বেহেশতী জেওর-এ এই মাসআলা-টা আছে। যদিও বইটা নিয়ে অনেক কথা আছে, এটা আসলেই শাইখ আশরাফ আলি থানভী রহ. এর লেখা কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে বাঙালি সমাজে বহুল পঠিত ও চর্চিত এই বইটিতে আমি মাসয়ালাটি পেয়েছিলাম। যতদূর মনে পড়ছে এমন ছিল:
‘ওযু ছাড়া কুরআনের আরবি টেক্সট স্পর্শ করা যাবে না। যেসব কিতাবে কুরআনের আরবি টেক্সট আছে, সেই লেখার উপরে যেন হাত না পড়ে, এভাবে পড়তে হবে। এমনকি বিকৃত আসমানী কিতাব (বাইবেল)ও ওযু ছাড়া ধরা উচিত হবে না, কেননা সত্য-মিথ্যার মিক্সচারে এমন জায়গায় অপবিত্র স্পর্শ লাগতে পারে, যা আসলেই আল্লাহর কালাম’।
<image1>
কুরআনে আল্লাহ এমন বলেছেন:
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে আহবান করে (বাতিল মনগড়া ইলাহ), তাদেরকে তোমরা গালি দেবে না। কেননা, তারা বৈরীভাবে অজ্ঞানতাবশতঃ (সত্য ইলাহ) আল্লাহকেও গালি দেবে।
সুরা আনআম : আয়াত ১০৮
ডেনমার্কে কুরআন দিয়ে ফুটবল খেলা হয়েছে। কুরআন পোড়ানো, কুরআন ছেঁড়া এগুলো ঘটা করে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে করা হয় এসব দেশে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরিত্র হনন করে ইহুদি-খৃষ্টান-হিন্দু-নাস্তিক সবাই স্বতন্ত্র বই লিখেছে। শার্লি হেব্দো ব্যঙ্গ করে কার্টুনের পর কার্টুন ছেপে যাচ্ছে। শার্লি হেব্দোর লক্ষ লক্ষ ক্রেতা-পাঠক জানান দিচ্ছে তারা এটাকে সাপোর্ট করে, একই মাইণ্ড লালন করে।
ঈসা-মুসা আ. তো আমাদেরই নবী। এমনকি ইতিহাসের খল ফিগার সেন্ট পল, হিন্দুদের মিথ ফিগার রাম-কৃষ্ণ থেকে নিয়ে দেব-দেবীদের নিয়ে কোনো মুসলিম স্বতন্ত্র বই লিখে ফেলেছে, বা বেদ-গীতা পুড়িয়েছে (বাইবেল পোড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না)। ব্যঙ্গ করে কার্টুন এঁকেছে, এমন নজির কি ইতিহাসে আছে? সভ্যতা-ভব্যতা আসলে কী? এটা কি খায়, না মাথায় দ্যায়?
এবার নিচের অংশটুকু পড়ুন। নেয়া হয়েছে MICHAEL OTTERMAN রচিত American Torture: From the Cold War to Abu Ghraib and Beyond বই থেকে। এমন বহু ‘সভ্য’ ‘সভ্য’ কাহিনি পাবেন সাজিদ হাসান রচিত বই ‘প্রোপাগান্ডা’-তে, সন্দীপন প্রকাশনী থেকে আসবে বইটা।
গুয়ান্তানামো বে (Guantanamo বা GTMO) কারাগার থেকে বের হয়ে আসা আফগান নাগরিকরা 2003 খ্রিষ্টাব্দ থেকেই অভিযোগ করে এসেছে যে, তাদেরকে অপমানিত করতে আমেরিকান সৈন্যরা মহাপবিত্র কুরআনকে টয়লেটে ছুঁড়ে ফেলত। তাদের অনেকেই ছিল কৃষক, ছাত্র বা ট্যাক্সি ড্রাইভার—কোনো কারণ ছাড়াই তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৯ বছর বয়সী Ehsanullah বলেন, মার্কিন বাহিনী যখন তাকে কান্দাহারে জেরা করে তখন তারা তাকে প্রহার করত, টয়লেটে কুরআন ফেলে দিয়ে তারা তাকে মানসিক নির্যাতন করত। Ehsanullah-এর ভাষায়, সে সময়টা ছিল খুবই মর্মান্তিক, ‘আমরা অনেক কাঁদছিলাম আর চিৎকার করছিলাম, দয়া করে পবিত্র কুরআনের সঙ্গে এইরকম করো না।’ কিন্তু, ‘বধির’কে কি আর কথা শোনানো যায়? Merza Khan নামক আরেক মুসলিম বন্দিকে কান্দাহারে নির্যাতন করার সময় আমেরিকান সৈন্য কুরআন মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে কুরআনের ওপর বসে।
Kaufman & Witt, 2003
মার্কিন সেনাদের কাছে কুরআন অবমাননা ছিল খুবই ‘স্বাভাবিক’ বিষয়। Asif Iqbal-এর মতে, ‘তারা (কখনো কখনো) কুরআনকে লাথি মারত, সেটিকে টয়লেটে ছুড়ে মারত, আর সচরাচর (কুরআনকে) অবমাননা করত।’ পেন্টাগন শুরুতে কুরআন অবমাননার কথা অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, মার্কিন সেনারা ‘অন্তত’ পাঁচবার কুরআন অবমাননা ঘটেছে। এর মধ্যে একবার কুরআনে অশ্লীল দুটি শব্দ লেখা হয়; একজন সেনা কুরআনকে লাথি মারে, আরেকবার একজন গার্ডের মূত্র কুরআনে ‘অসাবধানতাবশত’ ছিটকে পড়ে। আসল বাস্তবতা হলো, তারা নিয়মিত কুরআনের পাতা ছিঁড়ে ছিঁড়ে টয়লেটে ফ্ল্যাশ করে দিত।
Otterman, 2007
আযাবের উপযুক্ত তো আমরাই। আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন। তাঁর আযাব থেকে মুসলিমদের হেফাজত করুন।