ত তার বসবাসের জন্য একটি বাড়ি নির্মাণ করে। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় সে এ স্থান থেকে চলে যায়।
 বাঘবেড় জমিদার বাড়িনেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বাঘবেড় নামক এলাকায় অবস্থিত।  পূর্বধলা উপজেলার আরেক জমিদার বংশ নারায়ণডহর জমিদার বংশের সাথে রক্তসূত্রে সম্পর্কিত।
 বাটিকামারী জমিদার বাড়িগোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাটিকামারী নামক স্থানে অবস্থিত।
 বাঞ্চানগর জমিদার বাড়ি (মিঞা বাড়ি) 
 বাঘাসুরা রাজবাড়ী 
 বেলাব জমিদার বাড়ি 
 বৈকুণ্ঠনাথ সাহা জমিদার বাড়ি 
 বিশ্বেরবাবু জমিদার বাড়ি 
 বাঁশপাড়া জমিদার বাড়িফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার বাঁশপাড়া গ্রামে অবস্থিত। জমিদার বিনোদ বিহারি এই বাঁশপাড়া জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন। এছাড়াও তিনি এখানে সাতটি মন্দির বা মঠ নির্মাণ করেন। যার জন্য অনেকে উক্ত বাড়িটিকে সাত মন্দির বা মঠের বাড়ি বলে থাকে। অনেকে আবার বিনোদ বিহারির বাড়ি বলেও ডেকে থাকে। বিনোদ বিহারি ভারতবর্ষ ভাগ হলে তিনি উক্ত জমিদারীর সকল সম্পত্তি ছেড়ে ভারতের কলকাতায় চলে যান।
 ভাওয়াল রাজবাড়ীঅবিভক্ত ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের ভাওয়াল রাজ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের গাজীপুর জেলায় অবস্থিত। ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায় ও আরো দুই ভাই মিলে এই জমিদারীর দেখাশোনা করতেন। ১৯৫০-এর পূর্ববঙ্গীয় রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে এটি বিলুপ্ত করা হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে দৌলত গাজী ভাওয়ালের গাজী এস্টেটের জমিদার ছিলেন। বলরাম রায় ছিলেন দৌলত গাজীর দিওয়ান। রাজস্ব আদায়নীতি পরিবর্তনের ফলে ১৭০৪ সালে বলরামের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ মুর্শিদ কুলি খানের দ্বারা ভাওয়ালের জমিদার হিসেবে স্থাপিত হন। তারপর থেকে অধিগ্রহণের মাধ্যমে জমিদারি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। ৪,৪৬,০০০ টাকায় নীল উৎপাদনকারী জে ওয়াইজের জমিদারি কেনার পর পরিবারটি সমগ্র ভাওয়াল পরগনার মালিক হয়।[৩] ১৮৭৭ সালে কালীপ্রসন্ন ঘোষ জমিদার রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর জন্য ভাওয়াল এস্টেটের দেওয়ান হন। বিংশ শতকের প্রথম দিকে একটি বিখ্যাত মামলা হয়েছিল যা ভাওয়ালের জমিদার বংশের রাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ণ রায়কে ঘিরে ও ভাওয়ালের সন্ন্যাসী মামলা নামে খ্যাত।[৫] এছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমার অভিনীত সন্ন্যাসী রাজা নামের বাংলা ছবিটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল যার ঘটনা এই রাজবাড়িকেই ঘিরে। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় রাজা রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ের অন্তর্ধান, ফিরে আসা ও পরবর্তীতে চলমান ভাওয়ালের সন্ন্যাসী মামলার কাহিনির উপর ভিত্তি করে এক যে ছিল রাজা চলচ্চিত্রটি নির্মান করেন।
 ভেতরবন্দ জমিদার বাড়িকুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভিতরবন্দ গ্রামে অবস্থিত।
 ভৈরব সওদাগরের জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ২নং ডাবুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাবুয়া গ্রামে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা জমিদার ভৈরব চন্দ্র সওদাগর। তিনি মূলত একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তাই তার নামের সাথে সওদাগর উপাধি যুক্ত হয়েছিল। তিনি বার্মা বর্তমান মায়ানমারে ব্যবসা করতেন। জমিদারের দুইজন পুত্র সন্তান ছিল। একজনের নাম তুষার পাল আরেকজনের ত্রিদিব পাল। তারা ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর তাদের সকল জায়গাজমি বিক্রি করে ভারতে চলে যান।
 ভবানীপুর জমিদার বাড়িনওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার অবস্থিত। জমিদার গির্জাশঙ্কর চৌধুরী এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তবে কবে নাগাদ এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়, তার সঠিক তথ্য জানা যায়নি। গির্জাশঙ্কর চৌধুরী তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই জমিদারী পরিচালনা করেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী এই জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার আমলেই এই জমিদারী আরো ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করে। এছাড়াও জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই জমিদার বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য তৎকালীন সময়ে জমিদার বাড়ির গেটে দুইজন নেপালী প্রহরী ছিল। জমিদার বংশধরের মধ্যে জমিদার প্রিয়শঙ্কর চৌধুরী ছিলেন সকলের কাছে বেশ সু-পরিচিত। তিনি জমিদার বাড়ির সৌন্দর্যসহ প্রজাদের সুবিধার জন্য তার জমিদারী এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেন। রাস্তাঘাট, পুকুর খনন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ করেন। তিনি ০৬ ছেলে ও ০৬ মেয়ের জনক ছিলেন। দেশ ভাগের পর জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে তিনি স্ব-পরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তার চতুর্থ পুত্র প্রতাপশঙ্কর এই সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে জমিদার প্রিয়শঙ্কর তার চতুর্থ ছেলে প্রতাপশঙ্করকে রেখে পরিবারের বাকী সদস্যদের নিয়ে কলকাতায় চলে যান। তারপর প্রতাপশঙ্কর চৌধুরী তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে এখানে বসবাস করতে থাকেন। তখন তিনি তার কর্মজীবন হিসেবে হাতিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং ২০০৫ সালে পরলোকগমন করেন। এখন এই জমিদার বাড়িতে তার পুত্র অভিজিৎ চৌধুরী বসবাস করতেছেন।
 ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িমুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল গ্রামে অবস্থিত। ১৯০০ শতকে জমিদার যদুনাথ রায় এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। যদুনাথ রায় ছিলেন মূলত একজন ব্যবসায়ী। তিনি বরিশাল থেকে সুপারি, লবণ ও শাড়ি আমদানি করে কলকাতার মুর্শিদাবাদে রপ্তানি করতেন। জমিদারদের মধ্যে হরলাল রায়, রাজা শ্রীনাথ রায় ও প্রিয়নাথ রায়ের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা তাদের কর্মযজ্ঞের ফলে ব্রিটিশদের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন। তখনকার সময় এই জমিদার বংশধররা সকলেই ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। জমিদার বংশধরদের অধিকাংশ এখন ভারতের মুর্শিদাবাদে বসবাস করতেছেন।
 ভাণ্ডারপাড়া জমিদার বাড়ি 
