বিজ্ঞান কী?


পশ্চিমা বিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। নচেৎ আমাদের বিজ্ঞানকেন্দ্রিক আলোচনাগুলো হাস্যকর শোনা যায়। বিস্তারিত ‘কাঠগড়া’ বইতে লিখেছি। যেহেতু এখন সবাই বিজ্ঞান বলতে ‘পশ্চিমা বিজ্ঞান’ ই বোঝে, আমরাও শুধু ‘বিজ্ঞান’ শব্দই ব্যবহার করব। বুঝে নেবেন ‘পশ্চিমা বিজ্ঞান’।

পশ্চিমা বিজ্ঞান নিজের জন্য একটা রেললাইন ঠিক করে নিয়েছে। ফলে রেললাইন ছাড়া সে চলতে পারবে না। পজিটিভিজম (বাহ্যদৃষ্ট জ্ঞানই জ্ঞান, বাকিসব বাতিল) হয়ে লজিক্যাল পজিটিভিজম (জ্ঞান ২ প্রকার: অভিজ্ঞতা ও যুক্তি, আরসব বাতিল) হয়ে মেথডোলজিক্যাল ন্যাচারালিজমে গিয়ে ঠেকেছে (প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতির ব্যাখ্যা দেয়া, অতিপ্রাকৃতিক ব্যাপারে চুপ থাকা)। এগুলো সবই বস্তুবাদ থেকে উৎসারিত নানা মতবাদ। বস্তুবাদই বিজ্ঞানের ধর্ম (পড়ুন পশ্চিমা বিজ্ঞান)। এই বস্তু দিয়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা দিতে সে বাধ্য, এর বাইরে না যাবার প্রতিজ্ঞা তার।

  • ভূমিকম্প কেন হয়? টেকটোনিক প্লেট নড়ে বলে।
  • বৃষ্টি কেন হয়? মেঘ ঘনীভূত হয় বলে।
  • ঝড় কেন হয়? উচ্চচাপের জায়গা থেকে নিম্নচাপের দিকে বায়ু আসে বলে।

রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে বিজ্ঞানের অপব্যবহার বাদ দিলেও সততার সাথে কথা বললেও পশ্চিমা বিজ্ঞান কথা বলবে ‘বস্তুর ভাষায়’। [১]

দ্বিতীয় কথা হল, বিজ্ঞানের লক্ষ্য কী? বিজ্ঞান কী করে আসলে? রিয়ালিস্ট গ্রুপ বলে: বিজ্ঞান আমাদেরকে সত্যটাই জানায়, বা প্রায়-সত্যটা জানায়। এরা এক্সট্রিম পর্যায়ে গেলে বিজ্ঞানবাদী হয়ে যায়: বিজ্ঞানই সত্য, আর সব মিথ্যা। আর এন্টি-রিয়ালিস্ট গ্রুপ বলছে: না, টায়টায় সত্য জানানোটা বিজ্ঞানের লক্ষ্য না। বিজ্ঞানের লক্ষ্য হল: to save the phenomena… একটা ঘটনার একটা বস্তুগত ব্যাখ্যা দাঁড় করানো। কোনো বস্তুগত কারণ বলা, যার দ্বারা একটা ঘটনাকে স্যাটিসফাই করা যায়। ধরেন, ল্যাবে পরীক্ষা করে আপনি কিছু ডেটা পেলেন, এমন একটা ব্যাখ্যা (মডেল) আপনি দেবেন, যাতে ডেটাগুলোর পায়ে মাটি দেয়া যায়, কেন ডেটাগুলো এলো তার একটা কারণ দেখানো যায়। এরপর বার বার পরীক্ষা করে একই রেজাল্ট পাওয়া গেলে (reproduce the result) বলা যায়, আপনার দেখানো কারণটা ঠিক আছে, সেটা তখন ‘থিওরি’ হয়ে যায়। এবং অবশ্যই কারণটা হতে হবে বস্তুগত কারণ, প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতির ব্যাখ্যা। [২] যেমন ধরেন: মাধ্যাকর্ষণ থিওরি হল বস্তু নিচের দিকে পড়ার ব্যাখ্যা। যতক্ষণ এই থিওরি নানান ঘটনা ব্যাখ্যা করতে পারছে তা টিকে থাকে, যদি কোনোদিন কোনো ঘটনা এই থিওরি দিয়ে ব্যাখ্যা করা না যায়, সেদিন নতুন থিওরি দেয়া হবে, যা আগেরগুলো সহ নতুন ঘটনাটাও ব্যাখ্যা করবে। এভাবেই নিউটনীয় ফিজিক্সের স্থান নিয়েছে আইনস্টাইনীয় ফিজিক্স। আবার আইনস্টাইনীয় ফিজিক্সের স্থান নিয়েছে কোয়ান্টাম ফিজিক্স।

