একটা হল ‘জেনারেল সামাজিক ট্রেন্ড’। আরেকটা হল বিশেষ প্রয়োজন। অনেকেই বিশেষ বিশেষ সিনারিও দিয়ে প্রশ্ন করছেন ‘এমন হলে মেয়েটা কীভাবে চলবে?’ ‘তালাক দিলে মেয়েটা কীভাবে চলবে?’। এগুলো বিশেষ সিনারিও যার সমাধানও বিশেষ। শরীয়া আদালত থাকলে ব্যক্তির বিশেষ সিচুয়েশন বিবেচনায় কাজী বিশেষ সমাধান বাতলান। যেমন, ফতোয়া আলমগীরীতে এসেছে, স্বামী যদি ভরণপোষণ দিতে না পারেন, তবে স্ত্রীকে উপার্জনের সুযোগ দিতে স্বামীকে বাধ্য করা হবে। যেহেতু শরীয়া নেই, ব্যক্তিগত সমস্যা ব্যক্তিগতভাবে আলিমদের সাথে বসলে বিভিন্ন রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সেটা কখনোই জেনারেল ট্রেন্ড হবে না। একই কথা এই সিস্টেমে উচ্চশিক্ষার নামে কালক্ষেপণের ক্ষেত্রেও। সেটা গণহারে হবে না, অহেতুক হবে না, নারীর মূল ভূমিকাকে গৌণ করবে না। কেউ কেউ যোগ্যতা অনুসারে সহশিক্ষামুক্ত পরিবেশে উচ্চশিক্ষা নেবে। কিন্তু সেটা ট্রেন্ড হবে না। ট্রেন্ড হবে ‘মাতৃশিক্ষা’।

‘প্রয়োজনে’ পর্দার সাথে পেশাগ্রহণের অনুমতি নারীর জন্য রয়েছে। কিন্তু উপনিবেশের মওকায় নারীবাদের দরুন এটা জেনারেল ট্রেন্ড হয়ে গেছে। নারীবাদের এজেন্ডা হল পাবলিক স্ফিয়ারে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় আসা। আপনি ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে কোটি টাকা কামালেও আপনাকে তারা পরাধীনই বলবে, যেহেতু আপনি পাবলিক স্ফিয়ারে পুরুষের প্রতিযোগী হচ্ছেন না। এটা জেনারেল ট্রেন্ড হবার ফলে কী কী স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হচ্ছে, আমি সেটা বলার চেষ্টা করছি।

শারীরিক গঠনের পার্থক্য এমনভাবে এসেছে, যাতে নারী-পুরুষের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য আলাদা হয়ে গেছে। পুরুষ বাইরে প্রতিকূলতা চষে বেড়াবে, জীবিকা আনবে, প্রতিপত্তি দিয়ে নারী-শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করবে। আর নারী ঘরে অনুকূল পরিবেশে সন্তান সামলাবে, সন্তানকে স্বাবলম্বী মানব হিসেবে জীবনযুদ্ধের জন্য রেডি করবে। এটা হচ্ছে আমাদের বায়োলজিক্যাল ভূমিকা। জেন্ডার রোল পুরোটাই সমাজ শেখায় না। আমাদের দেহমনের নকশার ভেতরে আছে জেন্ডার রোল।

৯টা-৫টা চাকুরির নামে বায়োলজিকে অস্বীকার করে নারীরা নিজেদের অসুস্থ করে ফেলছে, পরবর্তী প্রজন্মকে অসুস্থ করে ফেলছে। কীভাবে সেটা দেখবো সামনের পোস্টে। নারীদের গণহারে চাকরিতে আসার দ্বারা লাভবান হয় কিছু লোভী পুরুষ, লোভী স্বামী। আর লুজার হয় নারী নিজে। সেই লসের মাশুল সে দিবে নিজ শরীরের অসুস্থতা দিইয়ে, মানসিক অস্থিরতা দিয়ে, সন্তানের সাথে দূরত্ব দিয়ে এবং সন্তানের অবিকাশ দিয়ে। বিনা প্রয়োজনে নারীর চাকুরির মানসিকতায় ভুক্তভোগী নারীই, অন্য কেউ না।

নারীকে গণহারে (বিনাপ্রয়োজনে) চাকুরিতে আসতে উদ্বুদ্ধ করার যে ট্রেন্ডটা, সেটা পুরুষ তৈরি করেছে পুঁজিপতি পুরুষেরই সুবিধার্থে।

নারীকে পুঁজিবাদের ওয়ার্কফোর্সে টেনে আনার একটা ফাঁদ এই স্বাবলম্বিতা, এই ক্ষমতায়ন, এই চাকরির টোটকা। একটু চিন্তা করুন, চাকরির বাজারে শুধু পুরুষ। এবার চাকরির বাজারে সমান সংখ্যক নারী চলে এল। শ্রমের যোগান বেড়ে গেল। চাহিদার চেয়ে যোগান বেড়ে গেলে মূল্য কমে যায়। শ্রম হয়ে গেল সস্তা। কার লাভ? ভেবে বল। যাদের লাভ, ‘নারী, চাকরি করো’— এটাও তাদেরই বুলি।