 ভুজপুর জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। জমিদার কাজী শাহাব উদ্দিনের দাদা মহব্বত সাধু ছিলেন গৌড় নগরের বাসিন্দা। পরে তিনি চট্টগ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। মহব্বত সাধুর ছেলে সাদাল্লাহর ঘরেই জন্ম নেন কাজী শাহাব উদ্দিন। পরে তিনি ১৮০০ শতকে এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন এবং জমিদারী পরিচালনা করেন। জমিদার কাজী শাহাব উদ্দিনের পর জমিদার হন তার পুত্র কাজী হায়দার আলী চৌধুরী।কাজী হায়দার আলীর পর জমিদার হন কাজি হাসমত আলী চৌধুরী।তিনি খুবই সু-পরিচিত ছিলেন।কাজি হাসমত আলী চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত কবি। তার উল্লেখযোগ্য রচনার মধ্যে ছিল আলিফ লায়লা ও চিনফগপুর শাহ নামের দুটি পুঁথি। এই জমিদার বংশের অনেক সুনাম ছিল। কারণ তারা তাদের জমিদারী এলাকায় অনেক সমাজসেবামূলক কাজ করেছেন। সুনামের পাশাপাশি এই জমিদার বংশের একটি দুর্নামও ছিল। সেটি হলো ফাঁসির মঞ্চের কারণে। জমিদার বাড়িতে একটি ফাঁসির মঞ্চ ছিল। যা মূলত ব্রিটিশদের সন্তুষ্টি করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।জমিদার বংশের সর্বশেষ জমিদার ছিলেন কাজী দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী।তার জমিদারী টিকে ছিল প্রায় ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত। জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটে।
 ভোজ রাজার বাড়ি 
 ভৈরব চন্দ্র সিংহের জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার মহিচাইলে অবস্থিত। শেষ জমিদার ছিলেন ভৈরব চন্দ্র সিংহ। তার নামেই উক্ত জমিদার বাড়িটি স্থানীয়দের কাছে বেশ পরিচিত। কারণ তিনি ছিলেন প্রজা হিতৈষী জমিদার।
 ভাউকসার জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার নামক স্থানে অবস্থিত।  ১৯০৩ সালে এই ভাউকসার জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত। তবে কার দ্বারা এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই জমিদার বংশধররা যে ইসমাল ধর্মালম্বী ছিলেন তা বুঝা যায় বাড়ির মধ্যে থাকা সুন্দর নান্দনিক মসজিদ দেখে।
 ভাটিপাড়া জমিদার বাড়ি 
 ভুরভুরি জমিদার বাড়ি (প্রকাশ ৩২নং সিকিমি এস্টেট ১২ ঘর চৌধুরী) 
 মুড়াপাড়া রাজবাড়ি পূর্ণনির্দেশিত (মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি)নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন বাবু রামরতন ব্যানার্জী যিনি এ অঞ্চলে মুড়াপাড়া জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হওয়ার পর জগদীশ চন্দ্র তার পরিবার নিয়ে কলকাতা গমন করেন। এরপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।
 মহিপুর জমিদার বাড়িরংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার। মহিপুর জমিদার ছিলেন মুঘল আমল থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত এক মুসলিম জমিদার। মহিপুর জমিদার ছিল কোচবিহার সরকারের কাজিরহাট চাকলা বা পরগণার অধীন একটি জমিদারি শাসন ব্যবস্থা। এই জমিদারীর স্থায়িত্ব ছিলো ১৭০০ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত। তিস্তা নদীর গ্রাসে জমিদার বাড়ি হারিয়ে গেলেও শতাধিক বছর পূর্বে জমিদার জিয়া উল্লাহ চৌধুরী ও খান বাহাদুর আব্দুল মজিদ চৌধুরী কর্তৃক নির্মিত জমিদারবাড়ি মসজিদ, কবর স্থান, শান বাঁধা পুকুর ও ইন্দারা এখনও অবশিষ্ট আছে।
 মুঘল সালতানাত মুড়শ্বীতাঁল্লুকদার বড়-বাড়ি, গোয়ারা ইটনা 
 মহেরা জমিদার বাড়িটাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে অবস্থিত। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়ীতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ীর কূলবধূ সহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে (১৯৭১)। পরবর্তীতে তারা লৌহজং নদীর নৌপথে এ দেশ ত্যাগ করেন।
 মুক্তাগাছার রাজবাড়ীময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলায়। জমিদার আচার্য চৌধুরী বংশ মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করেন। মুক্তাগাছার জমিদারদের একজন হরেরাম । এই হরেরামের বাড়িটি হচ্ছে বর্তমানে রাজবাড়ী। মুক্তাগাছার জমিদারীরর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর মেজো ছেলে। এ বংশের জমিদার আটানি বাড়ির জমিদার বলে পরিচিত। আটানির জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরীরর সুনাম ছিল। জগৎ কিশোরের ৪ পুত্র জীতেন্দ্র, বীরেন্দ্র, নৃসিংহ ও ভূপেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী। জীতেন্দ্র কিশোরের পুত্র হচ্ছেন জীবেন্দ্র কিশোর আচার্য চৌধুরী (জীবন বাবু)।
 মহারত্ন জমিদার বাড়ি 
 মন্থনা জমিদার বাড়িরংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার মন্থনা নামক স্থানে অবস্থিত। জমিদার বাড়ি ও বংশের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার অনন্তরাম। জমিদার অনন্তরাম কোচবিহার রাজার একজন কর্মচারী ছিলেন। তিনি একজন বারেন্দ্রীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন। কোচবিহার রাজার কর্মচারীর থাকা অবস্থায় তিনি উক্ত এলাকার জমিদারী লাভ করেন। তখন তিনি কোচবিহার মহারাজার শাসনাধীন আওতায় জমিদার ছিলেন। পরবর্তীতে ১৭১১ সালে মোঘল আমল বাহিনী কোচবিহার আক্রমণ করে। তখন কোচবিহারের যত কর্মচারী ও জমিদার ছিলো সকলেই মোগলদের পক্ষে যোগদান করেন। এই জমিদার অনন্তরামও তখন মোগলদের পক্ষে চলে যান এবং মোগলদের শাসনের আওতাধীন জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। একাধারে জমিদার বংশধররা এই জমিদার বাড়ির জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। জমিদার অনন্তরামের পুত্র যাদবেন্দ্র নারায়ণ, এরপর তার পুত্র রাঘবেন্দ্র নারায়ণ, এরপর তার পুত্র নরেন্দ্র নারায়ণ এই জমিদারীর পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ ছিলেন নিঃসন্তান। তাই তিনি নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব নেন তার স্ত্রী জয় দুর্গা দেবী। যিনি ইতিহাসে দেবী চৌধুরানী নামে পরিচিত। তার নাম ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয় তার কর্মফলের জন্য। কারণ তিনি একজন জমিদার হয়েও প্রজাদের সাথে প্রজা বিদ্রোহ ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলন একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
 মিঠাপুর জমিদার বাড়িমাদারীপুর জেলার মাদারীপুর সদর উপজেলার মিঠাপুর নামক গ্রামে অবস্থিত।  এই জমিদার বংশের কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম ইতিহাস থেকে জানা যায়। তারা হলেন জমিদার গোলাম মাওলা চৌধুরী, জমিদার গোলাম ছাত্তার চৌধুরী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর জি.ডাব্লুর চৌধুরী। এই জমিদার বংশধররা ছিলেন মুসলিম ধর্মালম্বী।
 মজিদপুর জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার মজিদপুর গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের দিকে শ্রী রামলোচন রায় এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার জমিদারীর আওতায় মেঘনা, তিতাস, হোমনা ও মুরাদনগর এলাকা ছিল। শ্রী রামলোচনের পরে তার বংশধররা দীর্ঘ ২০০ বছর যাবৎ এই জমিদারীর দেখাশুনা করেন। এই জমিদার বংশের মধ্যে কয়েকজন জমিদারের নাম ইতিহাসে পাওয়া যায়। তারা হলেন একাধারে শ্রী কালীচরণ রায়, ব্রজেন্দ্র কুমার রায়, শিবচরণ রায়, পিয়ারী মোহন রায়, বিহারী মোহন রায়, শশী মোহন রায়, শরত্চন্দ্র রায়, মোহিনী মোহন রায়, ক্ষিতিষ চন্দ্র রায়, গিরিশ চন্দ্র রায়, শিরিশ চন্দ্র রায়, হরলাল রায়, যোগেশ চন্দ্র রায়, শ্রী নারায়ণ চন্দ্র রায়, শ্রী দুর্গাচরণ রায়, ক্ষেত্র মোহন রায়, কুঞ্জ মোহন রায় ও উপেন্দ্র চন্দ্র রায়। তবে এই বংশের মধ্যে জমিদার রামলোচন রায় জমিদারের মত আরো দুইজন নামকরা জমিদার হলেন রাম সুন্দর রায় এবং রামগতি রায়। এই জমিদার বংশধররা ছিলেন অনেক অত্যাচারী। তারা মুসলমানদের উপর বেশি অত্যাচার করত। এছাড়া প্রজারা সুদ ও খাজনা দিতে বিলম্ব করলে তাদের সম্পত্তি জোর করে দখল করে নিয়ে যেত। তারা এতোই অত্যাচারী ছিল যে, জমিদার বংশের শিরিশ চন্দ্র রায় তার গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করে পরে পাগল হয়ে যান। তাই তাকে জমিদার বাড়ির একটি প্রকোষ্টে শিকল দিয়ে সবসময় বেঁধে রাখা হতো। পরবর্তীতে এই বেঁধে রাখা অবস্থাই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে ভারতবর্ষ ভাগ এবং জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে তারা তাদের জমিদারী ছেড়ে ভারতে চলে যান।