আমাদের মহলে বহুল প্রচলিত একটা ভুল কথা হল ‘বিবর্তন তো একটা থিওরি, কোনো ফ্যাক্ট না’। সায়েন্স ফ্যাক্ট বলে না, থিওরিই দেয়। থিওরি দেয়াই সায়েন্সের কাজ, ফ্যাক্ট খুঁজে দেয়া না। এটা বিজ্ঞানবাদীরা বলে যে, বিজ্ঞানই ফ্যাক্ট। আমরা এটা বলি না। রিয়ালিস্টরা বলছে, বিজ্ঞান সবসময় সত্যটাই জানায়, থিওরি বেশিদিন টিকে যাওয়াটাই সত্যতার প্রমাণ (!!!)। কথাটা আসলে মোটেই হইলো না… বিজ্ঞানবাদী দাবি হয়ে গেল। আধুনিক মেডিকেল সায়েন্সের আগে হাজার বছর মানুষ ‘৪ তরল থিওরি’ দিয়ে চিকিৎসা করেছে, রোগ ভালোও হয়েছে। অণুবীক্ষণযন্ত্র আবিষ্কারের পর এসেছে ‘জার্ম থিওরি’। তাহলে আগের হাজার বছর কাজ চলেছে বলেই কি তা সত্য হয়ে গেসে? মোটেই না। কাজ চলা মানেই সত্য না।

গুড সায়েন্স কাকে বলা হবে? বিজ্ঞান দার্শনিক কার্ল পপার বলছেন: থিওরিকে ফলসিফাই (মিথ্যা প্রমাণের) চেষ্টা করা হবে। ডিডাকটিভ মেথড ব্যবহার করে, বার বার ফলসিফাইয়ের চেষ্টা করা হবে, টিকে গেলে সেটা গুড সায়েন্স। অতএব, তাঁর গুড সায়েন্সের একটা বৈশিষ্ট্য হল ‘তাকে ভুল প্রমাণের পদ্ধতি’ থাকতে হবে। ভুল প্রমাণের চেষ্টাই করা যায় না, কোনো সেটআপই রেডি করা যায় না, এমন থিওরি ব্যাড সায়েন্স। যেমন জ্যোতিষশাস্ত্র। গ্রহ-নক্ষত্র যে মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে না, এটা বস্তুগতভাবে প্রমাণ করা যায় না। যা ফলসিফাই করার সেটআপ সাজানো যায় না, তা ব্যাড সায়েন্স বা সিউডোসায়েন্স। যেমন, তিনি উদাহরণ দেন: ফ্রয়েডের সাইকোএনালাইসিস, জ্যোতিষবিদ্যা, মার্কসের দ্বান্দ্বিক ইতিহাস। [৩]

