বইয়ের মাধ্যমে দাওয়াহ


অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বাংলা ভাষায় ইসলামী বইপত্র এখন অনেক বেশি ও অনেক মানসম্পন্ন। সঠিকভাবে কৌশলী হয়ে ম্যাটেরিয়ালগুলো ব্যবহার করতে পারলে ইফেক্টিভ দাওয়াহ করা সম্ভব। মাদউ’র (যাকে দাওয়াহ করছি) অবস্থা, মানসিকতা, প্রয়োজন এগুলো মাথায় রেখে বই নির্বাচন জরুরি।

হিদায়াতের একমাত্র মালিক আল্লাহ। আমরা একটু কৌশল করে মাধ্যম হবার চেষ্টা করতে পারি। পরানটা ভরে গেল পোস্টটা পড়ে। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আগে আমাকে হিদায়াত দিন।

আপনার গল্পটাও শেয়ার করুন। বই দিয়ে কীভাবে মেহনত করা যেতে পারে। আপনি কী সিরিয়ালে কোন কোন বই ব্যবহার করে কেমন রেজাল্ট পেয়েছেন, শেয়ার করুন সবার সাথে। অন্য কারও কাজে লেগে যেতে পারে আপনার কৌশলটা। নিচের গল্পটা কাছের ছোটোভাই সৌরভ হোসেন মিঠুনের।


করোনার মধ্যে লকডাউনে যখন বাড়িতে ছিলাম তখন বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার পর নতুন কলেজে ওঠা কিছু ছেলেমেয়েকে ব্যাচ করে পড়িয়েছিলাম কিছুদিন। এক ব্যাচে তিনটা মেয়ে ছিলো। তিনজনের মধ্যে একজন শুধু হিজাব করতো। তিনজনই ভালো স্টুডেন্ট। তো পড়াতে পড়াতে এক সময় জানতে পারলাম ওদের মোটামুটি গল্পের বই পড়ার অভ্যাস আছে ভালোই। আমার কাছে তখন বেশ কিছু ইসলামিক বই ছিলো বর্তমান জনপ্রিয় লেখকদের। ভাবলাম বইগুলো দিয়ে দেখি ওদেরকে।

  • প্রথমে ‘ফেরা’ বইটা দিলাম, দুই খ্রিস্টান বোনের মুসলমান হওয়ার গল্প, কিছুটা ট্রাজেডিও আছে। একে একে পড়ল তিনজনই। তারপর জানালো খুবই ভালো লেগেছে ওদের।
  • এরপর দিলাম ‘প্রত্যাবর্তন’ আর বললাম, তোমরা যেমন ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করছো ঠিক এরকম অনেক ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, ভার্সিটি পড়ুয়া ভাই/বোনের বদলে যাওয়ার গল্প আছে এখানে। বুয়েট-মেডিকেল-পাবলিক ভার্সিটিতে পড়া এই বয়সী ছেলেমেয়েদের কাছে স্বপ্নের মত। সেই স্বপ্ন ছোঁয়া মানুষদের দীনে ফেরার কাহিনী ওদের অবাক করে তোলে। স্পেশালি ওদের নিশাত তাম্মিম আপুর গল্পটা বললাম যে, দেখো তাম্মিম আপু মেডিকেলের কতো কঠিন পড়া পড়েও পাশাপাশি একাডেমিক ভাবেও দীনচর্চা করেছেন অনলাইনে, তোমরাও চাইলে পারবা ইনশাআল্লাহ। পড়ে ওরা সত্যি ধাক্কার মত খেলো আর বললো, তাইতো ভাইয়া এনারা এতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে আবার এতো দীনদারও বাহ! ওদের তাম্মিম আপুর প্রোফাইল আর রৌদ্রময়ী পেজের লিংক দিলাম।
  • তারপর দিলাম রৌদ্রময়ীদের লেখা ‘মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি’। এটা এমন বই যেকোন মেয়েরই ভালো লাগতে বাধ্য ইনশাআল্লাহ, শুধু প্রচ্ছদ দেখেই নয়ন জুড়ায়। এটা পড়ে ওরা সবচেয়ে বেশি অবাক হইছে। ওরা মনে করত যে, দীনদার মেয়েরা মনে হয় বেশি স্মার্ট হয়না। যেমনটা সেক্যুলারমনারা ভাবে। এই বইটা পড়ে ওরা বুঝলো যে, দীনদারি আর স্মার্টনেস বিপরীত কিছু না। ইসলামকে কত স্মার্টলি চিন্তা করা যায়, স্মার্টলি লেখা যায়। যে হিজাব পরত, সেই মেয়েটা এটার এক কপি কিনে ফেলল নিজের কাছে রাখার জন্য। তাম্মিম আপু হয়ে গেলো ওদের আইডল, রৌদ্রময়ীদের লেখা নিয়মিত পড়া শুরু করলো।
  • এরপর শক্তি ভাইয়ের ‘মানসাংক’ বইটা পড়ে তো ওদের মাথা ঘুরে গেলো বলা যায়। যারা পড়েছেন তারা জানেন এই বইটা কি ভয়ংকর! যে হিজাব করত সে বোরকা পড়া শুরু করে দিলো নিয়মিত আর বাকি দুইজনের একজন হিজাব করা শুরু করলো।
  • তারপর দিলাম ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০’। এটা পড়ার পর হিজাব শুরু করা মেয়েটা তাঁর আব্বার সাথে কুষ্টিয়া যেয়ে ‘ইসলামিক জোন’ থেকে শক্তি ভাইয়ের প্রায় সব বই আর খিমার কিনে এনে মা-মেয়ে পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা শুরু করলো আলহামদুলিল্লাহ। ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০’ এর গল্পের তিথি যেনো বাস্তব হয়ে উঠলো। তিথির মধ্যে হয়ত ও খুঁজে পেয়েছিলো নিজেকে। আর রৌদ্রময়ী পেজের সব লেখা নাকি সে পড়ে শেষ করছিলো। ওর মায়ের পড়তে কষ্ট হয়, চোখ ব্যাথা করে নাকি, তাই মেয়ে পুরা ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০’ পড়ে শুনিয়েছে মাকে। ভার্সিটি পড়ুয়া আন্টি নাকি ভীষণ খুশি হয়েছেন বইটা শুনে, শক্তি ভাইয়ের জন্য অনেক দোয়া করেছেন, কারণ সন্তানদের কথা ভেনে উনি নাকি চাকরী করেননি, তাই আশ্বস্ত হয়েছেন অনেক। আমার মনে হয় ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ২.০’ এমন একটা বই, কোন জেনারেল পড়ুয়া মেয়ে যদি নিজের কাছে অনেস্ট থেকে বইটা মন দিয়ে পড়ে, তাহলে তার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে এবং বদলে যেতে বাধ্য ইনশাআল্লাহ।

