পয়েন্ট ১
যুদ্ধে ইচ্ছা করে বেসামরিক জনগণকে টার্গেট করা অন্যায় ও বর্বরোচিত। তবে…যুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত বেসামরিক জনগণ মারা যাওয়া দুঃখজনক। ব্যস এই একবাক্যে পশ্চিমারা দায়মুক্তি নিয়ে নিয়েছে। সুতরাং ইউক্রেনে বেসামরিক মানুষ মারা যাচ্ছে, এটা বিশেষ কোনো ইস্যু না। যুদ্ধে এটা যাবেই, এবং তার দায়মুক্তির সুন্দর এই বাক্যটা রয়েছেই।
পয়েন্ট ২
জানেন মিয়া, সেখানে মুসলিমরাও রয়েছে। তাদের কষ্টে আপনি কষ্টিত না হয়ে মজা লিচ্চেন? বছরের পর বছর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মুসলমরা কষ্টে আছে। পাখির মত গুলি করে, প্লেন থেকে বেমা ফেলে তাদের হত্যা করা হয়েছে, শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, শরণার্থী হয়ে ‘ছাগলের চেয়ে নিকৃষ্ট’ (হাদিসের ভাষায়) জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। তখন আপনার যে এক্সপ্রেশন ছিল, এখন আমারও একই এক্সপ্রেশন। তাদের নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করলে আপনার কথা ছিল: হোয়াটএ্যাবাউটিজম করবেন না। আজকে আমিও বলবো: প্লিজ হোয়াটএবাউটিজম করবেন না। আপনার এই সিলেকটিভ মুসলিমপ্রীতি এখন প্রযোজ্য না। চলমান সংঘাতে সবচেয়ে মজার কিছু ব্যাপার ঘটছে, এবং আমি কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়া এতে খুশি। এবং চাই যুদ্ধ আরও ২০ বছর চলুক। চাই ন্যাটো আসুক। আমার খুশির কারণ:
১.
অলরেডি ইউক্রেনীয় পক্ষ থেকে বলা হয়েছে: আমরা কেবল ইউক্রেনের জন্য লড়ছিনা, আমরা এই ‘ওয়ার্ল্ড অর্ডারের’ জন্য লড়ছি। ‘এনলাইটেনমেন্টীয় শরীয়া’ বাস্তবায়িত ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ধ্বংস হোক।
২.
সেই ১৬৪৮ থেকে চলে আসা ওয়েস্টফেলিয়ান সার্বভৌমত্বের ধারণার উপর আঘাত এসেছে। রাষ্ট্র নিজ সীমা যা ইচ্ছা তাই করবে, অন্য রাষ্ট্র নাক গলাবে না। এই কাকতাড়ুয়াটা ভেঙে পড়ছে। এই কাকতাড়ুয়া দিয়ে মুসলিম আরেক দেশের মুসলিমদের সাহায্যে যাবার পথে বাধা তৈরি হয়েছে। কুরআনের এই প্রশ্ন: তোমাদের কী হল যে তোমরা অসহায় নির্যাতিত মুসলমানদের সাহায্য করছো না?… এই প্রশ্নের কোনো জবাব উম্মাহর কাছে নেই। রক্ষণাত্মক আমলের ধাপেধাপে পর্যায়ক্রমে ফরজে আইন হবার ফরজ উম্মাহর তরক হচ্ছে। সুতরাং এই ওয়েস্টফেলিয়ান কাগতাড়ুয়া ভেঙে চুরমার হওয়া জরুরি, যেটা ওরা নিজেরা অহরহ ভাঙে: যেমন ইরাকে সরাসরি এবং অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে ক্যু, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি দ্বারা।
<image1>
৩.
ইউরোপের আম পাবলিকের স্বরূপও বেরিয়ে আসছে। উগ্র ডানপন্থা, বর্ণবাদ, ওরিয়েন্টালিজম যে তাদের মনুষ্যত্বের শেষ ফোঁটাও শেষ করে ফেলেছে, সেটা প্রকাশ পেয়ে গেছে। মুসলিম বিশ্বের উপর নিজ রাষ্ট্রের করা জুলুমকে তারা বৈধ মনে করে, এটা জানাজানি হয়ে গেছে। ওরিয়েন্ট বলতে হেগেল মুসলিম বিশ্বকেই সম্বোধন করেছেন। এভাবে বলেছেন: চীনা সমাজ, ভারতীয় সমাজ ও ওরিয়েন্টাল সমাজ। প্রাচ্য থেকে চীন-ভারত বাদ গেলে বাকি থাকে কে? ওরিয়েন্ট নীচু, অসভ্য। সুতরাং ওদের সভ্যতা শেখানো পশ্চিমের দায়িত্ব। এই যুক্তি দিয়ে উপনিবেশের বৈধতা অর্জিত হয়েছিল। একই যুক্তি দিয়ে আফগান, ইরাক ও মুসলিমদের উপর আগ্রাসনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে।এবং পশ্চিমের জনগণ মনেপ্রাণে সেটা গ্রহণ করেছে। আজ তাদের প্রশ্ন: আমরা আফগান-ইরাকী যে আমাদের উপর হামলা করা হবে? আমরা সভ্য জাতি। এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না যে সভ্য ইউরোপীয় জাতি আক্রান্ত হবে। তার মানে এটা মেনে নেয়া যায় যে, মুসলিমরা আক্রান্ত হবে, ওরা অসভ্য। এ ধরনের জাতির প্রতি কোনো সিমপ্যাথি থাকা কোনো ‘মানুষের’ উচিত না। ওরা অহংকারে অমানুষ হয়ে গেছে।
<image2….>
৪.
ইসলামী ফিকহেও বলা আছে: যুদ্ধ সত্তাগতভাবে ফ্যাসাদ। ইসলামও সোজা আঙুলে ঘি উঠলে যুদ্ধ চায় না। মানুষ কষ্ট পাক এটা আল্লাহ চান না বলেই ইসলামকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু আপনার সিলেক্টিভ মানবতায় আমি ছ্যাপ দিই। মিডিয়ার নষ্টামি তো নতুন করে বুঝার কিছু নেই। কিন্তু এই সংঘাতে মিডিয়ার শেষ ল্যাঙ্গোটটাও খুলে গেছে। জাস্ট মানুষ হলেই বুঝতে পারার কথা।
বেশি শক্তিশালী শত্রু আগে ধ্বংস হওয়া জরুরি। রাশিয়া জুলুম করেছে একসময়। কিন্তু এই ওয়ার্ল্ড অর্ডারের মোকাবেলায় রাশিয়া দুর্বলই। সে বোঝাপড়া পরে হবে। আগে মুসলিম উম্মাহর বুকে চেপে বসা এই পাথর আগে সরা দরকার। এরপর চোর পেটানো যাবে। একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বের চেয়ে বহু মেরু বার্গেইনের জন্য সুবিধাজনক। যদ্দিন নিজেই মেরু না হওয়া যায় আরকি।