 মাধবপাশা জমিদার বাড়িবরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা নামক স্থানে অবস্থিত। প্রায় ১৪০০ শতক থেকে ১৬০০ শতক পর্যন্ত তারা স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন। পরবর্তীতে মুগল শাসনামলে ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামচন্দ্র মুগল বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর এটি রাজশাসন থেকে জমিদারে পরিণত হয়। অর্থাৎ মুগলদের শাসনের আওতাধীন তারা জমিদারী এলাকা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে এটি রাজপরিবার থেকে জমিদার পরিবারে পরিণত হয়। সেই মোতাবেক রামচন্দ্রই এই জমিদার বাড়ির প্রথম জমিদার। এরপর কীর্তিনারায়ণ, বাসুদেবনারায়ণ, প্রতাপনারায়ণ, প্রেমনারায়ণ, উদয়নারায়ণের, শিবনারায়ণ, লক্ষ্মীনারায়ণ ও জয়নারায়ণ জমিদার হন। তবে এই বংশের গোড়াপত্তনকারী ছিলেন চন্দ্রদ্বীপ রাজ। তিনি হলেন রাজবংশের গোড়াপত্তনকারী এবং প্রথম রাজা। ব্রিটিশ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দবস্ত এর সময় জমিদার ছিলেন জয়নারায়ণ।তখন এর রাজস্ব ধরা হয়েছিল ৮৩০০০ সিক্কা। যা জয়নারায়ণের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব ছিলো না। যার ফলস্বরূপ ১৭৯৯ সালে এই জমিদারী নিলামে উঠে। নিলামের মাধ্যমে এই জমিদারীর অধিকাংশ ক্রয় করেন সিংহ, জর্জ প্যানিয়াটি এবং মানিকমুদি নামে তিনজন। পরে জমিদারীর কিছু অংশ বাকী থাকে। আর এইভাবে বড় একটি রাজপরিবার থেকে জমিদার। আবার জমিদার থেকে একদম নিঃস্ব হয়ে যায় জমিদার বংশধররা। অবশেষে ১৯৫০ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তীর আইনের মধ্য দিয়েই এই জমিদার বাড়ির জমিদারীর অবসান ঘটে।
 মানব বাবুর জমিদার বাড়ি 
 মোকনা জমিদার বাড়ি 
 মকিমাবাদ জমিদার বাড়ি 
 মকিমপুর জমিদার বাড়ি 
 মনু মিয়ার জমিদার বাড়ি (ঘোড়াশাল জমিদার বাড়ি)নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল এলাকায় অবস্থিত। এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা জমিদার মনু মিয়ার পিতা “আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির।” আবার আরেকটি মতে এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা “গোলাম নবী।” এনার ডাকনাম ছিলো ফেনু মিয়া। এখানে মনু মিয়ার বাড়ির পাশাপাশি আরো দুইজনের বাড়ি রয়েছে। তারা হলেন নাজমুল হাসান ও মৌলভি আব্দুল কবির। তারাও এই জমিদার বংশধর।
 মিয়ার দালানঝিনাইদহ জেলার সদর থানার মুরারীদহে অবস্থিত। প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী ইমারতের প্রধান ফটকে নির্মাণ সময়ের কিছু কথা কাব্যিক ভাবে খোদাই করা আছে। তাতে লেখা, ‘শ্রী শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিব হুরির বাখান। ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জলমাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।‘
 মহাদেবপুর জমিদার বাড়িনওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় অবস্থিত। মহাদেবপুর জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা নয়নচন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেছিলেন।  মুঘলদের বাংলা বিজয়ে সহযোগিতা করার জন্য নয়নচন্দ্র রায় চৌধুরী সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে পুরস্কার স্বরূপ মহাদেবপুরের জমিদার ব্যবস্থা লাভ করেন। এই জমিদারি পরিচালনা করার জন্য জমিদার বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল। সেই সময়েই সম্রাট জাহাঙ্গীরের সম্মানার্থে তার নামানুসারে মহাদেবপুরের নামকরণ হয় জাহাঙ্গীরপুর।মহাদেবপুর জমিদারির শেষ জমিদার ক্ষিতিশচন্দ্র রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িটির কিছু অংশ জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য দান করেন।
 মাতুভুঁইয়া জমিদার বাড়ি 
 মুকুন্দিয়া জমিদার বাড়িরাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর উপজেলার মুকুন্দিয়া গ্রামে অবস্থিত। জমিদার দ্বারকানাথ সাহা এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার জমিদারী আমলে খুবই প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে বাবার স্মৃতিস্বরূপ একটি মঠ নির্মাণ করেন।
 মঘাদিয়া জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়নের মঘাদিয়া গ্রামে। এই জমিদার বংশধররা ছিলেন ইসলাম ধর্মালম্বী। এই জমিদার বংশের সবচেয়ে পরিচিত জমিদার ছিলেন জমিদার নুরুল আবছার চৌধুরী। তিনি ১৮৯৫ইং সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই জমিদার বংশের শেষ জমিদার। তিনি দয়ালু, সততা ও ন্যায়ের সাথে জমিদারী পরিচালনা করাতে প্রজাদের কাছে অতি তাড়াতাড়ি পরিচিত হয়ে উঠেন। তিনি অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। তিনি তার মায়ের নামে প্রাথমিক স্কুল, নিজের নামে উচ্চ বিদ্যালয়, শান্তিরহাট নামে শান্তিরহাট বাজার। এছাড়াও অসংখ্য এতিমখানা তৈরি করেছিলেন। তিনি তৎকালীন সময়ে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বাংলার মুখ্য মন্ত্রী শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক এর সাথে রাজনীতি করেছেন এবং তার একজন ভালো বন্ধু ছিলেন।
 মহেন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়িপটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই জমিদারী ক্রয় করেন দক্ষিণা রঞ্জন রায় আরেকটি মতে হরে কৃষ্ণ সাহা। যারা মূলত ফরিদপুর জেলার বাইশরশি জমিদার বংশধর। বাইরশি জমিদারদের কয়েকটি জমিদারীর মধ্যে এটি ছিল একটি।
 মং রাজবাড়িখাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মহামূনি নামক স্থানে অবস্থিত। প্রায় ১৭৯৬ সালে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি উপজেলার মহামূনি নামক স্থানে রাজা কংজয় ত্রিপুরা রাজবংশের রাজকন্যাকে বিয়ে করে ত্রিপুরা রাজ্যের পাঁচশত পরিবার নিয়ে এখানে এসে এই রাজবংশ ও রাজবাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তবে তিনি এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করলেও ভারত ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে প্রথম রাজা ও রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তার পুত্র কিওজা স্বীকৃতি পান। রাজা কিওজার বয়স যখন মাত্র সাত বছর, তখন তার বাবা কংজয় ১৮২৬ সালে মারা যান। তাই এই রাজশাসন পরিচালনার জন্য একই বছর কিওজাকে সাত বছর বয়সেই সিংহাসনে আহরণ করতে হয়।
