নাস্তিকের প্রতি…


গল্প: জান্নাতে এসব কেন?
বই: ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ৩ (পাথফাইন্ডার পাবলিকেশন)

সবকিছু বাদ দেন। আপনি কি নিজের লিবারেল ইথিক্স, সেক্যুলার আইডিওলজি ও বিজ্ঞানের সাথে সৎ? ওকে তাহলে। এই জান্নাতের কনসেপ্টের দরুণ ‘অ্যাজ এ কমিউনিটি’ অন্য কমিউনিটির তুলনায় মুসলিমদের মাঝে… [দেখুন]

  • এলকোহল পানের হার কম। মাদকাসক্তির হার কম। (Ghandour ২০০৯, Amundsen ২০০৬, Abu-Ras ২০১০)
  • জুয়ার হার কম। (Ghandour ২০১৩)
  • ব্যভিচার কম। (Adamczyk, ২০১২)
  • ধর্ষণ কম।
  • চ্যারিটি বেশি। [১]

এর কারণ ইসলামের সোশ্যাল লার্নিং। ইসলাম মুসলিমদেরকে শুধু আইনের ভয় দেখিয়ে ফেরায় না। বরং শাস্তি ও প্রাপ্তির মাধ্যমে আচরণ শেখায়। [২] রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব না প্রতিটি ভালো কাজের জন্য মানুষকে পুরস্কৃত করা, বা প্রতিটি খারাপ কাজের জন্য শাস্তি দেয়া। ধরে নেন কুরআন নবিজিই বানিয়েছেন। যদি উম্মী একজন ৭ম শতকের মানুষ…

  • এক আশ্চর্য ব্যক্তিব্যবস্থাপনা দিতে পারেন যার সাথে ১৪০০ বছর পর এসে মানবজ্ঞান একমত না হয়ে পারে না। [৩]
  • এক আশ্চর্য পরিবারব্যবস্থাপনা দিতে পারেন যা মানবপ্রবৃত্তির জন্য আবশ্যক। [৪]
  • এক আশ্চর্য সমাজব্যবস্থাপনা দিতে পারেন, যার সাথে আজকের সমাজবিজ্ঞানীদের সুর মিলে যায়। [৫]
  • এক আশ্চর্য আইনব্যবস্থা দিয়ে যেতে পারেন, যার দর্শন ও পদ্ধতি আজকের আধুনিক আইনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। যা যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করেছে নানান দেশের আইনকে।
  • এক সর্বকল্যাণময় অর্থব্যবস্থা দিয়েছেন, যার সমান কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারেনি কোনো অর্থব্যবস্থা। [৬]
  • এক যুদ্ধ-ব্যবস্থাপনা দিয়েছেন, যার সমান ফল দেখাতে পারেনি জেনেভা কনভেনশন ও আন্তর্জাতিক আইনগুলো। [৭]
  • মক্কার মজলুম অপাংক্তেয় মানুষগুলোকে নিয়ে যিনি জন্ম দিয়েছেন মাত্র ৫০ বছরে দ্রুততম এক সভ্যতার, দ্রুততম এক সাম্রাজ্যের।

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম তিনি নবি না। এরিস্টটল রাষ্ট্রের ভুল সংজ্ঞা দেবার পরও তাকে যেমন স্তুতি করা হয়। চে গুয়েভারাকে মজলুমের ত্রাতা মনে করা হয়।

  • সেখানে নবি মুহাম্মাদের প্রতিটা কথা, কথার অন্তর্নিহিত দর্শন আজকের যুগেও এতোটা সত্য, এতোটা প্রায়োগিক। আপনাদের তো উচিত ‘শ্রেষ্ঠ দার্শনিক’ হিসেবে নবিজিকে তিনবেলা সেজদা করা।
  • জান্নাত-জাহান্নাম যদি নবিজি বানিয়ে থাকেন, তবে তো এই সোশ্যাল লার্নিং থিওরির জন্য এই টেকসই সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর জন্য তাঁকে ‘শ্রেষ্ঠ সমাজবিজ্ঞানী’ হিসেবে মাথায় তুলে রাখা।
  • যার জন্য কোটি কোটি মানুষ এইডস-এলকোহল-ড্রাগ-ইত্যাদি শত নেগেটিভ থেকে দূরে আছে ও শত শত পজিটিভ অভ্যাস ও এটিটিউড লালন করছে। এই স্বাস্থ্যকর, কল্যাণকর, কল্যাণমুখী জীবন দর্শনের জন্য ‘শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিদ’ হিসেবে নবিজিকে উঠতে বসতে কুর্নিশ করা দরকার আপনাদের।
  • বৃটিশ কমন ল’ থেকে শুরু করে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া অব্দি সকল পারিবারিক আইন, উত্তরাধিকার আইনের জনক হিসেবে, একজন আইন দার্শনিক হিসেবে তাঁর সাফল্যকে মূল্যায়ন করা দরকার ছিল আপনাদের।
  • মজলুমকে দিয়ে কীভাবে একটা আস্ত সভ্যতা নির্মাণ করতে হয়, সেই মডেলের কৃতিত্ব তো মার্ক্স-লেনিন-চে’র চেয়ে আমাদের নবির ঢের ঢের বেশি। এরা আপনাদের পূজা পেলে নবিজি তো আরও বেশি দাবিদার।