সুতরাং, বিজ্ঞানকে যখন আপনি প্রশ্ন করবেন: মানুষ কীভাবে এলো? এটা একটা ঘটনা, এটা বিজ্ঞানের ফিল্ড এবং এর জবাব বিজ্ঞান দেবে, তবে অবশ্যই বস্তুবাদী জবাব, প্রকৃতিবাদী জবাব। সুতরাং মানুষ আসার কারণ হিসেবে শুরুতেই ‘স্রষ্টা’কে (ক্রিয়েশনিজম) বিজ্ঞান বাদ দেবে, এই বলে যে: স্রষ্টা আমার ফিল্ড না। স্রষ্টা ছাড়া আমাকে অন্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। ধর্মের উৎপত্তি কেন হয়েছে, এর ‘বৈজ্ঞানিক’ থিওরি’ পশ্চিমা-বিজ্ঞান দেবে স্রষ্টাকে শুরুতেই বাদ দিয়ে। কোনোভাবে স্রষ্টা বা স্রষ্টার প্রয়োজন পড়বে না, এমনভাবে ব্যাখ্যা দিতে হবে। স্রষ্টার প্রয়োজন এসে পড়ে এমন কথা দিয়ে ব্যাখ্যা দিলে সেটা আর ‘বৈজ্ঞানিক’ থাকবে না। ধর্মের উৎপত্তি স্রষ্টার দ্বারা না, মানুষের দ্বারা, একটা বিশেষ কালচারাল-পলিটিক্যাল প্রেক্ষাপটে একেকটা ধর্ম জন্ম নিয়েছে। ব্যস, এবার এটা বৈজ্ঞানিক হয়েছে, বস্তু দিয়ে বস্তুর ব্যাখ্যা হয়েছে। এ কারণেই উইলিয়াম স্মিডট ৪০০০ পৃষ্ঠা জুড়ে রেফারেন্স দিয়ে দিয়ে ও এন্ড্রু লাঙ যখন primitive monotheism (Urmonotheismus) এর কথা বললেন, মানে আগে এসেছে এক ঈশ্বরের ধারণা, পরে তা বিকৃত হয়ে বহু ঈশ্বর এসেছে। এটা কীভাবে হলো? একটাই উত্তর হতে পারে: স্রষ্টা নিজে পাঠিয়েছে নিজের পরিচয়। কিন্তু এইটা তো ‘সায়েন্টিফিক’ হলো না। স্রষ্টা এসে পড়লেই বৈজ্ঞানিকতা নষ্ট নয়। স্মিডট-কে ছাই দিয়ে ধরলেন ইতালীয় নৃতাত্ত্বিক Raffaele Pettazzoni। বললেন: স্মিডট বিজ্ঞান ও থিওলজির মাঝে গুলিয়ে ফেলেছেন, এভাবে বিজ্ঞান হয় না। গড a priori কিছু না, শুরুতেই গড-কে ধরে নেয়া চলবে না। ইতিহাসের ধারায় মানবসমাজের প্রয়োজনে গড-এর ধারণার শুরু। স্মিডটের থিওরি ১৯৫০-এর মাঝে একাডেমিয়ায় পরিত্যক্ত হয়। এই আলাপ থেকে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানত্ব, কী বললে আপনার কথা আর বিজ্ঞান থাকে না, সেটা স্পষ্ট হয়েছে আশা করি। জি, এটাই পশ্চিমা বিজ্ঞানের ধারণা। যার সাথে মুসলিমদের মধ্যযুগের জ্ঞান-বিজ্ঞানের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। কাঠগড়া- বইয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছি।

তেমনি ‘মানুষের উৎপত্তি’র প্রশ্নে বস্তুবাদী পশ্চিমা বিজ্ঞানের দাঁড় করানো বস্তুগত মডেল হল ‘বিবর্তন’, যা কিছু মাইক্রো-এভোল্যুশন জাতীয় প্রমাণের ভিত্তিতে থিওরির রূপ নিয়েছে। সুতরাং বিবর্তনবাদ বর্তমান পশ্চিমা প্রকৃতিবাদী বিজ্ঞানের সবেধন নীলমণি উত্তর, একমাত্র উত্তর। যতবার আপনি মানুষের উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানের মত জানতে চাবেন: প্রতিবার সে এটাই জবাব দেবে। যতদিন বিবর্তন ‘ভুল’ বলে প্রমাণিত না হচ্ছে। সেদিক থেকে দেখলে পশ্চিমা বিজ্ঞান এবং বিবর্তন সমার্থকই বলা যায়। বিবর্তন কি ভুল হওয়া সম্ভব?