 মীর্জা নগর নবাব বাড়িযশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায় অবস্থিত। শুধুমাত্র মোঘল শাসনামলে কোনো এক মোঘল ফৌজদার এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায়।
 মাধবদী গুপ্তরায় জমিদার বাড়িনরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী গ্রামে অবস্থিত। বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খানের শাসনামলে মুন্সি বিশ্বনাথ জায়গীরদারি ক্রয় করে এখানে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার বিশ্বনাথ বিভিন্ন ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। তিনি একাধারে বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন। যার ফলস্বরূপ তিনি মুঘলদের কাছ থেকে এই মুন্সি খেতাব লাভ করেন। তিনি জমিদারী প্রতিষ্ঠা করার পর পরবর্তীতে তার বংশধররা এখানে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। এই জমিদার বংশধরদের হাত ধরেই বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের বাজার “বাবুরহাট” প্রতিষ্ঠিত হয়।
 মোহিনী মোহন জমিদার বাড়ি 
 মনোহরদী জমিদার বাড়ি 
 মন্টুবাবুর জমিদার বাড়ি 
 যদুনাথ চৌধুরীর জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার বড়-য়া পাড়া গ্রামে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার যদুনাথ চৌধুরী।  ১৯৫৭ সালে জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির পর জমিদার যদুনাথ চৌধুরী অনেক সম্পদ বিক্রি করে ফেলেছেন। এছাড়াও তার মৃত্যুর পর তার ছেলেমেয়েরাও অনেক সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলেছেন। আবার অনেক সম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে।
 রূপসা জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়নে অবস্থিত। প্রায় ২৫০ বছর আগে বংশাল গ্রামের বর্তমান খাজুরিয়া গ্রামের হিন্দু জমিদারদের জমিদারির পতন হলে ব্রিটিশদের কাছ থেকে এই জমিদারি কিনে নেন রূপসা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি রূপসা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে কিছু মতামত রয়েছে। একটি মতে এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আহম্মদ রাজা নামের একজন। আর আরেকটি মতে এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মোহাম্মদ গাজী নামের একজন। তবে বেশি প্রসিদ্ধ হচ্ছে আহম্মদ রাজা নামের একজনই এই রূপসা জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা। আর ওনার সন্তান ছিলেন মোহাম্মদ গাজী। আহম্মেদ রাজার মৃত্যুর পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব গ্রহণ করেন মোহাম্মদ গাজী। তারপর মোহাম্মদ গাজীর মৃত্যুর পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারিত্ব পান তার সন্তান আহমেদ গাজী। এই জমিদাররা খাজনার জন্য প্রজাদের উপর কখনো অত্যাচার জুলুম করতেন না। উল্টো প্রজাদের দুঃখ-দুর্দশার সময় তাদেরকে সাহায্য করতেন। তাই তাদেরকে প্রজারা অনেক শ্রদ্ধা করত, যা এখনো বিদ্যমান রয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে। এই রূপসা জমিদার পরিবারের একজন হলেন খান বাহাদুর আবিদুর রেজা চৌধুরী। তিনি ব্রিটিশ শাসনামলে নামকরা রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী ছিলেন। এই জমিদার বাড়ির বংশধররা এখনো এই বাড়িটিতে বসবাস করতেছেন।
 রায়পুর জমিদার বাড়িরংপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত পীরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। আখিরা নদীর ধারঘেঁষে রায়পুরের জমিদার লাসমন সিংয়ের বাড়ি। তার মৃত্যুর পর দেশবিভাগের আগে ছেলে মুরালি সিং ও বদি সিং ভারতে চলে যান। কনিষ্ঠ ছেলে বীরেন সিং জমিদারবাড়িতে থেকে যান। পরে তিনিও চলে যান ভারতে। লাসমন সিংয়ের ১৯শ’ বিঘা জমি পড়ে থাকে পীরগঞ্জসহ এ উত্তরের জনপদে। এরপর জমিদারবাড়ি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এ বিশাল সম্পত্তির মালিক বনে যান। দেশ স্বাধীনের পর এই জমিদারবাড়ির ভিটাটুকুও দখল করে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। জমিদার বীরেন ভারতে যাওয়ার আগে আখিরা নদীর তীরবতী জমিদারবাড়ি ও বেশকিছু সম্পত্তি দান করে যান রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়কে।
 রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি (রায়েরকাঠি রাজবাড়ি)পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর উপজেলার রায়েরকাঠি গ্রামে অবস্থিত। মোগল সম্রাটের শাসনামলে যুবরাজ সেলিম অর্থাৎ সম্রাট জাহাঙ্গীর বিদ্রোহ করে বর্তমান পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ নিয়ে “সেলিমাবাদ” নামে একটি পরগণা সৃষ্টি করেন। পরবর্তীতে তিনি উক্ত এলাকার রাজস্ব আদায়ের জন্য মোদন পালকে দায়িত্ব দেন। মোদন পাল আবার তার ছেলে শ্রীনাথকে উক্ত রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব দেন। রাজস্ব আদায়ের জন্য শ্রীনাথ বর্তমান ঝালকাঠির লুৎফুবাদ নামক গ্রামে একটি কাছারিঘর স্থাপন করেন এবং সেখান থেকে অতি সু-দক্ষতার সাথে রাজস্ব আদায়ের কাজ পরিচালনা করতে থাকেন। যার ফলস্বরূপ তিনি মোগল সম্রাটের কাছ থেকে “রাজা” উপাধি লাভ করেন। এরপর রাজা শ্রীনাথের ছেলে রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বর্তমান পিরোজপুরের রায়েরকাঠি এলাকায় বিশাল বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জমিদার বাড়ি তৈরির সময় কালী মন্দিরও তৈরি করছিলেন। এই কালী মন্দির তৈরি করতে গিয়ে তিনি তখনকার সময়ের নিম্নবর্ণের হিন্দু পাঁচজনের মুণ্ডু কেটে তার উপর মূর্তি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে তার এই নিষ্ঠুর কার্যক্রমের কথাটি ঢাকার প্রাদেশিক সুবেদার শাহবাজ খানের কানে যায়। এতে তিনি রাগান্বিত হয়ে বিচার করে রুদ্র নারায়ণকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। যা হাজার হাজার মানুষের সামনে বাঘের খাঁচায় তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি খাঁচার মধ্যে বাঘের সাথে লড়াই করে বাঘকে মেরে ফেলেন। এ খবর সুবেদারের কাছে গেলে তিনি রুদ্র নারায়ণের মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করে দেন। এতে রুদ্র নারায়ণ তার এই নিষ্ঠুর কৃতকর্মে লজ্জিত হয়ে জমিদার বাড়িতে না ফিরে ছেলে নরোত্তম নারায়ণ রায়কে জমিদারীত্ব দিয়ে কাশি চলে যান। সেখানে তিনি আমৃত্যু সন্ন্যাস জীবন পালন করেন।’
 রজনী কান্ত পাল জমিদার বাড়ি 
 রাজসুরত জমিদার বাড়ি 
 রাজবাড়ি 
 রাধানন্দ জমিদার বাড়িহবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ সদর উপজেলার। জমিদার রাধানন্দ এই জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তার নামই এখন এটি সকলের কাছে পরিচিত।জমিদার হিসেবে রাধানন্দ বাবু প্রজাদের কাছে খুবই ভালো একজন লোক ছিলেন। তিনি প্রজাদের সুখ-দুঃখ বিবেচনা করেই জমিদারী পরিচালনা করতেন। তিনি স্কুল প্রতিস্থাপনের জন্য প্রায় ৫৮ শতক জায়গা তার বাড়ির পাশেই দান করে “রাধানন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়” নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমিদার রাধানন্দের পরে তার দুই পুত্র জমিদার রাজেন্দ্র বাবু ও জমিদার রবিন্দ্র বাবু এই জমিদার বাড়ি পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর তারা স্বপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে যান।