তা না করে শুধু এই এক জায়গায় এলেই আপনাদের সব স্ট্যান্ডার্ড পালটে যায়। নিমেষে উলটে গিয়ে আপনারা গালাগালি শুরু করেন। কেন? নৈতিক জীবনের কথা বলে, তাই? ভোগের সীমা দিয়েছেন, তাই? জুলুম করার ও মজলুম হবার রাস্তা বন্ধ, তাই? যা ইচ্ছা তাই করা যায় না, সেজন্য? হইলো না ভাই। এভাবে হয় না। এই দু’মুখো রূপ নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ান কীভাবে আপনারা?

আমরা মনে করি এই পরিপূর্ণ সর্বাঙ্গসুন্দর দীন একজন মানুষের থেকে আসা সম্ভব না। সকল বিষয়ে গবেষক হওয়া, নির্ভুল হওয়া, হাজার বছর পরেও প্রাসঙ্গিক হওয়া একজন ৭ম শতকের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। যদি আসে, সে মানুষ না। আমরা বিশ্বাস করি এই দীন আল্লাহর থেকে আসা যিনি নিজেই মানুষের বায়োলজি, সাইকোলজি, সোশিওবায়োওজি, সোশ্যাল সাইকোলজি, ইকোলজির স্রষ্টা। একমাত্র তিনিই পারেন এমন নির্ভুল হতে, হাজার বছর ধরে এমন প্রাসঙ্গিক থাকতে। নবিজি নিজেই আল্লাহকে রেফার করে দিয়েছেন সকল কৃতিত্ব। আপনারা যদি আল্লাহকে না-ই মানেন, তবে নবিজির শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেন। মেনে নেন এই পুঙ্খানুপুঙ্খ সম্পূর্ণ জীবনব্যবস্থাপনা ৭ম শতকের এক অতিপুরুষ রচনা করেছেন, অতিমানবীয় গবেষক ছিলেন তিনি। অন্তর নুইয়ে দিন শ্রদ্ধায়। তা না করে গালাগালি করেন কেন?

রেফারেন্স:

[১] Muslims give more to charity than others, UK poll says [NBC News ২০১৩]
We found that Muslim Americans gave more to charity, donating an average of $3,200, in 2020, versus $1,905 for other respondents.
US Muslims gave more to charity than other Americans in 2020 [Siddiqui, Lilly Family School of Philanthropy ২০২১]

[২] খ্যাতিমান অপরাধবিদ Ronald L. Akers বলেছেন, অপরাধ কমাতে শুধু Deterrence Doctrine (শাস্তি) এবং Rational Choice Theory (পুরস্কার-শাস্তির মধ্যে বেছে নেওয়া) আলাদা আলাদাভাবে যথেষ্ট নয়। বরং এই দুটোর সমন্বয়ে তিনি Social Learning Theory-র কথা বলেছেন। তিনি বলেন, social learning theory মতে পুরো আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয় এই বিষয়গুলো দিয়ে।

  • শাস্তির ভয় (negative punishment)
  • পুরস্কার হারানোর ভয় (negative reinforcement)
  • শাস্তি থেকে বাঁচা (positive punishment)
  • পুরস্কার পেয়ে যাওয়া (positive reinforcement)
    তিনি বলেন, সমাজ মানস গড়ে ওঠে শাস্তি বা পুরস্কারের মাধ্যমে আচরণ শেখানোর দ্বারা (Instrumental বা Operant Conditioning)। (Ronald, 1990) তুলনা করুন ইসলামের জান্নাত-জাহান্নামের ধারণার সাথে। এই দীন আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছ থেকে আসা সম্ভব না।

[৩] পড়তে পারেন লেখকের লেখা ”কষ্টিপাথর’ বইটি।

[৪] পড়তে পারেন লেখকের লেখা ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২’ এবং ‘মিলনতত্ত্ব’ বইটি।

[৫] পড়তে পারেন লেখকের লেখা ”মানসাঙ্ক’ বইটি।

[৬] পড়তে পারেন লেখকের লেখা ”ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ১’-বইটি। সেই সাথে অর্থনীতিবিদ মোহাইমিন পাটোয়ারি রচিত ‘ব্যাংকব্যবস্থা ও টাকার গোপন রহস্য’ বইটি।

[৭] পড়তে পারেন লেখকের ‘ইসলামে দাস-দাসী ব্যবস্থা’ বইটি।