তাদের—

• নারীশিক্ষা মানে শিক্ষিত হয়ে চাকুরিতে আসো।
• নারী অধিকার মানে ঘরের বাইরে চাকুরি করার অধিকার,
• নারীর ক্ষমতায়ন মানে চাকুরি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।
• নারী স্বাধীনতা মানে পরিবারের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে চাকরি করার স্বাধীনতা।
• নারী, তোমার স্বামী তোমার উপর জুলুম করে, ডিভোর্স দিয়ে চাকরি কর, সমাধান।
• তোমার উপর ম্যারিটাল রেপ হয়, চাকরি কর।
• পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তোমার ভাল চায় না, চাকরি কর।

সব কিছুর সমাধান হলো, চাকরি কর, অর্থনীতিতে আসো, টাকা কামাও। আমার কাজে লেগে যাও। ব্যস। এটাই সমাধান। এটাই আলাদিনের জাদুর চেরাগ।

কেননা নারীদের শ্রমবাজারে রাখাটা পুঁজিপতিদের পক্ষে ব্যাপক লাভজনক। এতে চাকুরির প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়। মেয়েদের জন্য চাকরি অপশনাল, আর পুরুষের তো ‘না হলেই নয়’। ফলে, পুরুষরা আগের চেয়ে কম বেতনেও শ্রম দিতে তৈরি থাকে। [গ] ১৯৬০-এর দশকের শেষার্ধে কর্মক্ষেত্রে পুরুষের বেতন কমে যায়, বেকারত্ব বেড়ে যায়। (Hernandez 1993, Zill & Nord 1994) । বাংলাদেশে আজও সরকারি হিসেবেই ২৬ লক্ষ পুরুষ বেকার, যাদের চাকরি প্রয়োজন। আজকে আপনার বেকারত্বের পিছনে, কম বেতনে বেশি খাটার পিছনে এইসব নারীবাদী পলিসি দায়ী। মার্কেটে একটা কৃত্রিম প্রতিযোগিতা তারা তৈরি করে রেখেছে।

পুঁজিপতিরা তো চায়, বেতন কম দিলে পুঁজিপতির পকেটে মুনাফা থাকবে বেশি। তাহলে নারীদের এখন শ্রমবাজারে ধরে রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে। আর নারীদের শ্রম ধরে রাখতে হলে করতে হবে তিনটি কাজ—

• পরিবার গঠন-কে পেছাতে হবে স্বাবলম্বী হবার নামে। নারীদেরকে পরিবারমুখী থেকে ক্যারিয়ারমুখী করতে হবে। [ঘ] চাকরি, ক্যারিয়ার—এসবকে মর্যাদার কাজ হিসেবে বুঝাতে হবে।
• ‘আগে আগে বিয়ে’-কে ভিলেন বানাতে হবে। [ঙ]
• বিয়ে, গর্ভধারণ, বাচ্চাপালন-কে ছোট ও ঘৃণ্য কাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেন এগুলো করতে নারী অনীহা বোধ করে। [চ]

নারীকে তার জেন্ডার রোল থেকে বাইরে বের করে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতায় লাগিয়ে দিতে হবে।

আমার বউ চাকরি করলে তো আমারই লাভ। যদি আল্লাহকে ভয় না করতাম, তবে স্ত্রীকে অবশ্যই চাকরি করতে বাধ্য করতাম। আল্লাহর দেয়া কর্মবণ্টনকে যদি স্বীকার না করতাম, ২০-৩০ হাজার টাকার লোড অবশ্যই নিজের উপর থেকে কমিয়ে ফেলতাম ।

কোনো কিছুই সরল না। সম্ভবত ম্যাক্স ওয়েবারের একটা কথা আছে: যেকোনো ঘটনা মাল্টিফ্যাক্টরিয়াল। পলিসি করার সময়, একটা জেনারেল সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান প্রস্তাব করা হয়। সেটাই করছি। পূর্ণাঙ্গ সমাধান অবশ্যই মাল্টিফ্যাক্টরিয়াল।

মেয়েদের যে চাকরি করার গণট্রেন্ড, এটা সোজাসাপ্টা জিনিস না। এর অর্থনৈতিক কারণ আছে, পলিটিক্স আছে, দর্শন আছে, সোশ্যাল ডাইনামিক্স আছে। সব করতে গিয়ে নারীর বায়োলজি মাইর খেয়ে যাচ্ছে। কমপ্লিট সমাধান একমাত্র শরীয়া শাসনব্যবস্থা, যা সবগুলো ফ্যাক্টরকে কাভার করে। সেক্যুলার ব্যবস্থা একটা সমাধান করতে গিয়ে আরেকটা সমস্যা উৎপাদন করে।

আপাতত এতটুকু বুঝেন। আরেকজনাকে বুঝান। লা হাল্লা ইল্লা শারীয়াতি। শরীয়া ছাড়া সমাধান নেই। পুরুষকে এডুকেট করা, গণসভ্যকরণ প্রকল্প, নারীর আইনী অধিকার, নারীর স্বামীর কামাইয়ে অংশ বুঝে নেয়ার অধিকার, নারীদের মিথ্যে মামলা দিয়ে পুরুষের মানহানি, ডিভোর্স হলে আবার স্বামী পাবার অধিকার, পুরুষের সমতাপূর্ণ একাধিক বিবাহের অধিকার। এইসব কিছু একটা ব্যালেন্স, যেই ব্যালেন্সটা শরীয়া না থাকার দরুন হ্যাম্পার হয়েছে। ইসলাম ফিতরাতের দীন, এই স্বভাবসিদ্ধ ব্যালেন্সের ব্যবস্থা।