 রাজা টংকনাথের রাজবাড়িঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত। কাটিহার নামক জায়গায় গোয়ালা বংশীয় নিঃসন্তান এক জমিদার বাস করতেন । উক্ত জমিদারের মন্দিরে সেবায়েত হিসাবে কাজ করতেন টংকনাথের পিতা বুদ্ধিনাথ । গোয়ালা জমিদার ভারত এর কাশি যাওয়ার সময় তাম্রপাতে দলিল করে যান যে, তিনি ফিরে না এলে মন্দিরের সেবায়েত বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হবেন । গোয়ালা জমিদার ফিরে না আসায় বুদ্ধিনাথ জমিদারির মালিক হন । তবে অনেকে মনে করেন এই ঘটনা বুদ্ধিনাথ দু-এক পুরুষ পূর্বেরও হতে পারে। জমিদার বুদ্ধিনাথের দ্বিতীয় ছেলে টংকনাথ তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের আস্থা অর্জন করার জন্য মালদুয়ার স্টেট গঠন করেন । বিভিন্ন সময় সমাজ সেবা মূলক কাজের জন্য ১৯২৫ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার টংকনাথকে চৌধুরী উপাধিতে ভূষিত করেন। পরবর্তীতে দিনাজপুরের মহারাজা গিরিজনাথ রায়ের বশ্যতা স্বীকার করে রাজা উপাধি পান।   পরে রাজা টংকনাথের স্ত্রী রাণী শংকরী দেবীর নামানুসারে মালদুয়ার স্টেটের নাম করণ করা হয় রাণীশংকৈল। দেশভাগের প্রাক্কালে রাজা জমিদারি ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান । এর মধ্য দিয়ে মালদুয়ার স্টেট রাজা টংকনাথ চৌধুরীর জমিদারি পরম্পরার সমাপ্তি ঘটে।
 রোয়াইল জমিদার বাড়ি 
 রাউতারা জমিদার বাড়ি (রুধেষ বাবুর জমিদার বাড়ি)সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত। জমিদার রুধেষ বাবু ছিলেন একজন অত্যাচারী জমিদার। যা এখনো এখানের লোকমুখে রচিত আছে। ১৯৫৭ সালের জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির মধ্য দিয়েই এই জমিদার বাড়ির জমিদারীরও সমাপ্তি ঘটে। আর তখনই জমিদার রুধেষ বাবু তার বংশধরদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে যান।
 রামপাশার জমিদার বাড়ি এটি (হাছন রাজার জমিদার বাড়ি) হিসেবে বেশ পরিচিত।সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলা অবস্থিত। মরমি কবি হাসন রাজার বাড়ি হিসেবে বেশ পরিচিত। হাছন রাজার পূর্ব পুরুষরা ছিলেন হিন্দু ধর্মালম্বী। এই জমিদার বাড়ির মূল প্রতিষ্ঠাতা কে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। একটি সূত্র অনুযায়ী এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা যায় বিরেন্দ্রচন্দ্র সিংহদেব (বাবু খান)। তিনিই হিন্দু ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। হাছন রাজার পিতা দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ছিলেন উক্ত জমিদারী এলাকার একজন প্রভাবশালী জমিদার। প্রথম জমিদারী বয়সে হাছন রাজা ছিলেন একজন ভোগবিলাসী জমিদার। পরবর্তীতে এক আধ্যাত্নিক স্বপ্নের মাধ্যমে তার জীবনের মোড় পাল্টে যায়। তিনি বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে সাধারণভাবে চলাফেরা করতে শুরু করেন। শেষপর্যন্ত পরিণত বয়সে তিনি বিষয় সম্পত্তি বিলিবণ্টন করে দরবেশ-জীবন যাপন করেন। তার উদ্যোগে হাসন এম.ই. হাই স্কুল, অনেক ধর্ম প্রতিষ্ঠান, আখড়া স্থাপিত হয়।
 রেফায়েতপুর জমিদার বাড়ি 
 রায়গঞ্জ সান্যাল জমিদার বাড়ি 
 রামধন জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে অবস্থিত। জমিদার রামধন ধর এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
 রায়পুর চুন্নু মিয়া জমিদার বাড়ি (গজনফর আলী চৌধুরী) 
 রামগঞ্জ শ্রীরামপুর রাজবাড়ি 
 রামচন্দ্রপুর জমিদার বাড়ি 
 রূপলাল হাউজপুরান ঢাকার শ্যামবাজার এলাকায়। ভবনটি নির্মাণ করেন হিন্দু ব্যবসায়ী ভ্রাতৃদ্বয় রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস। রূপলাল দাস (১৮৪৫-১৯১৩) ঢাকার জমিদার ও ব্যাংকার ছিলেন। রূপলাল ঢাকার বিখ্যাত আর্মেনীয় জমিদার আরাতুনের কাছ থেকে বাড়িটি কিনে পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগকালে রূপলালের উত্তরাধিকাররা ঢাকা ত্যাগ করে পশ্চিম বঙ্গে চলে যান।
 রামগোপালপুর জমিদার বাড়িময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলায় অবস্থিত। প্রায় ১৮৫০ শতকের দিকে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাশী কিশোর রায় চৌধুরী রায় ছিলেন এই জমিদার বংশের একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি। যোগেন্দ্র কিশোরা রায় চৌধুরী, শৌরিন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, হরেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী।
 রেজওয়ান খানের জমিদার বাড়িসাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮১৪-১৮১৫ শতাব্দীতে জমিদার রেজওয়ান খান সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলায় এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। বর্তমানে এই জমিদার বাড়িতে জমিদার বংশধররা বংশপরামপণায় বসবাস করে আসতেছেন।
 রাখাল রাজার জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কমলপুর নামক এলাকায় অবস্থিত। প্রায় ১৭০০ শতাব্দীর শেষের দিকে জমিদার রাখাল রাজা  এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার রাখাল রাজা ছিলেন অত্যাচারী জমিদার। তিনি তার জমিদারী আওতাভুক্ত এলাকার মুসলিম সুন্দরী রমণীদেরকে তার পাইকপেয়াদা দিয়ে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতেন এবং পরবর্তীতে তাদেরকে মেরে পেলতেন। আর এইসব অত্যাচারের ফলে অনেক মুসলিম পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। পরবর্তীতে জমিদারী এলাকার সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে জমিদার রাখাল রাজার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে থাকেন। আর এই আন্দোলনের ফলে জমিদার রাখাল রাজা তার পরিবার নিয়ে জমিদারী ছেড়ে পালিয়ে যায় অন্যত্র।
 রুদ্রকর জমিদার বাড়িশরীয়তপুর জেলার শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত।  জমিদার নীলমণী চক্রবর্তী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত করেন।
 রূপসদী জমিদার বাড়িব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী গ্রামে অবস্থিত। জমিদার তীর্থবাসী চন্দ্র রায় ১৯১৫ সালে ভারত থেকে নকশা ও রাজমিস্ত্রী এনে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। তার পুত্র জমিদার মহিষ চন্দ্র রায় তার দাদার নামে এখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
 রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ-দুর্গমাগুরা সদর উপজেলায়। মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের একজন আমলা সীতারাম রায় এ প্রাসাদ-দুর্গটি নির্মাণ করেছেন, যিনি আমলা থেকে জমিদারি এবং পরে স্বীয় প্রতিভাবলে রাজা উপাধি লাভ করেন। উপাধি লাভের পর সীতারাম রায় রাজার মতোই রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন এবং সেনাবল বৃদ্ধি করে তিনি পার্শ্ববর্তী জমিদারদের ভূ-সম্পত্তি দখল করেন। তিনি নবাব সরকারের রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে স্বাধীন, সার্বভৌম রাজার মতোই জমিদারিতে প্রবর্তন করেন নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। জমিদারি সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে সীতারাম এ স্থানটিতে গড়ে তোলেন দুর্ভেদ্য দুর্গ, কাঁছারিবাড়ি, পরিখা পরিবেষ্টিত রাজপ্রাসাদ, পূজার্চনার জন্য দেবালয় নির্মাণ, জনহিতার্থে খনন করেন বেশ কিছু বিশালাকার জলাশয়। মাগুরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার নামে কিছু এলাকা এবং পুকুর।