এভোলুশন ভুল প্রুফও হবে না। কেননা, প্রথমত, ভুল প্রুফ করারও কায়দা নাই। ধরেন ২০০০ বছর রেখে দিলেন, বিবর্তন হলো না। তারা বলবে, ২ লাখ বছরে গিয়ে হবে। অর্থাৎ এটাকে মিথ্যা প্রমাণের উপায় বের করা যায় না। এজন্য ‘কার্ল পপারের ‘ফলসিফিকেশন’ মতে ‘বিবর্তনবাদ’ও একটা সিউডোসায়েন্স, কেননা একে ভুল প্রমাণ করার ‘কায়দা’ করা যায় না। যেমনটা যায় না সাইকোএনালাইসিস, এস্ট্রোলজিতে। আর দ্বিতীয়ত, বিবর্তন ছাড়া এই প্রশ্নের আর কোনো উত্তরই পশ্চিমা বিজ্ঞান দিতে পারে না। ভুল প্রমাণ হবে না কারণ এই প্রশ্নে একটাই একমাত্র ‘বস্তুগত উত্তর’। বিবর্তন ‘ভুল বলে সাব্যস্ত হয়’ এমন যেকোনো প্রমাণ ‘ক্রিয়েশনিজম’ কেই প্রমাণিত করবে। ক্রিয়েশনিজম পশ্চিমাবিজ্ঞানের আওতা-বহির্ভূত, কেননা তখন তাকে ক্রিয়েটর-নিয়ে জবাব দিতে হবে, যা সে দেবে না বলে পণ করেছে। স্রষ্টার কথা এলেই পশ্চিমা বিজ্ঞান সেলফ ডেস্ট্রয় হয়ে যায়। সুতরাং, ক্রিয়েশনিজমকে প্রমাণ করে এমন সবকিছুই সে বস্তুবাদী ব্যাখ্যাই করবে ক্রিয়েশনিজমকে এভয়েড করতে। সে ব্যাখ্যা যতই হাস্যকর হোক। আর বস্তুবাদী ব্যাখ্যা করতে না পারলে সেটাকে ‘অপবিজ্ঞান’ বলে দায় এড়াবে, যেমন মাইকেল বেহের ‘ডিজাইন থিওরি’ ক্ষেত্রে তারা করে থাকে।

Kansas State University-র ইমিউনোলজিস্ট Dr Scott Todd বলেছেন:

জরুরি হল, ক্লাসরুমে এটা ক্লিয়ার করে দেয়া যে, বিজ্ঞান (বিবর্তনবাদ সহ) সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে বাতিল করতে পারে না, কেননা তার তো এ সম্পর্কে ভাবনারই সুযোগ নেই। যদি সকল তথ্য-উপাত্ত কোনো এক বুদ্ধিমান শিল্পীর দিকে ইঙ্গিতও করে, তবু এই ব্যাখ্যাকে বিজ্ঞানের বাইরেই রাখা হবে, যেহেতু এই ব্যাখ্যা প্রকৃতিবাদী নয়।

[Todd, S.C., correspondence to Nature 401(6752):423, 30 Sept. 1999.]

Biologist ও জিনবিজ্ঞানী Richard Lewontin-এর সরল স্বীকারোক্তি:

“আমরা সর্বদা বিজ্ঞানের পক্ষ নিই, যদিও বিজ্ঞানের কিছু কিছু দাবি হাস্যকর; যদিও বিজ্ঞানীমহল মেনে নিয়েছেন কিছু ছেলেভুলানো গাল্পগল্প, যার প্রমাণ নেই। কারণ আমরা আগে থেকেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, প্রকৃতিবাদের কাছে। ব্যাপারটা এমন না যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের কোনোভাবে বাধ্য করে জাগতিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে। বরং আগে থেকেই (a priori adherence) বস্তুগত কারণ খোঁজার ওয়াদা আমাদেরকে ঠেলে দেয় এমন কিছু উপকরণ ও ধারণা তৈরির দিকে– যা শুধু বস্তুগত ব্যাখ্যাই উৎপাদন করবে। সে ব্যাখ্যা যতই কাণ্ডজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক হোক, আমজনতার কাছে যতই দুর্বোধ্য ঠেকুক। আর যেহেতু আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব মেনে নেব না, সুতরাং বস্তুবাদ-ই শেষকথা“।

[Richard C. Lewontin (1997), Billions and Billions of Demons (a review of Carl sagan’s The Demon-Haunted World), The New York Review]

