বাম = রাম


বাংলাদেশ পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের দেশ। লাহোর প্রস্তাবে ‘মুসলিমদের একাধিক দেশের’ কথা বলা হয়েছিল (যেমন: পাকিস্তান, বাংলা, হায়দারাবাদ, কাশ্মীর)। বৃটিশ-ব্রাহ্মণ কুচক্রে ২৩ বছর দেরিতে সেই দেশটা আমরা পেয়েছি। মাঝখানে রক্তক্ষয় হয়েছে, যেটা দরকার ছিল না, যদি লাহোর প্রস্তাবটাই বাস্তবায়ন হতো। রক্তক্ষয় গেল একটা লোকসান। আর দ্বিতীয় লোকসানটা হলো, লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এটা হতো পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের দেশ। আর ২৩ বছর বিলম্বে যুদ্ধের মাধ্যমে হওয়ায় এটা হয়েছে ভারতীয় স্বার্থের তাবেদার একটা ‘সেক্যুলার দেশ’, যার কেবলা ভারত।

পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের বাংলা হটিয়ে কলকাতায়ী বাংলা, মুসলিমদের সংস্কৃতি হটিয়ে কলকাতায়ী হিন্দু সংস্কৃতিকে স্ট্যান্ডার্ড বানানো হয়েছে। ৪৭ এর পর থেকে এই কাজটাই হয়ে এসেছে। এই এজেন্ডাটা বাস্তবায়ন করেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং বাম-ধারার সাংস্কৃতিক দালালেরা। এই বাম কারা? উপমহাদেশে প্রথম বামধারার হর্তাকর্তারা সবাই উচ্চবর্ণের হিন্দু ব্রাহ্মণ জমিদার, যারা বঙ্গভঙ্গের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ইলা মিত্রও জমিদারপত্নী। পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা চিরটাকাল প্রজা হয়েই থাকুক, এটাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। এখন এদের ছানাপোনাদেরও সেটাই লক্ষ্য, যাতে পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ভারতের গোলাম হয়ে থাকে। এজন্যই দেখবেন ঢাবি-তে ঘটা করে সরস্বতী পূজা হবে, কিন্তু কাওয়ালী হতে দেয়া হবে না। বলা হবে, আমরা ভার্সিটিতে মুক্তচিন্তা করি, ওদিকে ইসলামী চিন্তা ও সংগঠনগুলোকে কঠোর হস্তে দমন-পীড়ন করা হবে। বামদের মুখ থেকে ইসলাম-বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু শুনবেন না।

‘ভিসির জুলুম’ বলতে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে সেই কাজগুলো এই মেয়েরা বাসায় থাকলে করতে পারতো? ইন্টার পড়ার সময় অনেকেরই বয়স ১৮+ হয়ে গেসে। তখন পারতো রাত দশটা অব্দি ছেলেদের সাথে ঘুরতে? লাইব্ররিতে ছেলেদের সাথে পড়তে? রাত জেগে ছেলেদের সাথে আল্পনা/রোড পেইন্টিং করতে? সন্ধ্যার পর বাইরে ঘুরতে? বাবা বকতো না? কৈফিয়ত দিতে হতো না? ভার্সিটিতে কী করে বেড়াচ্ছে বাপমা জানে? যদি বলি ভিসি ঠিক বাবার কাজটাই করেছে? আমার ধারণা সিলেটের বাবারা এখনও গায়রত হারাননি, সন্তানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাননি। নিয়ন্ত্রণ করুন নিজের ছেলেমেয়েদের। আপনার সন্তান ভার্সিটিতে তপস্যা করছে ভাববেন না। সে যুগ আর নেই।

আমি ভিসি হলে ভর্তির সময় সব বাবার থেকে একটা ছাড়পত্র নিতাম। বাবার অনুমতি। আমার মেয়ে রাত এতোটা অব্দি বাইরে থাকতে পারবে। আমার ছেলে রাত এতোটা পর্যন্ত বাইরে থাকবে। এতোটা পর্যন্ত রীডিংরুমে পড়বে। কেন ভাই আমি কথা শুনবো পরের ছেলের জন্য? আমি টেম্পোরারি অভিভাবক। যে বাবা যেমন করে দেখভাল করতে বলবে, তেমন করে করবো।