 রায়পুরা জমিদার বাড়ি 
 লোহাগড় জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোহাগড় গ্রামে অবস্থিত। মানিক সাহা (লৌহ) ও রূপক সাহা (গহড়) নামের দুই সহদোর ভাই এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন।বর্তমানে তাদের উপ নামানুসারে উক্ত গ্রামের নাম লোহাগড়। তখনকার সময়ে তারা উক্ত এলাকার খুবই প্রভাবশালী ও অত্যাচারী জমিদার ছিলেন। তারা এতোই অত্যাচারী ছিল যে, তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে কোনো গর্ভবতী মহিলা হেটে যাওয়ার সময় তারা দুই ভাই বাজি ধরতো এই বলে যে, এক ভাই বলতো এই মহিলার পেটে ছেলে সন্তান রয়েছে। অন্য ভাই বলতো এই মহিলার পেটে মেয়ে সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে তা যাচাই করার জন্য ঐ গর্ভবতী মহিলার পেট কেটে তারা তা যাচাই করত। এইভাবে যে জয়লাভ করতো সে অট্টোহাসিতে ভেঙ্গে পড়ত আর আনন্দ উপভোগ করত।[১] একটি সূত্র থেকে জানা যায় ব্রিটিশদের হাতে পতন হওয়া বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিশ্বাসঘাতক কর্মচারী রাজবল্লভের ছেলে কৃষ্ণবল্লভ খাজনার টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে এসে এই জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল।
 লুধুয়া জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় অবস্থিত। জমিদার ছিরাপদি মিয়াজি প্রায় ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি এখানে তার জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন খুবই অত্যাচারী জমিদার। তারা মোট তিন ভাই ছিলেন। তার জমিদারী আওতায় মতলব উত্তরের অধিকাংশ এলাকাই ছিল।
 লাকুটিয়া জমিদার বাড়িবরিশাল জেলার বরিশাল সদর উপজেলার লাকুটিয়া গ্রামে অবস্থিত। ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে জমিদার রাজচন্দ্র রায় নির্মাণ করেন। রাজচন্দ্রের পুত্র পিয়ারীলাল রায় একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠিত ব্যারিস্টার ও সমাজসেবী ছিলেন। তাঁর দুই পুত্র বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রলাল রায় এবং বক্সার পরেশলাল রায়। তবে এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রূপচন্দ্র রায়। জমিদার বংশের লোকেরা অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। তারা তখনকার সময়ে উল্লেখযোগ্য “রাজচন্দ্র কলেজ” ও “পুষ্পরানী বিদ্যালয়” নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এখানে তাদের কোনো উত্তরসূরি নেই। এখানে শেষ জমিদার ছিলেন দেবেন রায় চৌধুরী। পরে তিনি ভারতের কলকাতায় স্ব-পরিবারে চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
 লকমা জমিদার বাড়িজয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৫০০-১৬০০ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা করেন জমিদার হাদী মামুন চৌধুরী। কথিত আছে এই জমিদার বাড়ির জমিদাররা ছিলেন খুবই অত্যাচারী ও নিষ্ঠুর। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার অনেক আগেই এই জমিদার বাড়ির জমিদারী শেষ হয়ে যায়। কারণ এরা অত্যাচারী হওয়াতে গায়েবি মাধ্যমে এদেরকে জমিদার বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। তারপর তারা তাই করেন এবং এরপর থেকেই এখানের জমিদারী বিলুপ্ত হয়।
 লক্ষ্মীমন্দার জমিদার বাড়ি 
 লালা বাবুর জমিদার বাড়ি, 
 লক্ষীকোলের রাজার বাড়ি, 
 লক্ষণ সাহার জমিদার বাড়িনরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ডাংগা নামক এলাকায় অবস্থিত। জমিদার লক্ষণ সাহা এই জমিদার বংশের মূল গোড়াপত্তনকারী।তাদের কখনো তারা যে জমিদারের আওতাভুক্ত ছিলেন তাদেরকে বা ব্রিটিশ সরকারকে খাজনা দিতে হয়নি। কারণ এই জমিদারী এলাকাটি ভারত উপমহাদেশের মধ্যে একমাত্র এলাকা ওয়াকফ হিসেবে ছিল। লক্ষণ সাহার তিন পুত্র সন্তান ছিল। এদের মধ্যে ছোট ছেলে ভারত ভাগের সময় ভারতে চলে যান। এরপর পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে বড় ছেলেও ভারতে চলে যান। থেকে যান মেঝো ছেলে। তার ছিল এক পুত্র সন্তান। যার নাম ছিল বৌদ্ধ নারায়ণ সাহা। এই বৌদ্ধ নারায়ণ সাহাই পরবর্তীতে আহম্মদ আলী উকিলের কাছে উক্ত বাড়িটি বিক্রি করে দেন। তাই আহম্মদ আলী সাহেব পেশায় একজন উকিল হওয়াতে বর্তমানে অনেকে এই বাড়িটিকে উকিল বাড়ি নামেও চিনে।
 লাখপুর জমিদার বাড়ি 
 শিবগঞ্জ জমিদার বাড়ি মহাদেবপুর 
 🇧🇩 শাখাইতি জমিদার বাড়ী 
 শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ীকালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত। শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেটের প্রধান কর্ণধার খোদা নেওয়াজ খানের কনিষ্ঠ পুত্র রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরী’র হাত ধরে এই শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ীর গোড়াপত্তন ঘটে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়, সমাজসেবা ও দানশীলতায় তিনি সমসাময়িক অন্যান্য জমিদারদের তুলনায় অগ্রগামী ছিলেন।
 শৈলকুপা জমিদার বাড়িঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার আবাইপুর গ্রামে অবস্থিত। জমিদার রামসুন্দর শিকদার ১২০০ বঙ্গাব্দের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই জমিদার বংশের আগের বংশগত উপাধি ছিল তিলিকুণ্ড। পরবর্তীতে জমিদার রামসুন্দর শিকদারের ঠাকুর দাদা কার্তিক শিকদার মুর্শিদাবাদের নবাবের কাছ থেকে এই শিকদার উপাধি লাভ করেন। তখন থেকেই তারা তিলিকুণ্ড সম্প্রদায় থেকে শিকদার সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত হন। পরে তার সন্তানেরা সকলে মিলে তার জমিদারী ও ব্যবসা দেখাশুনা করেন। তারা “শিকাদর অ্যান্ড কোম্পানি” নামে পাট ব্যবসা করে বাংলা ১৩০৪ সালে আরো বেশি ব্যবসায় সফলতা অর্জন করেন। বাংলা ১৩১৯ সালে তাদের কোম্পানির পাট বিশ্বের মধ্যে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা লাভ করে। যার ফল সরূপ তখনকার ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল “লর্ড কার্জন” তাদের কোম্পানিকে “প্রিন্স অব জুট বেলার্স” উপাধি প্রদান করেন।
 [[শিতলাই জমিদার বাড় 
 শুক্তাগড় জমীদার বাড়ি। 
 শালংকা জমিদার বাড়ি (কিশোরগঞ্জ)আওরঙ্গজেব মসজিদ 
 শ্রীযুক্ত বাবু শরৎচন্দ্র রায়ের জমিদার বাড়ি 
 শেরপুর জমিদার বাড়ি 
 শ্রী জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ রায়ের জমিদার বাড়িরংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। রাজবাড়ি’টির জমিদার শ্রী জ্ঞানেন্দ্র নারায়ণ রায় দেশ বিভাক্তির সময় কলকাতায় চলে যায় সেই থেকে পরিত্যাক্ত হিসাবে অযত্নে পরে আছে এই জমিদার বাড়িটি।
 শায়েস্তা নগর জমিদার বাড়ি 
 শ্রীধরপুর জমিদার বাড়ি 
 শ্যামনগর জমিদার বাড়িসাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার হরিচরণ রায় চৌধুরী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই এলাকার একজন প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন। হরিচরণ অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হন। তখন থেকে সূর্যাস্ত আইনের মাধ্যমে নিলামে উঠা চৌহার্দিগুলো তিনি কিনে নিতেন। যার ফলস্বরূপ পরবর্তীতে তিনি একজন স্বতন্ত্র জমিদার হয়ে উঠেন।