এতক্ষণ যা যা বললাম, বিজ্ঞানকে সৎ ধরে বলেছি। বিজ্ঞানের এই প্রতিজ্ঞাকেই নাস্তিকরা ব্যবহার করে, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিরা ব্যবহার করে, সমাজকর্মীরা ব্যবহার করে। তখন তো হয় গোদের উপর বিষফোঁড়া। এজন্য ডারউইনিজম ও ১৯ শতকের পুঁজিবাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে কি বা তা নিয়েও গবেষণা হচ্ছে। তবে তা লাইমলাইট পাবে না। যদি কোনোদিন ন্যাচারালিজম থেকে বেরিয়ে ভাবতে পারে, সেদিন বিজ্ঞান যেটাই দেখবে, আল্লাহর সন্ধান পাবে। এজন্য মুসলিম বিজ্ঞানপড়ুয়াদের আমি আহ্বান করি, মধ্যযুগের ইসলামী সভ্যতার বিজ্ঞানকে সামনে নিয়ে আর বর্তমান মেথডোলজি নিয়ে বিজ্ঞান থেকে দর্শন বাদ দিয়ে একটা টুল হিসেবে নিয়ে নতুন করে শুরু করুন। ‘নিজেদের বিজ্ঞান’ দাঁড় করান। বস্তুগত কারণই আমরা খুঁজব, তবে সেটাকে গ্রহণ করব বিশ্বাসের সাথে, আল্লাহর কর্মপ্রক্রিয়া ‘সুন্নাতুল্লাহ’ হিসেবে। অবশ্য ভূ-রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া সেটা সম্ভবও না।

ধার্মিক হওয়া কি বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক?

#বিজ্ঞান একটা টুল। এবং বেশ ভালো টুল যা বস্তুজগতকে ব্যাখ্যা করে। বস্তুজগতকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে মেথড হিসেবে সে প্রকৃতিবাদ বেছে নিয়েছে (প্রকৃতি দিয়ে প্রকৃতির ব্যাখ্যা)। এবং অতিপ্রাকৃত বিষয়ে চুপ থাকার বা নিজের ব্যাখ্যায় অতিপ্রাকৃত কিছু টেনে আনবে না বলে প্রতিজ্ঞা করেছে। এই অবস্থানটিকে বলে Methodological Naturalism. এটা এজন্য জরুরি যেন আস্তিক-নাস্তিক সকলেই টুলটা (বিজ্ঞান) ব্যবহার করতে পারে (Draper, 2005)। অর্থাৎ আস্তিক হওয়া, #ধার্মিক হওয়া বিজ্ঞান করা বা বুঝার সাথে সাংঘর্ষিক না। প্রচণ্ড ধার্মিক হয়েও #বিজ্ঞানমনষ্ক হওয়া যায়। কিন্তু কিছু মানুষ দেখবেন বার বার ধর্ম ও বিজ্ঞানকে বিপরীত শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। যেমন #হৃদয়_মণ্ডল। টুপিওয়ালা নিকাবী ডাক্তার-ইনজিনিয়াররা সায়েন্স পড়েও বিজ্ঞানমনষ্ক হতে পারছে না, এই আক্ষেপে এরা জ্বলছে।কিছু মানুষ বিজ্ঞানের টুল-টাকে নিজেদের ‘ধর্ম’ বানিয়ে ফেলেছে। এই ধর্মের নাম ‘#বিজ্ঞানবাদ‘। তারা নিজের দার্শনিক অবস্থানে (philosophical naturalism) বিজ্ঞানকে টেনে সোল ডিলারশিপ দাবি করছে। এদের অবস্থান হল: প্রকৃতির বাইরে অতিপ্রাকৃত কিছুর অস্তিত্ব নেই, ব্যস (নাস্তিকতা)। কিন্তু বিজ্ঞান বলে: অতিপ্রাকৃত কিছু আছে নাকি নেই, তা আমার আলোচ্য না। ঘটনার পিছের প্রাকৃতিক কারণটা বের করাই আমার কাজ। বিজ্ঞান যা দাবি করে না, বিজ্ঞানবাদীরা সেটা দাবি করে। বিজ্ঞান খুব বুঝতে হলে, খুব করতে হলে নাস্তিক হবার প্রয়োজন নেই। নাস্তিকতা ধর্মের মতোই আরেকটা বিশ্বাস। বিজ্ঞানের (methodological naturalism) সাথে নাস্তিকতার (philosophical naturalism) সম্পর্ক নেই। এই দাবি যারা করছে তাদের অবস্থান অবজেকটিভ কিছু না। বরং আমরা #ধর্মান্ধ হয়ে থাকলে এরাও নাস্তিক ধর্মের ধর্মান্ধ।

আমাদের যেমন কিছু মূর্খ ওয়ায়েজ আছে। এরাও নাস্তিক ধর্মের মূর্খ ওয়ায়েজ বলতে পারেন। অনেকের নামের আগে ড. ইত্যাদি থাকে আরকি।


Leave a Reply