ঈমান ও কুফর


ঈমান ও কুফর বিচার শুধু আল্লাহর এখতিয়ার। এলিজাবেথ মু’মিন না কাফের সেটা তুমি বিচারের কে? নিজেকে আল্লাহ মনে করো নাকি? আল্লাহগিরি করো মিয়া? অন্তরের খবর কেবল আল্লাহ জানেন। মানুষ মুমিন নাকি কাফের সেটা বলার কোনো রাইট তোমার নেই। ব্লা… ব্লা…ভ্যাজর ভ্যাজর।

মূর্খতা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ঈমান-কুফর, যা ইসলামের ১ম বিষয়, সেটা নিয়ে চ্যাংড়া ছেলেদের কোনো জ্ঞান তো নেই-ই। এমনকি ভার্সিটি প্রফেসর টাইপ লোকদেরও দেখা যায় নেই।

ঈমান-কুফর শুধু অন্তরের বিষয় না। ঈমান যেমন অন্তরে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে সম্পাদনের নাম। তেমনি কুফরও অন্তরে বিশ্বাস, মুখে উচ্চারণ, কর্মে সম্পাদনের নাম। এমন অনেক কথা আছে যা উচ্চারণ করলে কাফির হয়ে যাবে। এমন অনেক কাজ আছে যা করলে কাফির হয়ে যাবে। (জেনে বুঝে করলে। অজ্ঞতার কারণে করলে হবে না৷ তওবা করতে হবে)

ঈমান-কুফর শুধু আল্লাহর বিচার্য বিষয় না। এটা তারা বলে যারা আইন – বিচার – সমাজ থেকে ধর্মকে বের করে দিতে চায়। ধর্মকে কেবল পরকালে আটকে দিতে চায়। পার্থিব বিষয়ে আল্লাহর ক্ষমতা-অধিকারকে অস্বীকার করতে চায়। দুনিয়াতে ঈমান-কুফর জাজমেন্ট করা ইসলামী আইনের অংশ, যেখানে যোগ্য মুফতিগণ বিচার করবেন ব্যক্তির ঈমান-কুফর। কেননা এর সাথে বহু ইসলামী বিধান জড়িত।


১. মুরতা.দের বিধান
২. কাফির/মুরতা.দের সাথে মুসলিমের বিবাহ বৈধ না। কুফরের দ্বারা কেউ ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেলে বিবাহ ভেঙে যায়। তওবা করে পুনরায় বিয়ে পড়াতে হয়। নইলে যিনার গুনাহ হতে থাকে।
৩. কাফির/মুরতা.দ মুসলিমের ওয়ারিশ হয় না। সন্তান ঈমানহারা হলে সে পিতার সম্পত্তি পাবে না। যদি তাকে দেয়া হয়, তবে মুসলিম সন্তানরা বঞ্চিত হল। যা পিতাকে আখেরাতে জবাব দিতে হবে।
৪. সালাম দেয়া যায় না। জানাযা পড়ানো যায় না। তার মাগফিরাতের দুআ করা যায় না (কুরআনে নিষেধ)।
৫. এভাবে ইসলামী রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় নাজুক দায়িত্বে কাফির নিযুক্ত হবে না। ইত্যাদি আরও বিধান রয়েছে।

সুতরাং কোনো ব্যক্তি কাফির কিনা, বা মুসলিম হয়ে জন্মে কাফির হয়ে গেছে কিনা, এটা দুনিয়াতেই বিচার্য বিষয়। এবং তা গণহারে সবাই করবেন না। উচ্চযোগ্যতাসম্পন্ন মুফতি সাহেবরা এটা করবেন ও উম্মতকে গুনাহ থেকে রক্ষা করবেন।

মুখে কুফরি কথা বললে বা কুফরি কাজ করলে করণীয় হল, সাথে সাথে তওবা করে পুনরায় কালিমা পাঠ করে ইসলামে প্রবেশ করা। কেউ এমন কিছু বললে/করলে তাকে মুফতিগণ তওবার আহ্বান জানাবেন। না করলে বা অটল থাকলে কাফির ঘোষণা করবেন। নিদেনপক্ষে তার কাজটাকে কুফর ঘোষণা করবেন। আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারবে না, ব্যাপারটা তা নয়।

তাকফির মানুষকে সতর্ক করে। চিন্তার ঝড় ওঠায়৷ এটা বিরাট বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র। যেমন, আবরারের ঘটনার পর এই কাজটাকে (ইসলাম মেনে চলার কারণে শিবির ট্যাগ দিয়ে হত্যা) সুস্পষ্ট কুফর ঘোষণা দিয়ে দেশের বড় বড় দারুল ইফতা থেকে ঘোষণা এলে আজ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যেত। হত্যা করা কবিরা গুনাহ। কিন্তু ইসলামের কারণে হত্যা করা কুফর।
এমনি কাউকে পিটানো কবিরা গুনাহ। কিন্তু ‘খিলাফতে বিশ্বাস/ গাজওয়ায়ে হিন্দে বিশ্বাসের মত ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের কারণে মারপিট/জেলজুলুম’ কুফর।… ব্যক্তিকে সরাসরি না। কাজটাকে কুফর, এবং এমন যে করবে সে কাফের, এভাবে ফতোয়া আসা দরকার। তাহলে মানুষ কাজটার ব্যাপারে সতর্ক হবে।

কী কী বললে বা করলে মানুষ আর মুসলিম থাকে না। এই মৌলিক বিষয় আমাদের আলোচনা থেকে উঠে গেছে। বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, নারীবাদের নামে এমন কথা মানুষ অবলীলায় বলছে, যা বলামাত্র তার ঈমান শেষ হয়ে গেছে, স্ত্রী তালাক হয়ে গেছে। মানুষকে সচেতন করে ইসলামের মৌলিক আকীদায় ফিরিয়ে আনতে বড় বড় দারুল ইফতাগুলো একসাথে, ‘এসব কাজ ও এসব কথা ‘ তাকফির করে ফতোয়া দিলে উম্মাহর বিরাট দাওয়াহ হবে, যে দাওয়াহ হাজারও বয়ানে সম্ভব ছিল না।

প্রতিটি ঘটনার পর সকলের ফোকাস থাকে ঘটনার দিকে। সেসময় একযোগে আলিমদের ও মুফতি সাহেবদের দালিলিকভাবে কুফরি কাজগুলোকে তাকফির করা প্রয়োজন। এবং যারা এটা করবে তাদের পরিণতি (বিবি তালাক, ত্যাজ্য, জানাযা না হওয়া ইত্যাদি) ঘোষণা করা দরকার। ব্যাপক দাওয়াহর অংশ হিসেবে।