<image1>

এই সব মুসলিম সংস্কার ও বাঙালি মুসলিম ফ্যামিলি কালচার ও নিয়মকানুন নারীবাদী বাম-দের চোখে জুলুম। তাদের চোখে বিয়ে-ই একটা জুলুম, বাবার অভিভাবকত্বও জুলুম, সমাজ-সংস্কারও জুলুম। সুতরাং ভিসি জালেম। লীগের ভিসি ইসলামের কল্যাণে না হোক, নিজের মুসলিম বাঙালি মূল্যবোধ থেকে, সিলেটি শালীনতা-ভদ্রতা ও অভিভাবকসুলভ নিরাপত্তা ইস্যু থেকে কাজগুলো করে থাকলে আমি ভিসিকে সমর্থন করি। ভার্সিটিগুলোয় নিয়ন্ত্রণ হওয়া দরকার। পড়াশোনাই এখানে মুখ্য। বাকিসব কো-কারিকুলার। মাদক, রাজনীতি, অহেতুক ঘোরাফেরা, সময় নষ্ট সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হওয়া দরকার। এইজ অব এম্পায়ার্স গেমেও খেলতাম যে, নতুন নতুন গবেষণা করে সভ্যতা আপগ্রেড করতে ভার্সিটি তৈরি করতে হতো। সেখানে বাংলাদেশের এতো এতো ভার্সিটি থাকার যৌক্তিকতা কি? বেলেল্লাপনা, যৌবনের অপচয় আর উপভোগ ছাড়া আর কি?

পূর্ববঙ্গের অধিবাসীরা যেহেতু মুসলিম, সুতরাং তাদের কালচারে অনিবার্যভাবে ইসলাম হাজির থাকবেই। শালীনতা, হায়া, পর্দা এই সমাজের হাজার বছরের ঐতিহ্য। মেয়েরা রাতে বাইরে থাকবে না, রাতবিরেতে ছেলেমেয়ে একসাথে ঘুরবে না, পর্দাপুশিদার সাথে আমাদের দাদীনানীরা চলেছে… এসব পূর্ববঙ্গীয় মুসলিম কালচার। তালব্যনী কালচার নাম দিয়ে কারা আমাদের মূল্যবোধগুলোকে মার্জিনালাইয করতে চায়? জমিদারের পুতেরা। এগুলো তালব্যনী কালচার না, আমাদের কালচার। মিল থাকতে পারে, যেহেতু পূর্ববঙ্গের মুসলিমরা আফগানী মুসলিমদের সাথে কমন মূল্যবোধ শেয়ার করে। ইসলামবিদ্বেষ থেকে তারা আমাদের কালচারের ইসলামী ইলিমেন্টগুলোকে আদারিং করতে চায়।

এটা পূর্ববঙ্গের ‘মুসলিম’দের দেশ। বৃটিশদের সাথে বহু লড়ে, বহু জুলুম সয়ে, উচ্চবর্ণহিন্দু বাঙালিদের কাছে বৈষম্য সয়ে, অবাঙালি মুসলিম নেতাদের উন্নাসিকতা সয়ে এ দেশ অর্জিত। আবারও তাদের পরিচয়, তাদের সংস্কৃতিকে আদারিং করে ভিন্ন সংস্কৃতি (open culture) চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তার ফল ভালো হবার কথা না। জমিদার-মানসিকতার বাম-দের সঙ্গ দেবার চেয়ে বড় ভুল আর হবে না পূ্র্ববঙ্গের মুসলিম প্রজাদের।

প্রাসঙ্গিক পাঠ:

  • কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবী (এম আর আখতার মুকুল)
  • বঙ্গভঙ্গ থেকে বাংলাদেশ (আবদুল মান্নান)
  • ইতিহাসের ছিন্নপত্র (কায়কাউস)
  • ভুলে যাওয়া ইতিহাস (ব্যারিস্টার এস. সিদ্দিকী)

Leave a Reply