বামপন্থী তাত্ত্বিক ফ.ম. একটা কথা বলে থাকেন: ‘ইসলামে পোপতন্ত্র নাই’। কথাটা সত্য, মতলবটা খারাপ। ইসলামে পোপতন্ত্রও নাই, প্রোটেস্টান্টিজমও নাই যে, প্রত্যেকেই কুরআন ব্যাখ্যা করবে বা নিজ নিজ বুঝ গ্রহণ করবে। ইসলামে যেটা আছে সেটা হল: সুনির্দিষ্ট কাঠামো। আপনি চাইলেই ইসলামে নতুন কিছু ঢুকাতে বা বের করে দিতে পারবেন না।
চাইলেই কুরআনে একটা আায়াত বানিয়ে ঢুকাবেন, পারবেন না। ধরা খেয়ে যাবেন ও প্রত্যাখ্যাত হবেন।
চাইলেই একটা হাদিস বানিয়ে প্রচার করতে পারবেন না। ধরা খেয়ে যাবেন।
জোড়াতালি সনদও বানাতে পারবেন না। কে কার ছাত্র, কে কার ওস্তাদ সব রেকর্ডেড আছে। বানানো সনদ ধরা খাবে।
একটা হাদিস কোট করে একটা উদ্ভট সিদ্ধান্ত দিয়ে পার পাবেন না। ৪ মাযহাবের উসুল আছে। অধিকাংশই একই, সামান্য দালিলিক ভিন্নতা আছে। সে নিয়ম মোতাবেক হতে হবে।
আবার এক মাযহাবের উসুল মেনেও ভিন্ন সিদ্ধান্ত দিলে পাত্তা পাবেন না। প্রত্যেক মাযহাবেই একটা মত আছে ‘মু’তামাদ’, মানে ঐক্যমত। এর বাইরের মত শায বা বিচ্ছিন্ন।
এভাবে কুরআন-হাদিস-সাহাবাদের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে একটা কাঠামো বা জ্ঞানতত্ত্ব ডেভলপ করেছেন। এভাবে আল্লাহ তাঁর দীনকে হিফাজত করেছেন। এরকম বহু ফ.ম., ফা.মা., নদভী, গামেদী গত ১৪০০ বছরে এসেছে। এখন যেমন পশ্চিমা দর্শনের চশমায় ইসলামকে রিমডেল করতে চাইছে, এরকমই একসময় গ্রীক দর্শনের চশমায় করতে চেয়েছিল। মুতাজিলা, কাদরিয়া, জাবরিয়া… কত দল-উপদল এই কাঠামোর বাইরে গিয়ে ইসলামকে বুঝতে চেয়েছে। তারা আজ কেউ নেই। আছে মূল কাঠামোর অধীন সেই নবীর ইসলাম, সাহাবীদের ইসলাম (কিতাবপত্রে হলেও টিকে আছে)। মেইনস্ট্রীম ইসলাম বলতে আমরা এই ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত’-কে বুঝি। যা নবিজির সুন্নাহ ও সাহাবীদের জামাআতের সুন্নাহকে ধারণ করে।
কাঠামোর ভিতরে বহু মতের সুযোগ রয়েছে। যুগের চাহিদায় নতুন নতুন মাসআলা আসবে, তাকে জবাব দেয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু কাঠামো ঠিক রেখে। মানুষের কঙ্কাল ঠিক রেখে যত অদলবদলই করেন, বুঝা যায় হিউম্যানয়েড কিছু একটা। আর কঙ্কাল বদলে দিলে মানুষ বলে আর চেনা যায় না। ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ, জেন্ডার স্টাডিজ ইসলামের মূল কাঠামো বদলে দেয়।
কাঠামো বদলাতে হলে কী করতে হবে? কিছু হাড় বাঁকাতে হবে, কিছু হাড় ডিলিট করতে হবে, কিছু হাড় যোগ করতে হবে। এরাও আম্মা খাদিজাকে সিইও, আম্মা আয়িশাকে প্রফেসর, নুসাইবাকে নারী আর্মি অফিসার, উম্মে আমারাকে জাজ, আম্মা খাদিজার বান্ধবীর দলিলে ফ্রিমিক্সিং বানিয়ে ইসলামের কাঠামো বাঁকায়। বাঁকিয়ে পশ্চিমা দর্শনের সাথে সামঞ্জস্য করে।
এবার কিছু জিনিস বাদ দেয়। সহীহ হাদিসকে জাল বলে, আংশিক অপ্রাসঙ্গিক কথা তুলে এনে এই কাঠামোটা সেক্সিস্ট প্রমাণ করতে হবে, তাহলে বাদ দেয়া সহজ হবে। আর কিছু জিনিস এড করতে হবে, যেমন: নারীও হাটেবাজারে, ট্যুরিজমে, মহাকাশে, আদালতে, রাজনীতিতে আল্লাহর খলিফা। ইত্যাদি। এবার ইসলামটা দেখতে মোটামুটি পশ্চিমা দর্শনের জমজ ভাই না হইলেও চাচাতো ভায়ের মতো তো হইল। ফামা-দের উদাহরণ, তথ্য এসব কিন্তু আছে আমাদের ইতিহাসে। এসব রক্ত গোশত আছে। কিন্তু কঙ্কালটা বা কাঠামোটা আর ইসলাম নাই। কাঠামোটা পশ্চিমা দর্শন। পশ্চিমা দর্শনের কঙ্কালে ইসলামী গোশত চাপানো।
কেন আমরা ফামা-র কথার প্রতিবাদ করি?
কারণ তারা ইসলামের কাঠামোটা বদলাতে চায়। আধুনিকতা দর্শনের সাথে কম্প্যাটিবল করতে চায়।
উম্মাহর অতীত ও বর্তমান আলিমরা এই কাঠামো ধরে যেটা আসে তার কথা বলতে বাধ্য। কুরআন-হাদিসের কাছে দায়বদ্ধ। তারা না পারেন সহশিক্ষাকে অনুমোদন দিতে, না পারছেন মেয়েদের আলাদা উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে। ফামা-রা কাঠামোর কাছে দায়বদ্ধ না। জেন্ডার স্টাডিজে সে যা শিখেছে তার খাপে ইসলামকে দলামুচড়ি করে ঢুকাতে তার বাধে না। আলিমদের বাধে। পোপ-যাজকদের মত আলিমরা ইচ্ছামতো ধর্মকে ব্যবহারের ক্ষমতা রাখেন না এই কাঠামোর কারণে।
এই কাঠামোর বাইরে গিয়ে ভাবাটাই বরং যাজকীয় চিন্তা। ফ.ম. ও ফা. মা. রা হল সেই যাজক।