আমি জানি এভাবে দাওয়াহ দেওয়াটা সুন্নত সম্মত না, যেহেতু আমি গায়রে মাহরাম। এজন্য আমি সওয়াবের আশা করি না আর আল্লাহর কাছে মাফও চাই। কিন্তু এই গল্পটা শেয়ার করার উদ্দেশ্য এটাই যে, এখন ইসলামি বইয়ের স্বর্নযুগ চলছে। অসাধারণ সব বই আসছে একের পর এক। তাই নিজে পড়ে এগুলো ফেলে রাখলে চলবে না। আমাদের কাছের, পরিচিত মানুষদের মধ্যে তাদের ‘সাইকোলজি বুঝে’ আমাদের পৌছে দেওয়া উচিত যতোটা সম্ভব। কি যে কখন কার হেদায়াতের উসিলা হয়ে যায় বলা তো যায় না, বা আপনার দেওয়া বইটা হতে পারে কারো টাইট্রেশনের একটি ফোঁটা। অনেকে এখনো জানেই না যে, কতো চমৎকার সব ইসলামিক বই আছে আমাদের। ঐ মেয়েগুলোও জানতোনা।

এখানে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে- কাউকে কোন বই দেওয়ার আগে তার সাইকোলজি, সিচুয়েশন বুঝে দিতে হবে। নইলে পড়ার বা কাজ হওয়ার সম্ভাবনা কম। আমি যে ‘সিরিয়ালে’ দিয়েছি এটা আমি প্ল্যান করেই দিয়েছিলাম: ‘সহজ থেকে আস্তে আস্তে একটু কঠিনের দিকে’। ‘ফেরা’ বইটা আগে দিয়েছিলাম কারণ ফেরার গল্পটা সহজ-সরল কিন্তু মনে খুব হিট করে, মনটা নরম করে দেয়; যেটা ওদের বাকি বইগুলো পড়তে আগ্রহী করেছিলো হয়ত। আমার দেওয়া সিরিয়ালের মিলটা নিশ্চয় ধরতে পেরেছেন এখন। তাই এই সিরিয়ালটা ট্রাই করে দেখতে পারেন।

বেশি বেশি বই কেনার, পড়ার আর শেয়ার করার অভ্যাস করুন, দাওয়াহ করেন যতোটা সম্ভব সুন্নাহ পন্থায়। ঈদের বাজার, বিয়ে, যে কোন দাওয়াতের গিফট হোক বই। ইসলামি বই এখন ৪০/৫০ টাকার মিনি বই থেকে শুরু করে হাজার হাজার টাকার সিরিজও আছে। চমৎকার এই বইগুলো গ্রাম-গঞ্জের বাজার, বাস-ট্রেনের হকার পর্যায়ে পৌছে দিতে পারলে আরো ভালো হতো। কারো পক্ষে সম্ভব হলে নিজ উদ্যোগে শুরু করেন। পরিবর্তন আসবেই ইনশাআল্লাহ।

,

Leave a Reply