 শোল্লা জমিদার বাড়িচাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোল্লা গ্রামে অবস্থিত। এই জমিদার বংশের কয়েকজন জমিদারের নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন জমিদার আব্দুল ছমেদ চৌধুরী, নোয়াব আলী চৌধুরী, ইউছুফ আলী চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল গফুর চৌধুরী ও মোহাম্মদ হানিফ চৌধুরী।
 শীতলাই রাজবাড়িপাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়ন-এর শীতলাই গ্রামে অবস্থিত। আনুমানিক ১৭৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন জমিদার জগেন্দ্রনাথ মৈত্রী এই রাজবাড়িটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। গেন্দ্রনাথ মৈত্রী তৎকালীন হান্ডিয়াল, সিদ্দিনগর, মাঝগ্রাম, শিবরামরামপুর, সমাজ, শীতলাই, নিমাইচড়াসহ পুরো চাটমোহর উপজেলা শাসন করত।
 শায়েস্তাবাদ জমিদার বাড়ি, বরিশাল 
 শ্রীরামপুর জমিদার বাড়িপটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা শিবল খাঁ ছিলেন একজন হিন্দু ধর্মালম্বী। তখন তার নাম ছিল শ্রী শিব প্রসাদ মুখোপাধ্যায়। তিনি এবং তার ভাই শ্রী ভব প্রসাদ মুখোপাধ্যায় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। শ্রী শিব প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে নাম রাখেন শিবল খাঁ। আর এতেই নবাব মুর্শিদকুলী খাঁন খুশি হয়ে তাকে জমি এবং মিয়া উপাধি প্রদান করেন। নবাব তাকে যে জমি দান করেন, তার পরিমাণ ছিলো এক ভাটায় যতদূর যাওয়া যায় তার সমান। পরবর্তীতে জমিদার শিবল খাঁর ছেলে কালে খাঁ জমিদারীর আওতায় আরো অনেক মৌজা যোগ করেন। মোট ৫৬টি মৌজা এই জমিদারীর আওতায় ছিলো।
 শ্রীমন্ত রাম পালের জমিদার বাড়ি 
 শ্রীপুর জমিদার বাড়িমাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার। ১৫০০ শতাব্দী পর্যন্ত মূলত এখানের জমিদারী ছিল নবাব আলীবর্দী খাঁর আওতায়। পরে তিনি উক্ত জমিদারী অঞ্চল সারদা রঞ্জন পালের কাছে বিক্রি করে দেন। তারপরই তিনি এখানে নিজের জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করার পূর্বে জমিদার সারদা রঞ্জন পাল চৌধুরী তার মেয়ে বিভা রানী পালের সাথে তৎকালীন যশোরের প্রভাবশালী রাজা প্রতাপাদিত্যের ছেলে উদয়াদিত্যের বিয়ে দেন। তারপর রাজা প্রতাপাদিত্যের সহযোগিতায় এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের ছেলে উদয়াদিত্যের সঙ্গে বিয়ে হয় শ্রীপুরের জমিদার সারদা রঞ্জন পালের কন্যা বিভা রানী পালের। প্রতাপাদিত্য ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী রাজা, আর সারদা রঞ্জন ছিলেন তাঁর তুলনায় উদার মনের মানুষ। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ে বিভার সংসারে। এই কাহিনীকে উপজীব্য করেই রবীন্দ্রনাথ রচনা করেন “বৌ-ঠাকুরাণীর হাট”।
 শিবপুর জমিদার বাড়ি 
 শাহপাড়া জমিদার বাড়ি 
 শ্রীহাঈল জমিদার বাড়ি।শাল্লা,সুনামগঞ্জ। 
 সুখাইড় জমিদার বাড়িসুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত ধর্মপাশা উপজেলার। আনুমানিক ১৬৯১ সালে মোঘল শাসনামলে মহামানিক্য দত্ত রায় চৌধুরী হুগলী থেকে আসাম যাওয়ার পথে কালিদহ সাগরের স্থলভূমি ভাটির প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হয়ে সুখাইড়ে জায়গির কেনেন। ঐ সময় থেকেই সুখাইড়ে বাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনা শুরু করেন মহামাণিক্য। মহামাণিক্যের চতুর্থ পুরুষ প্রতাপ রায় চৌধুরী সুখাইড় পার্শ্ববর্তী রাজাপুরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বিয়ে করে ধর্মান্তরিত হয়ে রাজাপুরে চলে যান। তিনি ধর্মান্তরিত হলেও জমিদারির অর্ধেক পান তিনি। পরে রাজাপুরের জমিদার হন তিনি।
 সাতবাড়ীয়া জমিদার বাড়ি 
 সাতুরিয়া জমিদার বাড়িঝালকাঠি জেলার রাজপুর উপজেলাতে অবস্থিত। ফজলুল হকের মাতামহ আলী মিয়া এ অঞ্চলে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন বলে ধারণা করা হয়।
 সূত্রাপুর জমিদার বাড়িপুরান ঢাকার সূত্রাপুর থানার। ব্রিটিশ আমলের জমিদার রায় বাহাদুর সত্যেন্দ্র কুমার দাস এই বাড়িটির মালিক ছিলেন। তিনি একসাথে জমিদার, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও প্রেসমালিক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া ঢাকা পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। দেশবিভাগের সময় জমিদারবাড়ির বংশধরগণ বাড়িটি ত্যাগ করে চলে যায় এবং শত্রুসম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের অধিকারে আসে।
 সান্যাল জমিদার বাড়ি 
 সিদ্ধকাঠী জমিদার বাড়িঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সিদ্ধকাঠী ইউনিয়নের সিদ্ধকাঠী গ্রামে। বাংলা ১৩৩২ সালে জমিদার ডাঃ চক্রবর্তী শ্রী চন্ডিচরণ প্রতিষ্ঠা করেন।
 সাইরাইল জমিদার বাড়ি (বড় বাড়ি) 
 সারিকাইত জমিদার বাড়িচট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নে অবস্থিত। বাংলা ১৩৪৮ সালে জমিদার প্রাণ হরি গুহ প্রতিষ্ঠা করেন। এই জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণ হরি গুহের নাতি পুলিন চন্দ্র গুহের জমিদার বাড়ি নামেই বেশ পরিচিত। বংশধররা অনেকে এখনো এখানে বসবাস করেন। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর ও দেশ ভাগের পর অনেকেই ভারতে চলে গেলেও পুলিন গুহ ও ক্ষিতিশ গুহের বংশধররা এখনো এখানে বসবাস করেন।
 সাগরদী জমিদার বাড়ি (বাবুর বাড়ী) 
 সলেমানপুর জমিদার বাড়ি 
 সুসং দুর্গাপুরের জমিদার বাড়িনেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সোমেশ্বর পাঠকের বংশধররা এ বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় তিনশ বছর তার বংশধররা এ অঞ্চলে জমিদারী করে।এই বংশের রাজ পুরুষগণ বহু উপাধী বদলিয়ে অবশেষে সিংহ উপাধী ধারণ করেন। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে তার পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর শাসন করেন এ রাজ্য। কিন্তু রাজকৃষ্ণ নামে এক রাজার শাসনামল থেকে সুসং রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজপরিবারে বিরোধের সূত্রপাত হয়। ফলে এক সময় গোটা রাজ্য চারটি হিস্যায় ভাগ হয়ে যায় এবং চারটি পৃথক রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাড়িগুলো ‘বড় বাড়ি’, ‘মধ্যম বাড়ি’, ‘আবু বাড়ি’ (ছোট অর্থে) ও ‘দু’আনি বাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল। ‘৪৭-এর দেশ বিভাগ এবং পরবর্তীতে ‘৫৪ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ আইন পাস হবার পর রাজবংশের সদস্যরা ভারতে চলে যান। আর এর মধ্য দিয়েই অবসান ঘটে অনেক শৌর্য-বীর্যখ্যাত সুসং রাজ্যের।
 সদাসদী জমিদার বাড়ি যা (গোপালদী জমিদার বাড়ি) নামে পরিচিত 
 সাতগ্রাম জমিদার বাড়িনারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার সাতগ্রাম নামক গ্রামে অবস্থিত। এই জমিদার বংশধররা ছিলেন খুবই অত্যাচারী। প্রজারা খাজনা না দিতে পারলে এরা প্রজাদের উপর অনেক অত্যাচার করতেন।
 সেনভাঙা জমিদার বাড়ি 
 সাহাপুর রাজবাড়িচাঁদপুর জেলার অন্তর্গত শাহরাস্তি উপজেলায় অবস্থিত। আনুমানিক পনের শতকের সময় এই রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা শিবানন্দ খাঁ।
 সাঁকো (বারো বাজার) জমিদার বাড়ি 
 সোনাখালী জমিদার বাড়ি 
 সিধেন সাহার জমিদার বাড়ি 
 সাটিরপাড়া রায় চৌধুরী জমিদার বাড়িনরসিংদী জেলার নরসিংদী সদর উপজেলার সাটিরপাড়া গ্রামে অবস্থিত। জমিদার কৃষ্ণকুমার পাল বাংলার দেওয়ান মুর্শিদকুলি খানের শাসনামলে উক্ত জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই জমিদার বংশেই জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতখ্যাত বিপ্লবী, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক এবং নরসিংদীর রূপকার ললিত মোহন রায় বি.এ.বি.এল। মূলত এই জমিদার বংশধররা “পাল বংশ” ছিল। পরবর্তীতে ললিত মোহন রায়ের জমিদারীর আমলেই “পাল বংশ” থেকে “রায় বংশ” নাম ধারণ করে।
 সেনেরখিল জমিদার বাড়িফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিল গ্রামে অবস্থিত। প্রায় পাঁচশত শতাব্দী আগে জমিদার উপেন্দ্র সেনগুপ্ত চৌধুরী ও মহেন্দ্র সেনগুপ্ত চৌধুরী মিলে এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। জমিদার বাড়িটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের জন্য ইতিহাসের খাতায় নাম লিখিয়েছে।
 সন্তোষ জমিদার বাড়িটাঙ্গাইল জেলার টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সন্তোষ গ্রামে অবস্থিত। প্রায় ১৮০০ শতকে জমিদার মন্মথনাথ রায় এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। এই জমিদার বংশধররা ছিলেন শিক্ষানুরাগী। এই বাড়িতেই জন্ম নেন তিন মহিলা শিক্ষানুরাগী জাহ্নবী চৌধুরানী, দিনমনি চৌধুরানী এবং বিন্দুবাসিনী চৌধুরানী। তারা বর্তমান সময়ের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে জমিদার বাড়ির শেষ জমিদার গোলকনাথ চৌধুরী তার পরিবারবর্গ নিয়ে ভারতে চলে যান।
 সুন্দরপুর জমিদার বাড়িঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলাধীন।
 হাওলি জমিদার বাড়িসুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এটি ৯ম শতকে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজপ্রসাদ হিসাবে ব্যবহার করার জন্য রাজা বিজয় সিংহ কর্তৃক নির্মিত হয়।রাজা বিজয় সিংহ আজ থেকে প্রায় ১২’শ বছর পূর্বে এই বাড়িটি তৈরী করেন।
 হেমনগর জমিদার বাড়িটাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের শিমলাপাড়া মৌজায়। জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী এই জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন (১৮৯০)। তিনি তার এলাকার মানুষকে কঠোর হাতে শাসন করতেন। জমিদারবাড়ি অতিক্রম করতে হলে তাদেরকে খালি পায়ে ক্রমাগত মাথা ঝুঁকিয়ে আনুগত্য প্রকাশের পাশাপাশি উল্টো হয়ে হাটতে হত। এসকল নিয়ম মানতে বাধ্য করা হত তাদের। হেমচন্দ্র চৌধুরী সহ কয়েকজন হিন্দু জমিদারের উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় ১৯০৫ সালে ময়মনসিংহ হতে জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেলওয়ে লাইন সম্প্রসারণ করা হয়। যা রেল ও স্টীমার যোগে ঢাকার সাথে কলকাতার যোগাযোগকে সহজ করে তোলে।
 হরিনাহাটি জমিদার বাড়িগোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার হরিনাহাটি নামক স্থানে অবস্থিত। আনুমানিক ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১১ একর জায়গার উপর মতান্তরে জমিদার ভট্টচার্য্য/মধু রায় চৌধুরী/সচ্চিতান্দ এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন।
 হরিপুর রাজবাড়ি (হরিপুর জমিদার বাড়ি)ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দে ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী এন্ডি কাপড়ের ব্যবসা করতে হরিপুরে আসেন। সেই সময় মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম মহিলা এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। খাজনা অনাদায়ের পড়ার কারণে মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু কিনে নেন।ঘনশ্যামের পরবর্তী বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তাঁর সময়ে রাজবাড়ির সমস্ত কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের পুত্র জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক রাজা উপাধিতে ভূষিত হন।
 হাটুরিয়া জমিদার বাড়িশরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার নলমুড়ি ইউনিয়নের চরভূয়াই গ্রামে অবস্থিত। জমিদার গোলাম আলী চৌধুরির দোর্দণ্ড প্রতাপের উদাহরণ পাওয়া যায়। উনি দার্জিলিং থেকে বিশেষ উপায়ে হিমজাত বরফ আনাতেন খাবার জন্য, এবং কোলকাতার বিখ্যাত সি আর দাশ এর লন্ড্রী থেকে উনার কাপড় ধোয়ানো হোত।
 হাবড়া জমিদার বাড়ি 
 হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি 
 হাতিয়া জমিদার বাড়ি 
 হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরীর জমিদার বাড়িকুমিল্লা জেলার দক্ষিণ চর্থা নামক এলাকায় অবস্থিত। জমিদার হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী এই জমিদার বংশ এবং জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তনকারী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ও শিক্ষানুরাগী জমিদার। তিনি তার কর্মদক্ষতার ফলে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে নবাব উপাদি লাভ করেন।
 হাজরাহাটী জমিদার বাড়ি 
 হরষপুর জমিদার বাড়িব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সরাইল উপজেলার হরষপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।
 হাজারদুয়ারি জমিদার বাড়িরাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। নওগাঁ জেলার আমরুল ডিহির রাজা গোপাল ধাম তার মেয়ে প্রভাতী বালাকে ভারতের কাশী থেকে আসা বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিয়ে দেন এবং তার অধীনস্থ এই বীরকুৎসা পরগণাটি মেয়ে প্রভাতী বালা ও জামাই বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে লিখে দেন। ১৯৪৭ সালে বীরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার ভারতের হুগলী চন্দনগরে চলে গেলে পরবর্তীকালে এই বাড়িটি সরকারের দখলে চলে আসে।
 হাতিরদিয়া জমিদার বাড়ি 
 হাটহাজারী জমিদারি 
 হলদিয়া এস্টেট জমিদারবাড়ি,রাউজান 
 ক্ষেতুপাড়া জমিদার বাড়িপাবনা জেলার অন্তর্ভুক্ত সাঁথিয়া উপজেলায় অবস্থিত। গ্রামে ভারত থেতে আগত জমিদার নব কুমার রায় প্রায় তিনশত বছর আগে দশ বিঘা জমির উপর এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন। তার মৃত্যুর পর দীর্ঘ ষাট বছর তার একমাত্র সন্তান পার্বতী চরণ রায় জমিদারী পরিচালনা করেন। তৃতীয় সন্তান শ্যামা চরণ রায় এখানেই থেকে যান এবং জমিদারীর দেখাশুনা করেন। এই জমিদার বংশের মধ্যে একমাত্র শ্যামা চরণ রায় সর্ব সাধারণের কাছে সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি তার।জমিদারীর সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক জায়গা দান করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর এই বাড়ির মালিক হন তার পুত্র দীপক কুমার রায়। অর্থের অভাবে শেষ পর্যন্ত এই জমিদার বাড়ির শেষ জমিদার দীপক কুমার রায় এই জমিদার বাড়িটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুরের সন্ধ্যা রাণী নামের একজন এই বাড়িটি ক্রয় করেন। বাড়িটি ক্রয় করার পর ১৯৩৮ সালে তিনি বাড়িটি সংস্কার করেন। বর্তমানে এই বাড়িটিতে সন্ধ্যা রাণীর বংশধররা বসবাস করছেন।
 ক্ষয়িষ্ণু জমিদার বাড়ি